প্রচণ্ড গরমে শরীরে এনার্জি বজায় রাখা একটা বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ । কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা আমাদের পূর্বপুরুষরা এই গরমে এমন এক পানীয় ব্যবহার করতেন যাতে সারাদিন তাঁরা থাকতেন ফুরফুরে ঝরঝরে । খুবই সাধারণ উপকরণ দিয়ে তৈরি হত এই পানীয় সামান্য আখের গুড় এক চিমটে লবণ আর এক গ্লাস জল । ব্যাস তাতেই কেল্লা ফতে । বাজারে চলতি এনারজেটিক ড্রিংস গুলোকে গুনে গুনে দশ গোল দেবে এই পানীয় । শুধু তাই নয় বাজারের প্রি প্রোসেসড পানীয়তে আপনার স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকতে পারে কিন্তু এতে বিন্দুমাত্র কোনো ক্ষতি হবেনা ।
উপকরণ ও তৈরির পদ্ধতি
এই পানীয়টি তৈরি করা খুবই সহজ, মাত্র কয়েকটি জিনিস লাগে – জল, এক চিমটি নুন, এবং সামান্য গুড় । এই উপাদানগুলি একসাথে মেশালেই তৈরি হয়ে যায় এমন একটি পানীয়, যা শরীরে জলের ঘাটতি পূরণ করে এবং শক্তি বাড়ায়। দুই বাংলাতেই বহু প্রজন্ম ধরে এই পানীয় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
গরমে এই পানীয় কেন কার্যকরী
এর কার্যকারিতার মূলে রয়েছে এতে যে উপাদানগুলি ব্যবহার করা হয়। আখের গুড়ে প্রচুর আয়রন থাকে এবং আরও অনেক প্রয়োজনীয় মিনারেল ও ভিটামিন থাকে তাই তাড়াতাড়ি শক্তি বাড়াতে এর জুড়ি মেলা ভার। শরীরকে ডিটক্সিফাই করে লিভারকে ঠিক রাখতেও এটি বিশেষভাবে কার্যকরী। তাছাড়া হজমের জন্য গুড় খুবই উপকারী।
অন্যদিকে, নুন শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য রাখে যা গরমকালে অত্যন্ত জরুরি – কারণ এসময় বেশি ঘাম হয়। ইলেকট্রোলাইট নার্ভের কার্যকারিতার জন্য জরুরি এবং হাইড্রেটেড থাকতেও সাহায্য করে। এর ফলে হিট স্ট্রোক ও তাপের ক্লান্তি প্রতিরোধ করা যায়।
স্বাস্থ্যগত লাভ
আখের গুড় ও নুন জলে মেশালে শক্তি বাড়ে । কারণ গুড়ে থাকা ন্যাচারাল সুগার রিফাইন্ড চিনির তুলনায় ধীরে ধীরে শোষিত হয়, ফলে তাড়াতাড়ি শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং অন্যান্য চিনিযুক্ত পানীয় খেলে যেমন শরীরে শক্তি হুহু করে বাড়ে এবং তারপর কমে যায় তেমনটা হয় না । এই পানীয় পান করলে হজম ভালো হয় এবং লিভার সুস্থ থাকে যা বিশেষ করে উপকারী যখন অনেকক্ষণ কিছু না খেয়ে থাকার পর এই পানীয় পান করা হয় অথবা সারারাত ঘুমের পর সকালে উঠে ।
গবেষণা ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা
গরম আবহাওয়ায় সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকতে হলে শরীরে হাইড্রেশন বজায় রাখা এবং ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক রাখা খুবই জরুরি। Research Gate-এ প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, গুড় ও নুনের মতো প্রাকৃতিক উপাদান শুধু জলের চেয়ে বেশি হাইড্রেটেড থাকতে সাহায্য করে কারণ ঘামের সাথে যে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম বেরিয়ে যায় তা তাড়াতাড়ি রিপ্লেস করে।
Science Direct এর একটি গবেষণায় এই কথা বলা হয়েছে যে রিফাইন্ড চিনির তুলনায় গুড়ের মতো প্রাকৃতিক মিষ্টি জাতীয় খাবারের উপকারিতা বেশি। গুড়ে ট্রেস মিনারেল থাকে যা রিফাইন্ড চিনিতে থাকে না, তাই গুড়ের স্বাস্থ্যগত লাভও বেশি।
প্রচণ্ড গরমেই হোক বা অন্য সময় হাইড্রেটেড ও কর্মক্ষম থাকার জন্য বাঙালির এই ঐতিহ্যগত পানীয় খুব কার্যকরী। সহজলভ্য উপাদান দিয়ে তৈরি – প্রকৃতির দানকে স্বাভাবিকভাবে কাজে লাগাতে চাইলে এই পানীয় আদর্শ। আধুনিক স্বাস্থ্যবিধির যুগেও প্রথাগত জ্ঞানের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে এবং অতি সরল হলেও এই শক্তিশালী পানীয় আমাদের এই কথা মনে করিয়ে দেয় যে দৈনন্দিন জীবনে প্রকৃতির কতখানি মূল্য। শরীরকে স্বাভাবিকভাবে চাঙ্গা করে তুলতে চান তাহলে রোজকার রুটিনে এই ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পানীয়টিকে স্থান দিন এবং সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকার জন্য সকালটা শুরু করুন এই পানীয় দিয়ে।
আখের গুড়ের মধ্যে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানগুলি এবং তাদের স্বাস্থ্যগত গুরুত্ব একবার চোখ বুলিয়ে নিন
উপাদান | গুরুত্ব |
---|---|
ক্যালোরি | এনার্জি সরবরাহ করে, যা দৈনিক কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে |
আয়রন | রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে, অ্যানেমিয়া প্রতিরোধ করে |
ম্যাগনেসিয়াম | মাংসপেশী ও নার্ভ ফাংশনের উন্নতি সাধন করে, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে |
ক্যালসিয়াম | হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নতি করে, দাঁতের সুরক্ষা দেয় |
পটাশিয়াম | হার্ট রেট ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, কোষে তরল সাম্য বজায় রাখে |
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট | কোষের ক্ষতি রোধ করে এবং অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধ করে |