বেগুন আমাদের সবার কাছে অত্যন্ত পরিচিত একটি সবজি। সহজলভ্য হওয়ার কারণে এর গুণাগুণ অনেক সময়ই আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। অথচ এই বেগুন কোলেস্টেরল থেকে ব্লাড সুগার এমনকি ক্যান্সারের প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এছাড়াও বেগুনের রয়েছে আরও সব আশ্চর্য গুণাগুণ ।
বেগুনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এটি ফাইবার, ভিটামিন বি১ (থায়ামিন), ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন) এবং পটাশিয়ামের একটি চমৎকার উৎস। এছাড়াও এতে নাসুনিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডের মতো ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে, যা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ফ্রি র্যাডিকেল দ্বারা সৃষ্ট কোষের ক্ষতি থেকে আমাদের রক্ষা করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বেগুনের উপকারিতা
- হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: বেগুনে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। এছাড়া বেগুনে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করে: বেগুনে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম থাকায় ওজন কমাতে চাইলে খাদ্য তালিকায় বেগুন অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: বেগুনের ফাইবার রক্তে শর্করার শোষণ ধীর করে, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী।
- মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: বেগুনের খোসায় নাসুনিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা মস্তিষ্কের কোষের সুরক্ষা দেয় এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে পারে।
- পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: বেগুনে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এবং পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে: বেগুনে থাকা ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডে অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান রয়েছে। এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে এবং কার্সিনোজেন থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রাম) | উপকারিতা |
---|---|---|
ডায়েটারি ফাইবার | ৩ গ্রাম | হৃদরোগ প্রতিরোধ করে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, হজম সহায়ক |
ভিটামিন বি১ (থায়ামিন) | ০.০৪ মিলিগ্রাম | স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে, শক্তি উৎপাদনে সহায়ক |
ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন) | ০.০৮ মিলিগ্রাম | মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক, ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা বাড়ায় |
পটাসিয়াম | ২২৯ মিলিগ্রাম | রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় |
নাসুনিন | নির্দিষ্ট তথ্য নেই | মস্তিষ্কের কোষের সুরক্ষা দেয়, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণসম্পন্ন |
ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড | নির্দিষ্ট তথ্য নেই | অ্যান্টি-ক্যান্সার প্রভাব, ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি প্রতিরোধ করে |
ভিটামিন সি | ২.২ মিলিগ্রাম | ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, ত্বকের সুরক্ষা দেয় |
ফোলেট (ভিটামিন বি৯) | ২২ মাইক্রোগ্রাম | কোষের বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়ক, গর্ভাবস্থায় জরুরি |
ম্যাঙ্গানিজ | ০.২৫ মিলিগ্রাম | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইমের কার্যকারিতা বাড়ায়, হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে |
ম্যাগনেসিয়াম | ১৪ মিলিগ্রাম | পেশী ও স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত করে, হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে |
ভিটামিন কে | ৩.৫ মাইক্রোগ্রাম | রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া উন্নত করে, হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে |
ক্যালসিয়াম | ৯ মিলিগ্রাম | হাড় ও দাঁতের গঠন ও মজবুতি বজায় রাখে |
আয়রন | ০.২৪ মিলিগ্রাম | রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখে, রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে |
ফসফরাস | ২৪ মিলিগ্রাম | হাড় ও দাঁতের গঠন উন্নত করে, কোষের কার্যকারিতা বজায় রাখে |
ভিটামিন এ | ২৩ আইইউ | চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে, ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে |
জিঙ্ক | ০.১৬ মিলিগ্রাম | ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে, কোষের বৃদ্ধিতে সহায়ক |
বেগুনের সব থেকে বড় বিপদ
বেগুনের উপকারিতা অনস্বীকার্য হলেও, এর চাষ পদ্ধতি বেশ আশঙ্কাজনক যেটা ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ । আমাদের দেশ সহ বিভিন্ন অঞ্চলে বেগুন চাষে প্রায়শই রাসায়নিক কীটনাশক এবং সার ব্যবহার করা হয়। এই রাসায়নিকগুলি কীটপতঙ্গ ও রোগ থেকে ফসলকে রক্ষা করে ফলন নিশ্চিত করে। কিন্তু এই রাসায়নিকের অবশিষ্টাংশ সবজিতে থেকে যেতে পারে যা দীর্ঘদিন ধরে খেলে স্বাস্থ্যের জন্য বিরাট ক্ষতিকর হতে পারে। তাই রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহৃত বেগুন থেকে সাবধান ।
কীভাবে নিরাপদে বেগুন খাবেন
- ভালো করে ধুয়ে নিন: যেকোনো কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ দূর করতে বেগুন ভালো করে ধুয়ে নিন।
- জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত বেগুন খান: সম্ভব হলে, জৈব বেগুন বেছে নিন যা সিন্থেটিক কীটনাশক এবং সার ছাড়াই জন্মায়।
- খোসা ছাড়িয়ে নিন: যদি কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ সম্পর্কে চিন্তিত হন তবে বেগুনের খোসা ছাড়িয়ে নিতে পারেন।
- স্থানীয় বেগুন কিনুন: স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে বেগুন কিনুন যারা অরগানিক চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করেন।
বেগুন একটি পুষ্টিকর সবজি যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করা, ওজন কমাতে সাহায্য করা, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ানো পর্যন্ত – বেগুনের উপকারিতা অনেক। তবে বেগুন চাষ এবং ফসল তোলার পর বেগুন কীভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয় সে বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার।