জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ক্যান্সার চিকিৎসায় এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের পথে। ক্যান্সারের চিকিৎসায় তারা তৈরি করেছেন এক বিশেষ কৃত্রিম লিম্ফ নোড। এই লিম্ফ নোড কীভাবে কাজ করে, কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কী এই কৃত্রিম লিম্ফ নোড?
আমাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে লিম্ফ নোড থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিজ্ঞানীরা এই লিম্ফ নোডের অনুকরণে এক কৃত্রিম লিম্ফ নোড তৈরি করেছেন। এটি আকারে খুব ছোট এবং তৈরি হয়েছে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড দিয়ে। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড আমাদের শরীরেই পাওয়া যায়।
কীভাবে এটি কাজ করে?
এই ক্ষুদ্র কৃত্রিম লিম্ফ নোডের ভিতরে থাকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই উপাদানগুলোর কাজ হলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার এক বিশেষ সৈনিক, টি কোষগুলিকে সাহায্য করে সক্রিয় করে তোলে ।
- ক্যান্সার কোষের খণ্ড: এই খণ্ডগুলো টি কোষগুলোকে সাহায্য করে ক্যান্সার কোষগুলোকে শনাক্ত করতে।
- কো-স্টিমুলেশন অণু: এই অণুগুলো টি কোষগুলোকে সক্রিয় হতে সাহায্য করে।
- ইঞ্জিনিয়ারড আইএল-২ সাইটোকাইন: এটি এক ধরনের প্রোটিন যা টি কোষগুলোকে শক্তিশালী করে তোলে এবং দীর্ঘ সময় ধরে ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
যখন এই কৃত্রিম লিম্ফ নোড ত্বকের নিচে ইনজেক্ট করা হয়, তখন এটি টি কোষগুলোকে সক্রিয় করে তোলে । এই সক্রিয় টি কোষগুলো ক্যান্সার কোষগুলোকে খুঁজে বের করে ধ্বংস করে।
গবেষণার ফলাফল
গবেষকরা ইঁদুরের উপর এই কৃত্রিম লিম্ফ নোডের পরীক্ষা চালিয়েছেন। তারা দেখেছেন, মাত্র একবার এই কৃত্রিম লিম্ফ নোড ইনজেক্ট করার ফলে শরীরে ক্যান্সার-প্রতিরোধী টি কোষের সংখ্যা অনেকগুণ বেড়ে যায়। এই টি কোষগুলো পরীক্ষাগারে এবং জীবিত ইঁদুরের শরীরে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও, এই কৃত্রিম লিম্ফ নোড টিউমারের বৃদ্ধি কমাতে এবং আয়ু বাড়াতেও সাহায্য করেছে। এমনকি অন্যান্য ওষুধের সাথে ব্যবহার করলে তা বিদ্যমান টিউমারকেও ছোট করতে পারে।
এই আবিষ্কারের সবচেয়ে বড় গুরুত্ব হলো, এটি ক্যান্সারের চিকিৎসায় এক সম্পূর্ণ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। কেমোথেরাপি বা অস্ত্রোপচারের মতো কষ্টকর এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত চিকিৎসা ছাড়াই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব হতে পারে।
এখন পর্যন্ত এই কৃত্রিম লিম্ফ নোড শুধুমাত্র ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করা হয়েছে। মানুষের উপর এর নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা যাচাই করতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবে প্রাথমিক ফলাফলগুলো অত্যন্ত আশাপ্রদ। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই আবিষ্কার ক্যান্সার চিকিৎসায় এক বিপ্লব আনতে পারে এবং লাখ লাখ ক্যান্সার রোগীকে নতুন জীবন দিতে পারে।