ব্রণ হচ্ছে ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা যা সেবেসিয়াস গ্রন্থির অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদনের কারণে সৃষ্টি হয়। এটি সাধারণত মুখ, কপাল, নাক এবং চিবুকে দেখা দেয়, তবে তা শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন কাঁধ, পিঠ, এবং বুকেও উপস্থিত হতে পারে। ব্রণের প্রধান কারণ হিসেবে হরমোনের পরিবর্তন, ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, অতিরিক্ত তেল উৎপাদন এবং মৃত কোষ জমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
ব্রণ তৈরির প্রক্রিয়াটি মূলত ত্বকের রন্ধ্র বা পোরের মধ্যে আটকে থাকা সেবাম এবং মৃত ত্বক কোষের সংমিশ্রণে ঘটে। এই সংমিশ্রণ প্রতিরোধী হয়ে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে, যা ব্রণের উৎপাত বাড়িয়ে দেয়। বিশেষত, হরমোনাল পরিবর্তন যেমন প্রজননাল হরমোনদের বৃদ্ধি ব্রণ উৎপাদনের একটি প্রধান কারণ। এছাড়াও, জেনেটিক্স, খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ ও পরিবেশগত অবস্থা ব্রণের বৃদ্ধির জন্য অবদান রাখতে পারে।
কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতেও ব্রণ দেখা দিতে পারে, যেমন কড়া রাসায়নিক পণ্য ব্যবহার, অতিরিক্ত তেলযুক্ত প্রসাধনী, এবং অপর্যাপ্ত ত্বক পরিষ্কার। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক উপায়ে যেমন নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাও ব্রণ প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।
ব্রণ সমস্যা গুরুতর হয়ে উঠলে বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হিসেবে দেখা দিলে, ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক ও অস্থায়ী কেমিক্যাল পিলিং পদ্ধতির মাধ্যমেও ব্রণের চিকিৎসা করা যেতে পারে। সঠিক এবং সঠিকভাবে পরিচালিত চিকিৎসা ব্রণ মুক্ত এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে সহায়ক হতে পারে।
ব্রণের প্রধান কারণ
ব্রণ সাধারণত ত্বকের তেল গ্রন্থি এবং চুলের ফলিকলগুলির সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। ত্বকের অতিরিক্ত তেল, যা সেবাম নামে পরিচিত, চুলের ফলিকলগুলিতে জমে গিয়ে ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে। মূলত, যখন সেবাম এবং ত্বকের মৃত কোষ একত্রিতে জমা হতে শুরু করে, এটি ফলিকলগুলিকে ব্লক করে দেয়, যা ত্বকে মৃদু থেকে গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি ব্রণর প্রধান কারণের মধ্যে একটি। Propionibacterium acnes নামক ব্যাকটেরিয়া সাধারণত ত্বকের ফলিকলে এবং সেবাম গ্রন্থিগুলিতে পাওয়া যায়। যখন ফলিকলগুলি ব্লক হয়ে যায়, এই ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। এটি ফলিকলগুলির চারপাশে লালচে বা পুঁজযুক্ত ফুসকুড়ির মত চেহারা দেয়।
হরমোনাল পরিবর্তনও ব্রণের একটি বড় কারণ। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ব্রণের প্রধান কারণ হচ্ছে হরমোনের পরিবর্তন। টেস্টোস্টেরন এবং এস্ট্রোজেনের মত হরমোনগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হলে, ত্বকের সেবাম উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা ফলিকলগুলিতে চাপ সৃষ্টি করে এবং ব্রণর সমস্যার জন্ম দেয়। পিরিয়ডের সময় মেয়েদের হরমোনাল পরিবর্তন বিরাটভাবে ত্বকের উপর প্রভাব ফেলে, যার ফলে ব্রণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
অতিরিক্ত তেল এবং মেক-আপ পণ্যও ব্রণর সমস্যা বাড়াতে পারে। তৈলাক্ত প্রসাধনী জাতীয় পণ্য ত্বকের ফলিকলগুলি ব্লক করতে পারে, যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং ব্রণ সৃষ্টি করে। এছাড়াও, খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপের প্রভাবেও ব্রণর সমস্যা বাড়তে পারে। শর্করা ও চর্বিযুক্ত খাবার ত্বকের তেল উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে, আর মানসিক চাপ ত্বকের প্রদাহ ও ব্রণর কারণ হতে পারে।
