প্রচন্ড গরম পড়ছে ।এই গরমে শরীর সুস্থ রাখাটাই বিরাট চ্যালেঞ্জ । ছায়ায় বা ঘরে বসে থেকে যাদের পক্ষে কাজ করার সুযোগ রয়েছে তাদের কাছে বিরাট সমস্যা না হলেও যাদের কাজের তাগিদে প্রতিদিন বাইরে বের হতে হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে প্রবল গরমে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হচ্ছে । বিশেষত গরমে আমাদের স্কিনে বা চামড়ায় নানা রকমের ইনফেকশন বা র্যাশ বের হতে দেখা যায় , কতগুলি ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করলে এই গরমে চামড়ার এই সব সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায় ।
গরমকালে ত্বকের যত্ন
অ্যালো ভেরা:
অ্যালো ভেরার জেল শুধু রোদে পোড়া ত্বককেই শান্ত করে না, সাধারণ ক্ষত বা কাটাছেঁড়াও সারাতে সাহায্য করে। আরও বেশি ঠান্ডা অনুভূতির জন্য জেলটি ফ্রিজে রাখতে পারেন। অতিরিক্ত পুষ্টির জন্য অ্যালো ভেরার সাথে কয়েক ফোঁটা ভিটামিন ই তেলও মেশাতে পারেন।
শসা:
শসা শুধু গোল গোল করে কেটে ত্বকে লাগালে চলবে না। কুচি করে রস বের করে নিয়ে অ্যালো ভেরার সাথে মিশিয়ে মুখে লাগান। এতে ত্বক প্রশান্তি পাবে সাথে রোদ লাগার পর ত্বক হাইড্রেটেড থাকবে।
নারকেল তেল:
নারকেল তেল ত্বককে হাইড্রেট রাখতে খুব ভালো কাজ করলেও একটু চটচটে ভাব হতে পারে। তাই তৈলাক্ত ত্বক হলে, রাতে লাগিয়ে ঘুমান অথবা জোজোবা বা আলমন্ড তেলের মত হালকা তেলের সাথে মিশিয়েও লাগাতে পারেন। এছাড়া, জলরোধী মেকআপ তুলতে নারকেল তেল ভালোভাবেই কাজ করে; ত্বক পরিষ্কার এবং আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে ।
গ্রিন টি:
ত্বকের প্রদাহ কমাতে আরও কার্যকরী সমাধানের জন্য গ্রিন টি ব্যাগ গরম জলে ভিজিয়ে রাখুন, এরপর ঠান্ডা হবার জন্য ফ্রিজে রেখে দিন। এই ঠান্ডা চা নরম কাপড় দিয়ে আপনার মুখে লাগান। মধুর সাথে গ্রিন টি মিশিয়ে শান্তিদায়ক ফেস মাস্ক বানিয়েও লাগাতে পারেন।
মধু:
ব্রণর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মধুর সাথে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল বা হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতা আরও বাড়বে এবং ব্রণ নিরাময়ে কাজ করবে।
ওটমিল:
মুখে লাগানোর জন্য একটি শান্তিদায়ক ফেস মাস্ক বানাতে ওটমিল গুঁড়ো করে নিন, এর সাথে টক দই আর মধু মিশিয়ে মুখে লাগান। এতে চুলকানি বা প্রদাহযুক্ত ত্বক শান্ত হবে সাথে ত্বক আর্দ্রও থাকবে। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চিকেন পক্স বা গরমে ঘামাচির কারণে চুলকানি হলে ওটমিল দিয়ে স্নান করতে পারেন।
লেবুর রস:
সানবার্নের দাগ হালকা করতে লেবুর রস ব্যবহার করার সময় অবশ্যই পানির সাথে মিশিয়ে নেবেন, তা না হলে ত্বক জ্বালা করতে পারে। এক ভাগ লেবুর রসের সাথে চার ভাগ পানি মিশিয়ে তুলো দিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। লেবুর রস লাগানোর পর অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, কারণ এটি আপনার ত্বককে সূর্যের আলোর প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
গোলাপজল:
অতিরিক্ত ফুরফুরে ভাবের জন্য গোলাপজলের সাথে গ্লিসারিন বা উইচ হ্যাজেল মিশিয়ে লাগাতে পারেন। ত্বকের রংয়ের ভারসাম্য রাখা এবং চোখের ফোলা ভাব কমাতে এই মিশ্রণটি বিশেষত ভালো কাজ করে।
টমেটো:
তৈলাক্ত বা ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য টমেটোকে সামান্য টক দইয়ের সাথে গুলে পেষ্ট বানিয়ে নিন। ত্বকের পিএইচের ভারসাম্য রেখে আর্দ্রভাবও ফিরিয়ে আনে।
পুদিনা:
পুদিনা পাতা থেতলে নিন, এর সাথে দই মিশিয়ে লাগালে ত্বক আরও বেশি শান্তি এবং ঠান্ডা অনুভব করবে। বিশেষ করে রোদে পোড়া ত্বকের জন্য এটি অনেক উপকারী।
অতিরিক্ত পরামর্শ
- প্রচুর জল খেয়ে শরীর হাইড্রেটেড রাখুন। এতে ত্বকে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা বজায় থাকে, সাথে শরীরের টক্সিন পরিষ্কার হয়।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাবার খান, যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
- ক্ষতিকারক UV রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সুরক্ষামূলক পোশাক পরুন এবং কমপক্ষে 30 SPF যুক্ত ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
গরমের দিনে বাইরে বেরোনোর সময় মেনে চলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
পোশাক | হালকা রঙের, পাতলা, সুতির পোশাক পরুন যা ঘাম শোষণ করতে পারে। টুপি, রোদ চশমা এবং স্কার্ফ ব্যবহার করুন মাথা এবং মুখ রক্ষা করার জন্য। |
সানস্ক্রিন | SPF 30 বা তার বেশি সহ ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন এবং প্রতি দুই ঘন্টা পরপর ও ঘাম হলে বারবার লাগান। |
জল | প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, বিশেষ করে বাইরে থাকাকালীন। ডিহাইড্রেশন এড়াতে নিয়মিত সরবরাহ রাখুন। |
খাবার | হালকা, সহজ-হজম খাবার খান যা আপনাকে শক্তিশালী রাখবে। ফল, শাকসবজি এবং টাটকা খাবার বেশি খান। |
বিরতি | প্রয়োজনে বিরতি নিন এবং ছায়ায় থাকুন। বাইরে অনেকক্ষণ থাকবেন না, বিশেষ করে দুপুরের তীব্র রোদে। |
সতর্কতা | বাইরে বেরোনোর আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস চেক করুন। অতিরিক্ত গরমের দিনে বাইরে বেরোনো এড়িয়ে চলুন। |
সতর্কতা | আপনি যদি কোনও স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন, তাহলে বাইরে বেরোনোর আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। |