২০২৩ সালের ৩রা মে থেকে মণিপুরে জাতিগত সংঘাত শুরু হয়, যা এখনও চলমান। এই সংঘাতের মূল কারণ ছিল মেইতেই সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত জাতির মর্যাদা দাবি। মেইতেইরা ইম্ফল উপত্যকায় বসবাস করে এবং কুকি-জো উপজাতি সম্প্রদায় পাহাড়ি এলাকায়। সংঘাতের ফলে অনেক বাড়ি পোড়ানো হয়েছে এবং ধর্মীয় স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়েছে। সরকারি হিসাবে, ১৭৫ জন মানুষ নিহত এবং ১,১০৮ জন আহত হয়েছেন, এবং ৭০,০০০ এরও বেশি মানুষ তাদের বাড়ি ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ।
সংঘাতের প্রথম দিনে চুরাচান্দপুর জেলায় সংঘাত শুরু হয় এবং পরে ইম্ফল পূর্ব এবং ইম্ফল পশ্চিম জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এই সংঘাতের ফলে অনেক নাগরিক, সেনা সদস্য, বন কর্মকর্তা এবং অগ্নি নির্বাপণ কর্মী আহত এবং নিহত হয়েছেন2।
এই সংঘাতের জেরে অনেকেই তাদের বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআই এমনই অনেক বাড়িছাড়াদের সাথে কথা বলেছেন। এই জাতি সংঘাতে বাড়ি হারানো নবি নামের একজন ৪২ বছর বয়সী মহিলা PTI প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন “আমার বাড়ি আমার চোখের সামনে পুড়ে গেছে। আমি এবং আমার পরিবারের সবাই রাতারাতি চলে এসেছি। আমরা এখনও জানি না সেখানে কি অবশিষ্ট আছে।”
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বেশ কয়েকটি সিভিল সোসাইটি গ্রুপ এবং সামাজিক ব্যক্তিত্বরা । ১৮ বছরের যুবতী দিমা জানাচ্ছেন , বীভৎস সংঘাতের আবহে পার হয়েছে আমার স্কুল জীবনের শেষ দিন গুলি , এমন একটা পরিস্থিতিতে আমি কিভাবে আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাব ? আগে জীবনের নিরাপত্তা দরকার ভোট সেখানে গৌণ চাহিদা ।
এই সংঘাতের আবহে কাজ হারানো পরিবহণ ব্যবসায়ী খাম্বা বলেন , এই সংঘাতের পরিস্থিতিতে আগে দরকার কিছু সমাধান হওয়া , সরকারের উচিৎ ছিল নির্বাচনের আগে কোনো সুষ্টু শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করা ।
এই ভয়াবহ সংঘাতের আবহে সংঘাত থামানোর ব্যবস্থা না করে আগে ভোট কেন ? সাধারণ নাগরিকের মনে এটাই এখন মুখ্য প্রশ্ন । অনেকগুলি ছোটো ছোটো গণ সংগঠন ভোটের আগে শান্তির দাবী জানিয়ে ইতিমধ্যেই ভোট বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে । সার্বিক ভাবে এক অশান্ত পরিস্থিতির মধ্য সংঘটিত হতে যাচ্ছে এবারের মণিপুরের লোকসভা ভোট ।
অন্যান্য রাজ্যের মত রাজনৈতিক উত্তাপের ছবির থেকে যেন সম্পূর্ণ আলাদা মণিপুরের ছবি । রাজনৈতিক দল গুলোও যেন কেমন উদাসীন , বিচ্ছিন্ন ভাবে পোস্টার ফ্লেক্স ও পতাকা থাকলেও ভোটের যে উত্তাপ তা থেকে মণিপুর বেশ দুরেই । আসলে ভয়াবহ সংঘাতের মণিপুরের মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে এতটাই প্রভাব ফেলেছে যে সে ক্ষত সারতে হয়তো কয়েক দশক লেগে যাবে ।