ভাবুন তো, আপনার ফোনের স্ক্রিনটা যদি নরম, জেলির মতো হয়! চাপ দিলে যদি সেটা বেঁকে যায়! এ আর শুধুই কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয়। বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমনই এক অভিনব টাচস্ক্রিন আবিষ্কার করেছেন, যার নাম “ডিফর্মআইও“।
ডিফর্মআইও আসলে এক ধরনের সিলিকন-ভিত্তিক টাচস্ক্রিন। এর মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট বাতাসের প্রকোষ্ঠ, যাকে বলে নিউম্যাটিক্স (pneumatics), আর সেন্সর। আপনি যখন আঙুল দিয়ে স্ক্রিনে চাপ দেন, তখন নিউম্যাটিক্সের সাহায্যে ওই জায়গাটা একটু বেঁকে যায়, ঠিক জেলির মতো। আর সেন্সরগুলো সেই চাপের পরিমাণ বুঝতে পারে। এর ফলে স্ক্রিনটা বুঝতে পারে আপনি কতটা জোরে চাপ দিচ্ছেন, আর সেই অনুযায়ী নিজেকে সেভাবেই খাপ খাইয়ে নেয়।
এই প্রযুক্তিটা একেবারেই নতুন। আগেও চাপ-সংবেদনশীল স্ক্রিন বানানোর চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো মূলত স্ক্রিনের ঠিক নিচে ছোট ছোট পিন বা উঁচু অংশ রেখেই বানানো হতো। ফলে স্ক্রিনের যে অংশে চাপ দেওয়া হতো, আর যে অংশে চাপ দেওয়া হতো না, সেই দুই অংশের মাঝে একটা ধার বা ফাঁক থেকে যেত। টাচ করার সময় এই ধার অনুভূত হতো। কিন্তু ডিফর্মআইও-তে যেহেতু বাতাস ভরা প্রকোষ্ঠ আছে, তাই চাপ দিলে স্ক্রিনটা মসৃণভাবে বেঁকে যায়।
এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটা একইসাথে স্ক্রিনের বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া চাপ বুঝতে পারে। ফলে ফোন ব্যবহারের সময় অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। ধরুন, আপনি একটা ডিজিটাল ম্যাপ দেখছেন। আঙুল দিয়ে কোনো একটা শহরে চাপ দিলেই স্ক্রিনটা একটু বেঁকে যাবে, আর আপনি সাথে সাথে সেই শহর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন। আবার গেম খেলার সময় গেমের জিনিসগুলোর শক্ত বা নরম ভাবও এই স্ক্রিনের মাধ্যমে অনুভব করা যাবে। এমনকি গাড়ি চালানোর সময় এই স্ক্রিন ব্যবহার করে রাস্তা থেকে চোখ না সরিয়েই বিভিন্ন কাজ করা যাবে।
গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এই স্ক্রিন দিয়ে নানা রকম অনুভূতি নকল করা যায়। যেমন, স্ক্রিনে যদি একটা গদির ছবি দেখানো হয়, তাহলে একটা স্লাইডার দিয়ে ওই গদিটাকে নরম বা শক্ত করা যাবে। স্লাইডার নরম দিকে নিলে স্ক্রিনটা আঙুলের চাপে সহজেই বেঁকে যাবে, যেন নরম গদির মতো অনুভূতি। আবার স্লাইডার শক্ত দিকে নিলে স্ক্রিনটা বর্তমান ফোনের স্ক্রিনের মতো শক্ত লাগবে।
এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা অনেক, তবে এখনও এটা গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বাজারে আসতে আসতে হয়তো আরও অনেক সময় লাগবে। তারপরও, স্মার্টফোনের জগতে এই প্রযুক্তি একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। কে জানে, ভবিষ্যতে আমাদের সবার হাতেই হয়তো থাকবে এমন নরম, চাপ দিলে বেঁকে যাওয়া স্ক্রিনের ফোন!