খাবারের দুনিয়ায় চিংড়ি মাছ আর বেগুন যেন রাজা-রানী। সারা পৃথিবীর নানা রকম রান্নায় এই দুই উপকরণের দেখা মেলে। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য এই সুস্বাদু খাবার অভিশাপ হয়ে উঠতে পারে, শুরু হতে পারে অস্বস্তিকর চুলকানি। কেন এমন হয়? চিংড়ি আর বেগুনে অ্যালার্জি থাকলে কীভাবে সেটা বুঝবেন, আবার সুস্থ থাকবেন
খেলেই চুলকানি শুরু
খাদ্যে অ্যালার্জি তখনই হয় যখন শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনও একটি নির্দিষ্ট খাবারের প্রোটিনকে ক্ষতিকর ভেবে তার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে দেয়। ফলে হালকা চুলকানি, ফুলে যাওয়া থেকে শুরু করে অ্যানাফিল্যাক্সিসের মতো মারাত্মক অবস্থাও হতে পারে।
চিংড়িতে অ্যালার্জি:
চিংড়ি জাতীয় খাবারের মধ্যে এমন কিছু প্রোটিন থাকে যার থেকে অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে। এর মূল কারণ হল ‘ট্রপোমায়োসিন’, একধরনের প্রোটিন যেটা ধুলোর মাইট বা তেলাপোকাতেও পাওয়া যায়। এগুলোর সাথে শরীরের বিক্রিয়ায় চুলকানি বাড়তে পারে। চিংড়ি থেকে চুলকানি তো হবেই, সাথে গায়ে ফোলা, পেটে ব্যথা, মাথা ঘোরা এমনকি আরও গুরুতর লক্ষণ দেখা দিতে পারে, নির্ভর করছে কার কতটা অ্যালার্জি তার ওপর।
বেগুনে অ্যালার্জি:
বেগুন হল নাইটশেড গোত্রের সবজি, যে গোত্রে টমেটো, ক্যাপসিকাম, আলুও রয়েছে। চিংড়ির তুলনায় বেগুনে অ্যালার্জি কম দেখা যায়, তবে সমস্যাটা একেবারে যে নেই তা নয়। অনেকসময় বেগুনের মধ্যে থাকা কিছু অ্যালকালয়েড বা হিস্টামিনের কারণে চুলকানি, র্যাশ, পেট খারাপ হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়
এইসব অ্যালার্জি কার আছে সেটা বোঝা এবং তারপর সেই মতো খাদ্যাভ্যাস বদলানোটাই হল সমাধানের চাবিকাঠি। এগুলো মেনে চললে এগিয়ে যাওয়া অনেক সহজ হবে:
- সঠিক টেস্টের দ্বারা অ্যালার্জি নির্ণয়: খাবারে অ্যালার্জি হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার প্রথম ধাপ হলো একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। বিস্তারিত খাদ্য-তালিকা রাখা, স্কিন প্রিক টেস্ট (ত্বকের উপর অ্যালার্জেন দিয়ে পরীক্ষা) বা রক্ত পরীক্ষা করে অ্যালার্জির কারণ খুঁজে বের করতে হয়। অনেক সময় ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে রোগীকে সামান্য পরিমাণে সন্দেহভাজন খাবার খাইয়েও পরীক্ষা করা হয়।
- সচেতনভাবে অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলা: প্রধান কাজ হলো যে খাবারে অ্যালার্জি সেটা এড়িয়ে চলা। চিংড়ির বদলে মুরগি, মাছ বা শাকসবজি ভিত্তিক প্রোটিন বেছে নিতে হবে। তেমনই বেগুনের বদলে একই রকম টেক্সচারের (যেমন বাঁধাকপি) বা স্বাদের (মিষ্টি আলু) অন্য সবজি বেছে নিন।
- প্যাকেটজাত খাবারের লেবেল মন দিয়ে পড়া: এখানে লুকিয়ে থাকতে পারে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান। অনেকসময় শুধু একটি বিভাগের নাম লিখে দেওয়া থাকে, যার মধ্যে অ্যালার্জেনও থাকতে পারে।
- ক্রস–কন্টামিনেশনের ব্যাপারে সতর্কতা: রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে বা কেনা খাবার খেলে সাবধান! অল্প একটু অ্যালার্জেন লেগে থাকলেও বড়সড় বিক্রিয়া হতে পারে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা:
- হালকা সমস্যায় অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধে চুলকানি এবং অন্যান্য উপসর্গ কমতে পারে।
- গুরুতর অ্যালার্জি থাকলে অ্যাড্রিনালিন অটো-ইনজেক্টর (এপিপেন) সাথে রাখতে হবে।
- অ্যালার্জেন ইমিউনোথেরাপি: এটি একটি নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে অল্প অল্প করে অ্যালার্জেন খাইয়ে শরীরের সহনশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। অবশ্যই এটি শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করতে হবে।
খাবারে অ্যালার্জি থাকলেও রান্নার দুনিয়া থেকে নিজেকে বঞ্চিত করার কোনও মানে নেই। চিংড়ি বা বেগুনে সমস্যা কেন হয় বুঝে, সেইমতো সতর্কভাবে খেলে জীবন উপভোগ্যই থেকে যায়। সঠিক ডায়াগনোসিস, সাবধানতা এবং বিকল্প খাবারের প্রতি মনোযোগ দিয়ে পৃথিবীর নানা রকমের খাবারের স্বাদ নেওয়া সম্ভব, নিরাপদভাবেই।