শারীরিক পরিশ্রম কেবল আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যকেই উন্নত করে না, এটি মানসিক চাপ মুক্তির এক অসামান্য উপায়ও বটে। যখন আমরা শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকি, তখন আমাদের দেহে এন্ডরফিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয় যা প্রাকৃতিকভাবে আমাদের মন ভালো করে তোলে এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে।
এন্ডরফিনের কাজ:
এন্ডরফিনগুলি হচ্ছে মস্তিষ্ক নিঃসৃত এক ধরনের রাসায়নিক মেসেঞ্জার, যা ‘ফিল-গুড’ হরমোন হিসেবে পরিচিত। এই হরমোনগুলি দুঃখ, ব্যথা ও চাপকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং আনন্দ ও আরামদায়ক অনুভূতি উৎপাদন করে।
শারীরিক পরিশ্রম, যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা বা যোগা, আমাদের শরীরে এই এন্ডরফিন নিঃসরণের পরিমান বাড়িয়ে তোলে।
গবেষণা দেখিয়েছে যে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে অবদান রাখে। শারীরিক পরিশ্রম হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে, যা মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং মানসিক সজাগতা ও মনোযোগ বাড়ায়। এই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মানসিক সজাগতা চাপ কমাতে সাহায্য করে।
হার্টের সুরক্ষায় শারীরিক পরিশ্রমের ভূমিকা :
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় নতুন কিছু তথ্যের উন্মোচন হয়েছে । গবেষণাটি ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে তারা বিশেষ করে দেখেছেন যে শারীরিক পরিশ্রম কীভাবে মস্তিষ্কের চাপ-সংক্রান্ত ক্রিয়াকলাপ কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।গবেষণায় প্রায় ৫০,০০০ রোগীর মেডিক্যাল রেকর্ড পরীক্ষা করা হয়, যাদের মধ্যে ৭৭৪ জনের মস্তিষ্কের চিত্র এবং চাপ-সংক্রান্ত ব্রেন একটিভিটি পরিমাপ করা হয়েছিল। দেখা গেছে, যারা নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করেছেন, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি ২৩% কমে গেছে। আরও দেখা গেছে যে, এই কমানো ঝুঁকি মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেকসের কার্যকারিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
মানসিক চাপ কমাতে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিশ্রম খুবই কার্যকর। এখানে কিছু কার্যকরী শারীরিক পরিশ্রমের উল্লেখ করা হলো, যেগুলো চাপ কমানোর জন্য পরিচিত:
হাঁটা:
প্রতিদিনের হাঁটা সহজেই অনুশীলন করা যায় এবং এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। একটি নিরিবিলি পার্কে বা প্রকৃতির মাঝে হাঁটা মনকে প্রশান্ত করে।
দৌড়ানো:
দৌড়ানোর সময় শরীর থেকে এন্ডরফিন নিঃসৃত হয়, যা মনোবল বাড়ায় এবং চাপ কমায়।
যোগা:
যোগা মানসিক চাপ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। বিভিন্ন যোগ পোজ ও ধ্যান শরীর ও মনের মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপন করে।
পিলেটিস:
পিলেটিস শরীরের কোর মাসলগুলি মজবুত করে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে, যা চাপ হ্রাসে সাহায্য করে।
সাঁতার:
সাঁতার কাটা একটি চমোৎকার ব্যায়াম, যা মাংসপেশীর শিথিলতা ঘটায় এবং মানসিক চাপ দূর করে।
সাইক্লিং:
বাইসাইকেল চালানো হৃদস্পন্দন বাড়ায় এবং এই দ্রুত গতি সম্পন্ন শারীরিক পরিশ্রমে মাধ্যমে চাপ কমায়।
ড্যান্স এরোবিক্স:
নাচের অনুশীলন ও মানসিক চাপ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
হাইকিং:
প্রকৃতির মাঝে হাইকিং করা মানসিক চাপ দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থান করলে মন প্রশান্ত হয় এবং সম্পূর্ণরূপে চাপমুক্ত হতে সাহায্য করে।
কিকবক্সিং:
কিকবক্সিং একটি উচ্চ তীব্রতার ক্রিয়াকলাপ যা শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক চাপ দ্রুত কমায়। এই ধরনের ক্রীড়া একাগ্রতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করে।
স্ট্রেংথ ট্রেনিং:
ওজন তোলা ও অন্যান্য স্ট্রেংথ ট্রেনিং কসরত শরীরকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি মনকেও দৃঢ় করে। এটি চাপ প্রশমনে সহায়ক হতে পারে, যেহেতু এটি শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।