ব্রণের প্রকারভেদ
ব্রণ হলো ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। প্রতিটি ধরনের ব্রণ ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে চিহ্নিত করা যায় এবং সেগুলো ভিন্নভাবে ত্বকে প্রভাব ফেলে। নিচে ব্রণের কিছু সাধারণ প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:
পিম্পল
পিম্পল হলো ব্রণের সবচেয়ে পরিচিত প্রকারভেদের একটি। এটি লালচে রঙের এবং মাঝখানে পুঁজ যুক্ত থাকা বড় আকারের হতে পারে। পিম্পল সাধারণত ব্যথাযুক্ত হয় এবং কিছুটা সময়ের পরে স্বাভাবিকভাবেই সেরে যায়, যদিও এটির স্থানে দাগ পড়তে পারে।
ব্ল্যাকহেড
ব্ল্যাকহেড হলো এক ধরনের ব্রণ যা ত্বকের ছিদ্রপথে তেল এবং মৃত ত্বক জমা হবার কারনে হয়। যখন এই ত্বকের ছিদ্রপথ খোল থাকে তখন এটি বাতাসের সংস্পর্শে আসলে কালো রঙ ধারণ করে। এগুলো বুঝতে সহজ কারণ এগুলো ত্বকের উপরের দিকে উঁকি দিয়ে থাকে এবং বিভিন্ন ত্বকের অংশে বিশেষত নাকে দেখা যায়।
হোয়াইটহেড
হোয়াইটহেড ব্রণের আরেকটি প্রকার যা ত্বকের ছিদ্রপথ বন্ধ থাকার কারণে ত্বকের নিচে পুঁজ ও তেল জমা হওয়ার ফলে হয়। এগুলো ছোট ছোট সাদা রঙের এবং ব্যথাহীন গুটি হিসেবে ত্বকের উপরে দেখা যায়। সঠিক পরিচর্যা ও নিয়মিত পরিষ্কার না করা হলে এগুলো বড় হতে পারে।
সিস্টিক ব্রণ
সিস্টিক ব্রণ হলো পরিষ্কার করা সবচেয়ে কঠিন এবং ব্যথাযুক্ত ব্রণের প্রকারভেদ। এটি ত্বকের নিচে বড় আকারের, পুঁজযুক্ত গুটি হিসেবে দেখা যায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি বড় প্রদাহ সৃষ্টি করে। সিস্টিক ব্রণ কোনো বিশেষ ধরনের চিকিত্সা ছাড়া নিরাময় হয় না এবং এর ফলে ত্বকে স্থায়ী দাগ পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
এই ছিল ব্রণের বিভিন্ন প্রকারভেদ এবং এই লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করে সঠিক পরিচর্যা নিলে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ঘরোয়া উপায়ে ব্রণ থেকে মুক্তির উপায়
ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া উপায়গুলি অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহারে ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে ব্রণ নিরাময়ে সহায়ক হয়। এর মধ্যে কিছু জনপ্রিয় উপাদান এবং তাদের ব্যবহারের পদ্ধতি নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
মধু: মধু প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে কাজ করে, যা ব্রণের প্রদাহ কমাতে সহায়ক। মধু সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করা যায় অথবা মধু ও দারচিনি মিশিয়ে প্যাক তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। মধু ত্বকে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
নিমপাতা: নিমপাতা একটি অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান হিসেবে পরিচিত, যা ব্রণের সংক্রমণ এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তাজা নিমপাতা বেটে পেস্ট তৈরি করে তা ব্রণের স্থানে লাগানো যেতে পারে। এছাড়াও নিমপাতার রস কটনবলে নিয়ে ত্বকে লাগানো যেতে পারে।
অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরা একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের দুর্বলতা কমাতে সহায়ক। ব্রণের প্রদাহ এবং লালচে ভাব কমাতে অ্যালোভেরা জেল সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করা যেতে পারে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের ব্রণ কমে আসতে পারে।
তুলসীপাতা: তুলসীপাতা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন, যা ত্বকের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। তুলসীপাতা বেটে পেস্ট তৈরি করে তা ব্রণের স্থানে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়াও তুলসীপাতার রস কটনবলে নিয়ে ত্বকে ব্যবহার করা যায়।
