ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সঠিক পুষ্টি গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, যা ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনার মূল উপাদান। ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাস এবং পুষ্টি গ্রহণের মৌলিক দিকগুলো বোঝা অত্যন্ত জরুরি, যেহেতু বিভিন্ন ধরনের খাবার রক্তে শর্করার স্তরে ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলে।
প্রথমত, ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যাভ্যাসে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার স্তর বাড়ায়, তাই কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জি আই) সমৃদ্ধ খাবার বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, পুরো শস্য, শাকসবজি, এবং মসুর ডাল কম জি আই খাবারের মধ্যে পড়ে, যা শর্করার স্তর ধীরে ধীরে বাড়াতে সহায়ক।
প্রোটিন এবং ফ্যাটেরও সঠিক পরিমাণে অন্তর্ভুক্তি ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হতে পারে। প্রোটিন রক্তে শর্করার স্তর বাড়ায় না এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী স্যাটাইটি প্রদান করে, যা খাবার গ্রহণের ফ্রিকোয়েন্সি কমাতে সহায়ক। মাংস, মাছ, ডিম, এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য প্রোটিনের ভালো উৎস। সঠিক পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, গ্রহণও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ফাইবারের ভূমিকা অপরিহার্য। ফাইবার রক্তে শর্করার স্তর দ্রুত বাড়তে বাধা দেয় এবং হজম প্রক্রিয়াকে ধীরগতি করে। শাকসবজি, ফল, এবং পুরো শস্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়।
অবশেষে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা এবং চিনিযুক্ত পানীয় এড়ানো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অপরিহার্য। পানি শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং ডিহাইড্রেশন রোধ করে।
সঠিক পুষ্টি গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে, যা রোগীদের জীবনের মান উন্নত করতে অবদান রাখে।
পেয়ারার পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা
পেয়ারা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় প্রায় ২২৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে, যা দৈনিক প্রয়োজনীয়তার অনেক বেশি। এছাড়া, পেয়ারা আঁশে সমৃদ্ধ, যা হজম শক্তি বাড়াতে এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
পেয়ারায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানও রয়েছে, যা শরীর থেকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করতে সহায়ক। এর ফলে ক্যান্সার এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। পেয়ারার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, এবং ফোলেটও স্বাস্থ্যকর জীবনধারার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে, এবং ফোলেট নতুন কোষ গঠনে সহায়ক।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেয়ারা বিশেষভাবে উপকারী কারণ এতে রয়েছে নিম্ন গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI)। নিম্ন GI মানে এটি ধীরে ধীরে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এছাড়া, পেয়ারার আঁশ রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
পেয়ারা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি কাঁচা খাওয়া যায়, জুস করে খাওয়া যায় অথবা সালাদে মিশিয়ে খাওয়া যায়। পেয়ারার পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা অনন্য হওয়ার কারণে, এটি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, বিশেষত যারা ডায়াবেটিস রোগী তাদের জন্য।
আপেলের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা
আপেল একটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল যা ভিটামিন, আঁশ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। আপেলের মধ্যে ভিটামিন C, পেকটিন, এবং বিভিন্ন প্রকারের ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম আপেলে মাত্র ৫২ ক্যালোরি থাকে, যা এটিকে একটি কম-ক্যালোরি ফল হিসেবে বিবেচিত করে। এছাড়া, আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আপেল অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। আপেলের মধ্যে রয়েছে পেকটিন নামক একটি প্রাকৃতিক ফাইবার , যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেকটিন হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে এবং তা স্থিতিশীল থাকে। এছাড়া, আপেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনল যা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে।
আপেলের আরও একটি বড় উপকারিতা হলো এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা। আপেলের মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি শরীরের ফ্রি রেডিকালগুলি নিষ্ক্রিয় করে, যা বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য, আপেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি হৃদরোগ এবং অন্যান্য সংক্রান্ত ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
অতএব, আপেল একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত আপেল খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হতে পারে।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স: পেয়ারা বনাম আপেল
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) হলো একটি সূচক যা খাবারের রক্তে শর্করার ওপর প্রভাব পরিমাপ করে। এই সূচকটি খাদ্য গ্রহণের পর রক্তে শর্করার মাত্রা কত দ্রুত বাড়ে তা নির্ধারণ করে। পেয়ারা এবং আপেলের GI তুলনা করলে দেখা যায় উভয়েরই GI কম, যার ফলে এরা ধীরে ধীরে রক্তে শর্করা ছাড়ে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হয়।
