হিজামা থেরাপি যাকে কাপিং থেরাপিও বলা হয় । এটি বেশ প্রাচীন আর বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি। এতে কাপ ব্যবহার করে ত্বকে একধরনের চাপ তৈরি করা হয়, যার ফলে শরীরের ভেতরের রক্ত সঞ্চালনে উন্নতি হয়। এই পদ্ধতিটা আসলে কয়েক হাজার বছর ধরে নানা সংস্কৃতিতে চলে আসছে আর আজ ব্যথা যন্ত্রণা এবং ত্বক ও চুলের সমস্যায় আশাপ্রদ ফলাফলের জন্য এটার জনপ্রিয়তা আবার নতুন করে বাড়ছে ।
খ্রিস্টের জন্মের ১৫০০ বছর আগেই মিশরীয় সভ্যতাতে এই কাপিং থেরাপির চল ছিল। এছাড়াও চীনাদের প্রাচীন চিকিৎসা বিজ্ঞানের বইপত্র ঘাঁটলেও এই থেরাপির উল্লেখ পাওয়া যায়। এমনকি আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক হিসেবে যাঁকে ধরা হয়, সেই গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিসও এই কাপিং থেরাপির গুরুত্বের কথা বলে গিয়েছেন। ইসলাম ধর্মেও এই হিজামার গুরুত্ব হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
কীভাবে করা হয় হিজামা
তবে এই হিজামা আসলে কীভাবে কাজ করে? এখানে আসলে ত্বকে কাপ লাগিয়ে একধরনের চাপ তৈরি করা হয়, যার ফলে শরীরের ভেতরের রক্ত সঞ্চালনে অনেক পরিবর্তন আসে। এটা মূলত দুইভাবে করা হয়। একটা হলো, কাপ শুধু ত্বকে লাগিয়েই চাপ তৈরি করা (ড্রাই কাপিং), আর আরেকটা হলো, ত্বকে আগে একটু কেটে তারপর কাপ লাগিয়ে চাপ তৈরি করা, যাতে অল্প একটু রক্তও বেরিয়ে আসে (ওয়েট কাপিং)। এই চাপ তৈরি করতে আবার আগুন (ফায়ার কাপিং) অথবা অন্য কোনো যন্ত্র (সাকশন কাপিং) ব্যবহার করা হয়। মূল উদ্দেশ্য থাকে শরীরে রক্ত চলাচল ঠিক করা, শরীরের যেসব জায়গায় ব্যথা বা যন্ত্রণা আছে সেগুলো কমানো, আর শরীরকে সুস্থ করে তোলা।
হিজামা বা কাপিং থেরাপির উপকারিতা
এই থেরাপি শরীরের যেকোনো জায়গার ব্যথা কমাতে পারে, তা সেটা পিঠের ব্যথা হোক, মাথার যন্ত্রণা হোক বা পেশিতে টান ধরা হোক। কারণ, কাপের চাপে যেখানে ব্যথা সেখানে রক্ত চলাচল বাড়ে, ফলে ব্যথা কমে আর শরীরও ঠিক হয়ে যায়। এছাড়াও হিজামা শরীরের সব ক্ষতিকারক জিনিস বের করে দিতে পারে, যার ফলে স্বাস্থ্যের অনেক উন্নতি হয়। আবার শরীরে রক্ত চলাচল বাড়ে বলে নাকি অক্সিজেন আর পুষ্টিও ঠিকমতো সব জায়গায় পৌঁছায়। এছাড়াও হিজামা শরীরের প্রদাহ কমাতে পারে, যা বাতের মতো রোগের জন্য বেশ উপকারী। অনেকের তো এমনও বিশ্বাস, হিজামা নাকি মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে।
যদিও মুসলিম দেশগুলোতে এই হিজামা থেরাপির চল বেশি, তবে আজকাল পশ্চিমা বিশ্ব সহ সারা পৃথিবীতেই এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তবে যে বিষয়টা সবচেয়ে জরুরি তা হলো, হিজামা করাতে হলে তা করতে হবে যোগ্য প্রফেশনাল দিয়ে।