সুগন্ধির জগতে খুব কম উপাদানেরই গল্প ‘কস্তূরী ‘ বা ‘মাস্ক’-এর মতো আকর্ষক। এর রহস্য, সুবাস, এবং ব্যবহার নিয়ে বহু শতাব্দী ধরে মানুষের আকর্ষণের শেষ নেই। প্রকৃতিতে অবস্থিত এই সুগন্ধি জগতের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে কস্তূরীমৃগ নামের এক অতি লাজুক এবং বিরল প্রাণীটি। চলুন, আজ কস্তূরীর বিশেষত্ব, এই সুগন্ধি পদার্থ সংগ্রহ কীভাবে করা হয়, এবং কত রকম ক্ষেত্রে এর ব্যবহার আছে – সেই সব নিয়ে জেনে নেওয়া যাক।
কস্তূরী আসলে একটি তীব্র সুগন্ধি পদার্থ যা কস্তূরীমৃগের শরীরের একটি বিশেষ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। কস্তূরী নামটি এসেছে সংস্কৃত “মুষ্ক” শব্দ থেকে যার অর্থ “অণ্ডকোষ”। হিমালয়ের পর্বতময় অঞ্চল এই ধরণের হরিণের আবাসস্থল।
দেখতে হরিণের মতো হলেও, কস্তূরী হরিণ সাধারণ হরিণের থেকে আকারে ছোট এবং দাঁত-এর বদলে রয়েছে লম্বা থাবার মতো অংশ। উচ্চ পাহাড়ের জঙ্গলে একাএকা ঘুরে বেড়াতেই এরা বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করে। তাই এদের দেখাই খুব কঠিন, যা কস্তূরী পাওয়া আরও দুষ্কর করে তোলে।
প্রাচীনকালে মূলত সুগন্ধির জন্য হত্যা করা হতো হরিণগুলোকে, যা থেকে কস্তূরী নেওয়া হতো। কিন্তু, এতে কস্তূরী হরিণের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এখন সংরক্ষণের নানা প্রচেষ্টা চলছে। কড়া নিয়ম মেনে এবং অন্যান্য উপায় খুঁজে, মানুষ এখন আরও সচেতনভাবে কস্তূরী সংগ্রহ করছে।
শুধু যে সুগন্ধি বানানোর কাজেই লাগে তা-ই নয়,কস্তূরী র আরও অনেক ব্যবহার আছে:
- সুগন্ধি: কস্তূরীর মাদক সুবাসের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই এর থেকে সুগন্ধি তৈরি হয়ে আসছে। অন্যান্য সুগন্ধে যেটা যোগ করা হয়, কস্তূরী তার স্থায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়।
- চিকিৎসা: বিভিন্নপ্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থায়, কস্তূরী কে স্বাস্থ্যরক্ষার ওষুধের কাজে লাগানো হয়।
- ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব: পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক হিসেবে নানা সংস্কৃতিতে কস্তূরী কে স্থান দেওয়া হয়েছে।
প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার্থে এবং এই অমূল্য প্রাণীকে বাঁচানোর তাগিদে, কৃত্রিম কস্তূরী বা ‘সিনথেটিক মাস্ক’ তৈরির গবেষণা অনেকদূর এগিয়েছে। কস্তূরী হরিণকে না মেরেই সুগন্ধির জোগান চালু রাখতে এই বিকল্প খুব কার্যকরী হয়েছে।