উপর্যুক্ত উপাদানগুলো ছাড়াও আরও কিছু প্রাকৃতিক উপকরণ যেমন – গোলাপ জল, মুলতানি মাটি, লেবুর রস ইত্যাদি ব্যবহার করে ঘরোয়া ভাবে ব্রণ মুক্তি সম্ভব। তবে যেকোনো নতুন উপাদান ব্যবহার করার আগে ত্বকের একটি ক্ষুদ্র স্থানে পরীক্ষা করা উচিৎ, যাতে কোনো প্রতিক্রিয়া না হয়।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং ব্রণ প্রতিরোধ
ব্রণ প্রতিরোধে জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। প্রথমেই আসে সঠিক খাদ্যাভ্যাস। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মানে হলো সবজি, ফলমূল, প্রোটিন ও কম চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা। ফাস্ট ফুড, চর্বিযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত। বিশেষত, চিনি ও উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার ব্রণের সৃষ্টি কারণ হতে পারে । তাই এদের পরিমাণ কম রাখতে হবে।
পর্যাপ্ত পানি পানও এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিদিন কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করা উচিত। পর্যাপ্ত পানি শরীরের ভিতরে সুস্থতা বজায় রাখে এবং ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে, যা ব্রণ প্রতিরোধে সহায়ক।
নিয়মিত ত্বকের যত্ন ব্রণ প্রতিরোধে অপরিহার্য। প্রতিদিন দুই বার মৃদু ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা দরকার। তবে, অতিরিক্ত ঘষামাজা না করে সজ্ঞানভাবে পরিষ্কার করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গেই ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে, বিশেষ করে এমন ময়শ্চারাইজার যেটি তৈলাক্ত নয় এবং ত্বকের ধরণ অনুযায়ী উপযোগী।
ঘুমের সময় সময়মতো পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের স্ট্রেস হরমোন বৃদ্ধি পায় যা ব্রণের প্রবণতা বাড়াতে পারে। তাই প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
ব্যায়াম নিয়মিত করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ব্যায়াম শরীরকে ফিট রাখতে সাহায্য করে এবং টক্সিন মুক্ত রাখতে সহায়ক। ব্যায়ামের পর অবশ্যই শাওয়ার নিতে হবে যাতে ঘাম ও তেল ত্বকে জমতে না পারে।
অবশেষে, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাও ব্রণ প্রতিরোধের একটি অংশ। মেডিটেশন, যোগা বা অন্যান্য শিথিলকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যেতে পারে। এগুলি অনুসরণ করে জীবনযাত্রায় সামান্য পরিবর্তন এনে আপনি ব্রণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবেন।
এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং মেডিকেশন
ব্রণের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রোডাক্ট এবং ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রোডাক্টগুলি ত্বকের ব্যাকটেরিয়া নিধনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে এবং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। সাধারণত, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ক্রিম, জেল বা ফোম ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও, চামড়ার যে অংশে ব্রণ হয়েছে সেখানে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল সাবান বা ক্লিনজার প্রয়োগ করে থাকতে পারেন।
ব্রণের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ঔষধের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ঔষধ হচ্ছে বেনজয়েল পেরক্সাইড এবং স্যালিসাইলিক অ্যাসিড। বেনজয়েল পেরক্সাইড ত্বকের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং কেরাটিন উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ত্বকের কোষ করে নতুন ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির পথ রোধ করে। এই ঔষধগুলি সাধারণত স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং নিনির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়।
