ভারতের আয়ের অসাম্য এখন বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এমনকি আমেরিকা, ব্রাজিল আর দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়েও বেশি। এমনকি এই অসাম্য ব্রিটিশ রাজের ভারত শাসনের সময়কার তুলনায় অনেক বেশি । ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি ল্যাবের এক গবেষণা অনুযায়ী ধনীদের জন্য ২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত মোদির শাসনামল ছিল এক স্বর্গরাজ্য । এই সময়ে ভারতের মাত্র ১০০০০ জনের আয় গড়ে ৪৮০ মিলিয়ন রুপি, যা গড় আয়ের তুলনায় ২০০০ গুণ বেশি।
এই সময়ে, মুকেশ আম্বানি, গৌতম আদানি এবং সজ্জন জিন্দালের মতো কিছু ধনকুবের বিশ্বের শ্রেষ্ট ধনীদের তালিকায় নাম লেখান। তবে তারা বিশ্ব বাজারে নতুন কোনো পণ্য বা সার্ভিস দিয়ে এই কৃতিত্ব অর্জন করেননি বরং দেশের ভেতরে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্প দখল করে এই সম্পদ অর্জন করেন। সরকার বড় ব্যবসায়ীদের কর ছাড় দিয়েছে, বিমানবন্দরের মতো মূল্যবান রাষ্ট্রায়াত্ত সম্পদ বিক্রি করেছে এবং দেউলিয়া প্রতিষ্ঠান কেনার সময় তাদের পছন্দের শিল্পপতিদের সুবিধাজনক চুক্তি পাইয়ে দিয়েছে । এর ফলে শ্রমিক ও আমজনতার কাছে কোনো উপকার পৌঁছায়নি। উৎপাদন মুখী শিল্পের শেয়ার যেখানে চাকরির সুযোগ তৈরি করতে পারে তা কমে গিয়ে ১৩% এ নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য কারখানা তৈরির জন্য ২৪ বিলিয়ন ডলারের সাবসিডি দেওয়া সত্ত্বেও এই হ্রাস। বাস্তব চিত্র হল গত এক দশক ধরে কোনো উৎপাদনমুখী শিল্পের বিকাশ না হওয়া এবং মহামারীর সময়ে ডিজিটাইজেশন এবং সস্তা অর্থনীতির কারণে স্টার্টআপগুলো বেড়ে গেলেও তা কেবল কয়েকজন কাগুজে বিলিয়নেয়ার এবং একটি গিগ ওয়ার্কার শ্রেণী তৈরি করেছে ।
শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের দুজনের কাজ নেই, যা দেশের কর্মসংস্থান সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে। অথচ ধনী ব্যবসায়ী গ্রুপের দ্বারা প্রভাবিত মুখ্যধারার মিডিয়া সরকারি চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ করা হতাশ যুবকদের খবর প্রচার করে না।
রাষ্ট্রীয় রেলওয়ে নেটওয়ার্ক মারাত্মক স্টাফের অভাবে ভুগছে। স্থায়ী সেনা নিয়োগের পরিবর্তে অস্থায়ী সেনা প্রকল্প ‘অগ্নিবীর’ চালু করা হয়েছে । যেখানে ৭৫% সৈনিককে চার বছর পর ছাঁটাই করা হবে । এটা আসলেই বিশ্বব্যাপী যুদ্ধে ও বেসামরিক সেক্টরের জন্য নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে যুদ্ধ-প্রশিক্ষিত ভাড়াটে সৈন্য তৈরি করার এক বেদনাদায়ক প্রয়াস । ফলতঃ হতাশ তরুণরা ইসরাইলে চাকরির জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছে বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে লড়াই করার জন্য এজেন্টদের দ্বারা প্রলুব্ধ হচ্ছে।
তবে গড় ভোটার এই অর্থনৈতিক সংকট সম্পর্কে উদাসীন । ২০১৯ সালে মোদির দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার সময় বিজেপির ভোটের হার ৩৭% পর্যন্ত বাড়ে, যা পাঁচ বছর আগের তুলনায় ছয় শতাংশ বেশি।এবং এবারও প্রায় প্রতিটি সমীক্ষায় উঠে আসছে মোদির তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় থাকার স্পষ্ট ইঙ্গিত ।
ধনকুবেররা বিজেপিকে শুধু ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে ১.৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ দিয়েছে । এই ইলেক্টোরাল বন্ডের তথ্য সামনে আসায় খানিকটা বিপাকে বিজেপি ।
এই ভয়াবহ অসাম্যের মাঝে ধনকুবেররা বেশ আত্ম বিশ্বাসী কারণ তারা জানে যে সিংহভাগ ভোটার ধর্মীয় বিদ্বেষে এতটাই আচ্ছন্ন যে তারা রাজনীতি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পর্কের ঘোরালো জটিল মারপ্যাঁচ নিয়ে চিন্তাও করবে না। দিনের শেষে গরিবরা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে পাচ্ছে রান্নার গ্যাস, টয়লেট এবং পাকা বাড়ির জন্য সাবসিডি। প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ভারতীয় এখন মাসিক বিনামূল্যে খাদ্যের রেশন পাচ্ছেন ।
সুইডেনের ইউনিভার্সিটি অব গুটেনবার্গের ইন্ডিপেনডেন্ট রিসার্চ ইউনিট ভি-ডেম ইনস্টিটিউট ভারতকে “নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্র” বলে উল্লেখ করে বলেছে , বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের এই অবনমন বিলিয়নেয়ারদের ছাড়া সম্ভব হতো না।