গত বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই পাল্টাতে শুরু করেছে বাংলার রাজনৈতিক সমীকরণ । যে মুসলিম ভোট ব্যাংক এতদিন একচেঠিয়া ভাবে তৃণমূলের দখলে ছিল তাতে ভাঙ্গন ধরায় আইএসএফ । ভাঙ্গড়ের মত গুরুত্বপূর্ণ আসন থেকে জেতেন তাদের একমাত্র বিধায়ক নৌসাদ সিদ্দিকি ।
আইএসএফ এর এই উত্থানের সাথে সাথেই পালটাতে থাকে পশ্চিমবঙ্গের ভোটের সমীকরণ । পালটাতে থাকে মুসলিম ভোটের গতি । মুসলিম ভোট ভাগ হয়ে যেতে থাকে আই এস এফের দিকে । গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যাপক সন্ত্রাস ও ছাপ্পার অভিযোগ ওঠে । এই বেলাগাম ছাপ্পা ও সন্ত্রাসে যাদের প্রাণহানি ঘটে তাদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের । এর ফলে মুসলিম ভোট যে বিভাজিত হয়েছে তার ছবি স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ে ।
ISF এর সাথে জোট হলনা কেন ?
আইএসএফকে এত দিন ব্যাকাপ দিয়ে যাচ্ছিল রাজ্যের মুখ্য বাম দল সিপিআই এম । সিপিআই এম এর হাত ধরেই মূলত আইএসএফ এর দ্রুতগতিতে উত্থান । রাজনৈতিক মহলে গত বিধানসভা ভোটের মতোই এবার ও সিপিআই এম ও আই সে এফ জোট বাধবে এমন সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিলো । কিন্তু আসন ভাগাভাগি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে এবার আর জোট না হওয়ায় সিপিআই এম তার শরিক দল গুলোকে নিয়ে কংগ্রেসের সাথে জোট বেঁধে লড়াই করছে এবারের লোক সভায় । অন্যদিকে আইএসএফ একেই লড়বে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
ফলে পশ্চিমবাংলার ভোট এখন বহু ভাবে বিভক্ত – তৃণমূল , বিজেপি , সিপিআই এম , কংগ্রেস ও আইএসএফ । এদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে তাই যদি এই নির্বাচনে আইএসএফ পৃথক ভাবে লড়াই করে তবে তাতে এক জটিল সমীকরণ তৈরি হবে ।
ISF এর সাথে জোট হলনা কেন ?
আই এস এফের ভোটের সব থেকে বড় অংশ এসেছে তৃণমূল থেকে , কাজেই আইএসএফের উত্থানেই সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তৃণমূল । তৃণমূল মুসলমান ভোটারে একচেটিয়া অধিপত্য হারিয়েছে ।
তবে যে সমস্ত সিটে বামেরা শক্তিশালী , সেই ক্ষেত্রে বামেদের সাথে আইএসএফের জোট না হওয়ায় তৃণমূলের পক্ষে লাভ হবে । কারণ সেক্ষেত্রে মুসলিম ভোট ভাগ হলেও সেটা সিপিআই এম পাবেনা , আইএসএফ ভোট কাটলেও তাই ওই নির্দিষ্ট দু একটি সিটের ক্ষেত্রে সেটা লাভই হবে , তবে সার্বিক ভাবে আইএফএফের উত্থানটাই তৃণমূলের কাছে বিরাট ক্ষতি ।
CPIM-ISF জোট না হওয়ায় BJP-র লাভ কোথায় ?
দ্বিতীয় ক্ষতি হয়ছে বামেদের , আই এস এফের সাথে জোট হলে মুসলমান ভোটের যে অংশ তারা হারিয়েছিল তা দ্রুত রিকভার করা সম্ভব হত । আগামী বিধানসভার কথা ভেবে এই বিরাট ভোট ব্যাংকে অবহেলা করে উচিৎ ছিল না ।
তৃতীয় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আইএসএফ নিজে । আইএসএফ এর নিজস্ব কিছু ভোট থাকলেও সেটা সার্বিক ভাবে কোনো একটি লোকসভাতে একক ভাবে লড়াই করে জিতে আসার মত নয় । আইএসএফ কে একটি আসনও জিততে হলে অবশ্যই বাম ব্যাকাপের প্রয়োজনীয়তা ছিলো । একক ভাবে লড়াই করলে বিহারের মিমের মত আইএসএফ কেবলই ‘ভোট কাটুয়া’ হয়ে দাঁড়াবে ।
এই জোট না হওয়ায় সব থেকে বেশি লাভবান হল বিজেপি । বিজেপি জানে পশ্চিমবাংলায় মুসলমান ভোট তারা পাবে না । এবং ৪২ টি লোকসভা আসনের মধ্য মুসলমান ভোট ফ্যাকটর হয়ে দাঁড়াবে কমপক্ষে ১৮ টি তে । সেই মুসলমান ভোট যদি ভাগাভাগি হয় তবে লড়াই অনেকটা সহজ হয়ে যায় । তৃতীয় শক্তি যদি ভোটের একটা ভালো অংশ কেটে নেয় তাহলে বিজেপির পক্ষে পঁচিশটা আসন পার করে ফেলা কোনো কঠিন কাজ নয় ।
সমীকরণটা কী দাঁড়াচ্ছে
যেমন বসিরহাট আসনটির ক্ষেত্রে লড়াই হচ্ছে মূলত চতুর্মুখী – তৃণমূল , বিজেপি , সিপিআই এম এবং আইএসএফ ।গত তিনটি লোকসভা ভোটে এই আসন তৃণমূলের দখলে ছিল । মূলত মুসলিম প্রধান , এই আসনটিতে তৃণমূল মুসলিম ভোট ব্যাংকের পুরো ফায়দা তুলেছে শেষ তিনটি লোকসভায় , কিন্তু এবারে সেই মুসলমান ভোট ব্যাংকে ফাটল ধরেছে , মুসলিম ভোটের কিছু অংশ যাবে আইএসএফ এ এবং বামেরাও এই অঞ্চলে নতুন করে শক্তি বৃদ্ধি করায় মুসলিম ভোটের কিছু অংশ বামও পাবে, তবে আইএসএফ এবং বাম এই দুটি দলের ভোট শতাংশ এতটাও নেই যে তারা একক ভাবে জিততে পারবে ।
সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তৃণমূল , এমনিতেই তৃণমূলের এই বেসামাল অবস্থা তাতে এই মুসলিম ভোটে ফাটল ধরায় পুরো লাভবান হবে বিজেপি । পশ্চিম বাংলায় প্রায় ১৩ থেকে ১৫ আসনে এই সমীকরণ কাজ করবে । এই আসন গুলিতে বিজেপি গতবারে না জিতলেও এবারে তাদের অনেকটাই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে । ভোটের মূল লড়াইতে তাদেরকে মোকাবিলা করতে হবে তৃণমূলের সাথে হেড টু হেড , যেক্ষেত্রে তৃণ্মুলের ভোট ব্যাংকের একটা বড় অংশে আগেই ধ্বস নেমেছে ।
তাই এবারের পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা ভোট বিজেপির কাছে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে ।