গবেষণা অনুযায়ী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত দের ক্ষেত্রেই গড়ে ৫ বছরে বেঁচে থাকার হার প্রায় ৮৯%। আর যদি ক্যান্সারটি শুধু স্তনেই থাকে (স্টেজ ১), তাহলে ৫ বছর বেঁচে থাকার হার ৯৯% ।
৭০% এর বেশি স্তন ক্যান্সারই প্রাথমিক অবস্থাতেই ধরা পড়ে। ফলে আধুনিক উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল ।
কিন্তু,দুর্ভাগ্যজনক ভাবে স্তন ক্যান্সারের এই চিকিৎসার বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো দ্রুত মেনোপজের লক্ষণ।
মেনোপজ
মেনোপজ হলো একজন নারীর প্রজনন জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ, যখন তার ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং মাসিক ঋতু থেমে যায়। সাধারণত, এটি 45 থেকে 55 বছরের মধ্যে ঘটে। মেনোপজের ফলে শরীরে বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে শারীরিক ও মানসিক উভয়দিকেই বেশ কিছু পরিবর্তন আসে।
মেনোপজের লক্ষণ
যে সমস্ত লক্ষণ দেখে অনুমান করা সম্ভব যে মেনোপজ হতে পারে তা হল-
- হট ফ্ল্যাশ: হঠাৎ গরম অনুভূতি, ঘাম হওয়া, ঠান্ডা লাগা।
- হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি: এসব মেনোপজের একটি সাধারণ লক্ষণ।
- যোনিপথের শুষ্কতা: ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে যোনিপথের শুষ্কতা, চুলকানি ও অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।
- অনিয়মিত ঋতুচক্র : মেনোপজের সময় মাসিক ঋতু অনিয়মিত হতে পারে, দীর্ঘ বা অল্প সময়ের জন্য হতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধি: চর্বি শরীরে জমা হওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
- হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস: ইস্ট্রোজেনের অভাবে হাড়ের ঘনত্ব কমে, যার ফলে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে।
- ঘুমের সমস্যা: ঘুমে অসুবিধা, ঘুম ভাঙা – এসব মেনোপজের সময় দেখা দিতে পারে। মানসিক সমস্যা –
- মেজাজের ওঠা-নামা: হরমোনের পরিবর্তনের ফলে মেজাজের ওঠা-নামা, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ দেখা দিতে পারে।
- স্মৃতিশক্তির অভাব: মনোযোগ ধরে রাখতে অসুবিধা, জিনিসপত্র ভুলে যাওয়া – এসব মেনোপজের সময় দেখা দিতে পারে।
- যৌনতার প্রতি আগ্রহ হ্রাস: ইস্ট্রোজেনের অভাবে যৌনতার প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে।
কেন স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসার ফলে মেনোপজের লক্ষণ দেখা যায়
কেন স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসার ফলে মেনোপজের লক্ষণ দেখা দেয়? স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় মূলত যেসব হরমোনগুলিকে কমানোর কাজ করা হয়, তার প্রভাব প্রজননতন্ত্রের ওপরেও পড়ে। প্রধানত যেসব কারণে মেনোপজের লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
কেমোথেরাপি:
কিছু কেমোথেরাপির ওষুধ ওভারিতে ভয়ংকর রকম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর ফলে স্থায়ীভাবে ওভারির কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ফলে দ্রুত মেনোপজ হতে পারে।
হরমোন থেরাপি:
ইস্ট্রোজেনকে কন্ট্রোলে আনার জন্য যেসব ওষুধ, যেমন ট্যামোক্সিফেন বা অ্যারোমেটেজ ইনহিবিটরস-এর কারণে শরীরে মেনোপজের মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওভারিয়ান সাপ্রেশন:
কখনো কখনো ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওভারির কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ইচ্ছাকৃতভাবে মেনোপজ ঘটানো হয় এবং এর সাধারণ উপসর্গগুলিও দেখা দেয়।
এই উপসর্গগুলো কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
চিকিৎসার সময় ও পরে এই মেনোপজ লক্ষণগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কয়েকটি কার্যকরী পদ্ধতি হলো:
- হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি): মেনোপজের উপসর্গ ঠেকাতে এইচআরটি কাজে লাগতে পারে। কিন্তু স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, বিশেষত হরমোন রিসেপ্টর পজিটিভ ক্যান্সার হলে এটি এড়ানোই ভালো।
- হরমোনবিহীন ওষুধ: কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ হট ফ্ল্যাশ কমাতে সাহায্য করে। হাড়ের ক্ষয় রুখতেও ওষুধ দেওয়া হয়।
- জীবনযাত্রায় পরিবর্তন: সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, ও স্ট্রেস কমানোর কৌশল যেমন যোগব্যায়াম, ধ্যান ইত্যাদি উপসর্গের তীব্রতা কমাতে পারে।
- যোনিপথের লুব্রিক্যান্ট এবং ময়েশ্চারাইজার: এগুলি যৌনক্রিয়ার সময়ের অস্বস্তি কমায়। স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসার সাথে মেনোপজের লক্ষণগুলির আগমন নিঃসন্দেহে কষ্টকর। কিন্তু, এই সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ও এর ব্যবস্থাপনার পথগুলি সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে রোগীরা প্রস্তুত থাকতে পারেন।