১৯৯৬ সালের এনডিপিএস (নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্স) আইনের অধীনে দায়ের করা একটি মামলায় প্রাক্তন আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাটকে বিশ বছরের কারাদণ্ড এবং ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পালানপুর সেশনস কোর্ট এই রায় দিয়েছে, যা প্রায় এক দশকের পুরনো একটি মামলা ।
বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মুখ হিসেবে পরিচিত সঞ্জীব ভাটকে একটি মাদক সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত করা হয় । এই ঘটনাটি ১৯৯৬ সালের যখন ভাট বনাসকান্তার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব প্রাপ্ত ছিলেন । তাঁর উপর রাজস্থানের একজন আইনজীবী সুমের সিং রাজপুরোহিতকে ভুয়ো মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ ওঠে। একটি সম্পত্তি খালি করার জন্য রাজপুরোহিতকে জোর করার জন্য এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
২০১৮ সালে গুজরাট হাইকোর্ট অভিযোগগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য সিআইডি ক্রাইমকে নির্দেশ দিলে এই মামলাটি তারপর দ্রুতগতিতে এগুতে থাকে , একটি এসআইটি (স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম) গঠিত হয় । যারা শেষ পর্যন্ত ভাটকে গ্রেফতার করে। এছাড়াও গ্রেফতার হন এল.সি.বি পুলিশ পরিদর্শক, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত ডিএসপি আই.বি. ব্যাস।
এনডিপিএস মামলা ছাড়াও সঞ্জীব ভাট ১৯৯০ সালের জামনগরে পুলিশি হেফাজতে প্রভুদাস বৈষ্ণানীর মৃত্যু সংক্রান্ত আরেকটি মামলায়ও জড়িত । যে কারণে তিনি ইতিমধ্যেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। এতে ভাট এবং আরেকজন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। এই মামলার শিকড়ও সেই সময়কার উত্তেজনাপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশে, বিশেষ করে বিজেপি নেতা এল.কে আডবাণীর রথযাত্রার পরবর্তী সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সময়ে।
সঞ্জীব ভাটের নাম শুধু মাদক মামলা বা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় সীমাবদ্ধ নয়। গুজরাটের উত্তাল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভাট ছিলেন একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব। ২০০২ সালের গোধরা কাণ্ডের পর ভাট তৎকালীন গুজরাট সরকার আর বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠেন এবং সুপ্রীম কোর্টে দাঙ্গার সময় সরকারি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে পিটিশন দাখিল করেন । এই অভিযোগের ভিত্তিতে গঠন করা বিশেষ তদন্তকারী কমিশন (SIT) তাঁর অভিযোগ খারিজ করে দিলেও তাঁকে রাজ্য সরকারের এক চোখা বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সঞ্জীব ভাট, বাস্তবেই এক বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। একদিকে যেমন তিনি দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, অন্যদিকে তার ওপরও একাধিকবার পক্ষপাত এবং ক্ষমতাকে প্রভাবিত করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর মামলাগুলো যেভাবে এগিয়েছে তাতে অনেকের মতেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ছাপ স্পষ্ট।
সঞ্জীব ভাটের উকিলরা অবশ্যই এরপর হাইকোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। কিন্তু, যে রাজনৈতিক পরিবেশে এই বিচার শুরু হয়ে শেষ হল তাতে আপিল আদালতে কতটা সুবিচার পাবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সঞ্জীব ভাটের ভবিষ্যৎ এখন আইনের চেয়েও বেশি নির্ভর করছে ক্ষমতাকেন্দ্রের রাজনৈতিক ইচ্ছার ওপর।
সঞ্জীব ভাটের কেসটি শেষ পর্যন্ত ভারতের গণতান্ত্রিক চরিত্র এবং আইনের শাসনের একটি কঠিন পরীক্ষা। ন্যায়বিচারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হলে তা দেশের আইনি ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা নাড়িয়ে দেয়।