পেয়ারার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সাধারণত ১২ থেকে ২৪ এর মধ্যে থাকে। এটি একটি নিম্ন GI ফল, যা ধীরে ধীরে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে স্থিতিশীল রাখে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেয়ারা একটি উপযোগী ফল কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বাড়ায় না, বরং নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে, আপেলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স প্রায় ৩৬ থেকে ৪০ এর মধ্যে থাকে। আপেলও একটি নিম্ন GI ফল, যা ধীরে ধীরে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। আপেল খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার পর্যায়ক্রমিক বৃদ্ধি ঘটে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। আপেল ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেয়ারা এবং আপেল উভয়ই একটি ভালো বিকল্প, কারণ এরা নিম্ন GI ফল হিসেবে পরিচিত। তবে, ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থা এবং খাদ্যাভ্যাসের উপর নির্ভর করে, কোন ফলটি বেশি উপযোগী হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। পেয়ারা এবং আপেল উভয়ই স্বাস্থ্যকর ফল এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারি হতে পারে।
ফাইবার ভূমিকা: পেয়ারা বনাম আপেল
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ফাইবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে, কারণ এটি কার্বোহাইড্রেটের শোষণ প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। ফলে রক্তে গ্লুকোজের আকস্মিক বৃদ্ধি এড়ানো যায়। পেয়ারা এবং আপেল, উভয় ফলেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আঁশ রয়েছে, কিন্তু তাদের প্রকার এবং পরিমাণ কিছুটা ভিন্ন।
প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারায় প্রায় ৫.৪ গ্রাম আঁশ থাকে, যার মধ্যে বেশিরভাগই অদ্রবণীয় ফাইবার। অদ্রবণীয় ফাইবার হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। অন্যদিকে, আপেলে প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২.৪ গ্রাম আঁশ থাকে, যার মধ্যে দ্রবণীয় আঁশের পরিমাণ বেশি। দ্রবণীয় আঁশ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অধিক কার্যকর, কারণ এটি আন্ত্রিক শোষণ প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই দুই প্রকারের ফাইবারই উপকারী। পেয়ারার অদ্রবণীয় ফাইবার অন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক। অন্যদিকে, আপেলের দ্রবণীয় আঁশ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
তবে, পেয়ারা এবং আপেল উভয়েরই নিয়মিত সেবন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এই ফলগুলো অন্তর্ভুক্ত করা মানে ফাইবারের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। সুতরাং, পেয়ারা এবং আপেল উভয়েরই নিয়মিত সেবন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান: পেয়ারা বনাম আপেল
পেয়ারা এবং আপেল উভয়ই পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। পেয়ারা ভিটামিন সি-এর একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। আপেলেও ভিটামিন সি রয়েছে, তবে পেয়ারার তুলনায় পরিমাণে কম। ভিটামিন সি ছাড়াও, পেয়ারাতে ভিটামিন এ, ই এবং কে রয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্যে, ত্বকের উন্নতিতে এবং রক্ত জমাট বাঁধাতে সাহায্য করে।
আলোচনা করতে গেলে, আপেলেও প্রচুর খনিজ উপাদান রয়েছে। আপেলে ভিটামিন এ এবং ই-এর পাশাপাশি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, বিশেষ করে ভিটামিন বি৬ ও ফোলেটও পাওয়া যায়। এগুলি স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজনীয়। এছাড়া, আপেলে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা হাড়ের গঠন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
পেয়ারাতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফাইবার, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। আপেলেও ফাইবার রয়েছে, যা হজম ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তবে, পেয়ারাতে আপেলের তুলনায় ফাইবারের পরিমাণ একটু বেশি থাকে।
🔎︎ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য, উভয় ফলই উপকারী হলেও পেয়ারা কিছুটা এগিয়ে থাকতে পারে। কারণ পেয়ারার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স আপেলের তুলনায় কম, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
সাধারণত, পেয়ারা ও আপেল উভয়েই প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের ভালো উৎস। তবে, পেয়ারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু বেশী উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যারা ভিটামিন সি ও ফাইবারের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে চান।
পেয়ারা এবং আপেলের পুষ্টিগুণের তুলনা এবং ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারীতার তুলনা
পুষ্টি উপাদান | পেয়ারা (প্রতি ১০০ গ্রাম) | আপেল (প্রতি ১০০ গ্রাম) | ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কোনটা বেশী উপকারী এবং কেন উপকারী |
---|---|---|---|
ক্যালোরি | ৬৮ ক্যালোরি | ৫২ ক্যালোরি | আপেল: কম ক্যালোরির ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কম বৃদ্ধি পায় |
কার্বোহাইড্রেট | ১৪ গ্রাম | ১৪ গ্রাম | উভয়ই সমান |
প্রোটিন | ২.৫ গ্রাম | ০.৩ গ্রাম | পেয়ারা: বেশি প্রোটিন শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক |
ফ্যাট | ০.৫ গ্রাম | ০.২ গ্রাম | পেয়ারা: কিছুটা বেশি ফ্যাট হলেও পরিমাণ নগণ্য |
ফাইবার | ৫.৪ গ্রাম | ২.৪ গ্রাম | পেয়ারা: বেশি ফাইবার রক্তে শর্করার স্তর কমাতে সাহায্য করে |
ভিটামিন C | ২২৮.৩ মিলিগ্রাম | ৪.৬ মিলিগ্রাম | পেয়ারা: বেশি ভিটামিন C ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় |
ভিটামিন A | ৩৭৬ IU | ৫৪ IU | পেয়ারা: বেশি ভিটামিন A সমৃদ্ধ |
ভিটামিন E | ০.৭৩ মিলিগ্রাম | ০.১৮ মিলিগ্রাম | পেয়ারা: বেশি ভিটামিন E অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ |
ভিটামিন K | ২.৬ মিলিগ্রাম | ২.২ মিলিগ্রাম | পেয়ারা: বেশি ভিটামিন K রক্তজমাট বাঁধতে সাহায্য করে |
পটাসিয়াম | ৪১৭ মিলিগ্রাম | ১০৭ মিলিগ্রাম | পেয়ারা: বেশি পটাসিয়াম হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী |
ক্যালসিয়াম | ১৮ মিলিগ্রাম | ৬ মিলিগ্রাম | পেয়ারা: বেশি ক্যালসিয়াম হাড়ের জন্য উপকারী |
ম্যাগনেসিয়াম | ২২ মিলিগ্রাম | ৫ মিলিগ্রাম | পেয়ারা: বেশি ম্যাগনেসিয়াম মেটাবলিজমে সহায়ক |
ফসফরাস | ৪০ মিলিগ্রাম | ১১ মিলিগ্রাম | পেয়ারা: বেশি ফসফরাস শক্তি উৎপাদনে সহায়ক |
সোডিয়াম | ২ মিলিগ্রাম | ১ মিলিগ্রাম | পেয়ারা: একটু বেশি হলেও পরিমাণ কম |
লোহা | ০.২৬ মিলিগ্রাম | ০.১২ মিলিগ্রাম | পেয়ারা: বেশি লোহা রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়ায় |
ম্যাঙ্গানিজ | ০.১৫ মিলিগ্রাম | ০.০৩ মিলিগ্রাম | পেয়ারা: বেশি ম্যাঙ্গানিজ মেটাবলিক ফাংশনে সহায়ক |
জিঙ্ক | ০.২৩ মিলিগ্রাম | ০.০৪ মিলিগ্রাম | পেয়ারা: বেশি জিঙ্ক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় |
কপার | ০.২৩ মিলিগ্রাম | ০.০২ মিলিগ্রাম | পেয়ারা: বেশি কপার রক্ত উৎপাদনে সহায়ক |
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স | ১৬ | ৩৯ | পেয়ারা: কম GI রক্তে শর্করার স্তর কম বাড়ায় |
পেয়ারা এবং আপেলের অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা
পেয়ারা এবং আপেল উভয়ই পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল, যা ডায়াবেটিসের পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেয়ারা ভিটামিন সি-এর চমৎকার উৎস, যা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সহায়ক। এছাড়া, পেয়ারাতে বিদ্যমান ফাইবার ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। পেয়ারার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ যা বিভিন্ন প্রদাহজনিত সমস্যার সমাধানে কার্যকর।
অন্যদিকে, আপেলও স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আপেলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যালস দূর করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। আপেল হার্টের জন্যও উপকারী, কারণ এতে উপস্থিত পেকটিন কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আপেলের ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
পেয়ারা এবং আপেল উভয় ফলেই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেলস রয়েছে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। পেয়ারাতে উপস্থিত ভিটামিন এ এবং সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বলিরেখা কমাতে সহায়ক। আপেলে বিদ্যমান ভিটামিন এ এবং ই ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সহায়ক।
সুতরাং, পেয়ারা এবং আপেল উভয় ফলই আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য যেমন এদের উপকারিতা রয়েছে, তেমনি অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানেও এদের গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়মিত পেয়ারা এবং আপেল খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যকে আরও উন্নত করতে পারি।
কোনটা বেশী উপকারী?
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেয়ারা এবং আপেলের মধ্যে কোনটি বেশী উপকারী তা নির্ধারণ করতে গেলে উভয় ফলের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্যগত সুবিধাগুলি পর্যালোচনা করা জরুরি। পেয়ারা একটি কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত ফল, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। অন্যদিকে, আপেলও কম ক্যালোরির এবং এতে রয়েছে পেকটিন, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। দুটো ফলই ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদানে সমৃদ্ধ।
উভয় ফলে ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমাণ থাকলেও, পেয়ারা কিছু বাড়তি সুবিধা প্রদান করে। পেয়ারায় রয়েছে উচ্চমাত্রায় ডায়েটারি ফাইবার, যা পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারী এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সহায়ক। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অপরদিকে, আপেলও পুষ্টিগুণসম্পন্ন, তবে এতে চিনি কিছুটা বেশি।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেয়ারা এবং আপেল দুই ফলই উপকারী হতে পারে, তবে সময় ও পরিমাণের ক্ষেত্রে সচেতন থাকা জরুরি। পেয়ারা খাওয়া যেতে পারে সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবারের পর, যখন এটি শরীরের জন্য অতিরিক্ত শক্তি সরবরাহ করে। আপেল খাওয়া যেতে পারে বিকেলের স্ন্যাক্স বা হালকা ক্ষুধা মেটাতে।
অতএব, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেয়ারা কিছুটা বেশী উপকারী মনে হতে পারে, তার উচ্চ ফাইবার এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের কারণে। তবে, উভয় ফলই সুষম খাদ্যের অংশ হতে পারে যদি তা সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে গ্রহণ করা হয়। ডায়েটিশিয়ান বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলের পরিমাণ এবং সময় নির্ধারণ করা উচিত।