তবে, ঔষধ ও এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রোডাক্টগুলি সঠিকভাবে ব্যবহার করার নিয়ম-কানুন অবশ্যই মেনে চলতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করে এই প্রোডাক্টগুলি প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি। যেমন, বেনজয়েল পেরক্সাইড বা স্যালিসাইলিক অ্যাসিডের শক্তিশালী ফর্মুলেশন ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা বা প্রদাহের কারণ হতে পারে। তাই, কখন ও কতটা পরিমাণে এই ঔষধগুলি ব্যবহার করতে হবে তার নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা মেনে চলাই শ্রেয়।
এছাড়া, অনেকে প্রাকৃতিক এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যেমন চা গাছের তেল ব্যবহার করেন। চা গাছের তেল ত্বকের ব্রণ কমাতে সহায়ক হতে পারে, তবে প্রাকৃতিক পণ্যের ক্ষেত্রে এসমব পণ্যকে পরীক্ষা করে এবং উপযুক্ত নির্দেশনা মেনে ব্যবহার করা উচিত।
ব্রণের চিকিৎসা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সঠিকভাবে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রোডাক্ট ও ঔষধ ব্যবহার করলে ত্বকের সমস্যা নিরাময় সহজ হয় এবং সুন্দর ও ত্বকযুক্ত জীবন যাপন করা যায়।
ব্রণের স্কার এবং এর চিকিৎসা
ব্রণ যেকোনো ধরনের ত্বকে অনেক সমস্যার কারণ হতে পারে এবং এটি সেরে যাওয়ার পরও ব্রণের স্কার ত্বকে স্থায়ী দাগ রেখে যেতে পারে। এই স্কারগুলি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন আঘাতজনিত দাগ, অবসানজনিত দাগ বা হাইপারপিগমেন্টেশন। স্কার মোছার বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলেও, সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
লেজার থেরাপি একটি জনপ্রিয় ও কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি, যা ব্রণের স্কার মোছার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই থেরাপিতে লেজারের আলোকরশ্মি ত্বকের গভীরে পৌঁছায় এবং ত্বকের উপরের স্তরের কোষগুলি পুনর্জীবিত ও পুনর্গঠিত করে। নিয়মিত লেজার থেরাপি ত্বকের টোন এবং টেক্সচার উন্নত করতে পারে।
রাসায়নিক পিল আরেকটি পরিচিত পদ্ধতি, যা স্কার মসৃণ ও পরিষ্কার করতে ব্যবহৃত হয়। এতে রাসায়নিক দ্রবণ প্রয়োগের মাধ্যমে ত্বকের উপরিভাগের ক্ষতিগ্রস্থ অংশ অপসারিত হয়, যা নতুন ও প্রাকৃতিক ত্বকের বৃদ্ধি বাড়ায়। বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক পিল পাওয়া যায়, যেমন গ্লাইকোলিক এসিড পিল, স্যালিসাইলিক এসিড পিল ইত্যাদি, যেগুলো ত্বকের ধরন ও প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়।
মাইক্রোনিডলিং একটি সাম্প্রতিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যা ত্বকের পুনঃগঠন ও স্কার অপসারণে সহায়ক। এই প্রক্রিয়ায়, সুক্ষ্ম সূঁচ ব্যবহার করে ত্বকের গভীরে মাইক্রো-চ্যানেল তৈরি করা হয়, যা কোলাজেন উৎপাদন উদ্দীপনা করে এবং ত্বকের স্বাভাবিক হিলিং প্রসেসকে ত্বরাণ্বিত করে।
অতিরিক্তভাবে, ডার্মা-অ্যাব্রেশন এবং ফিলার ইনজেকশনও ব্রণের স্কার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ডার্মা-অ্যাব্রেশন মাধ্যমে ত্বকের ক্ষতিগ্রস্থ স্তর মসৃণ করা হয়, ফলে ত্বক আরও কোমল হয়। ফিলার ইনজেকশন স্থায়ী দাগগুলিকে ভরাট করার জন্য ব্যবহৃত হয়, যা ত্বকের সমতলতা পুনঃস্থাপন করে।
সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকের ত্বকের ধরন ও ব্রণের পরিমাণ আলাদা, তাই চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা হতে পারে। নিয়মিত ও সমন্বিত চিকিৎসার মাধ্যমে ব্রণের স্কার থেকে মুক্তি পেয়ে সুন্দর, মসৃণ ও স্বাস্থ্যকর ত্বক পাওয়া সম্ভব।
ব্রণের চিকিৎসার আধুনিক উপায়
ব্রণ একটি সাধারণ ত্বকের সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণে তৈরি হতে পারে, যেমন হরমোনাল পরিবর্তন, অতিরিক্ত তেল উৎপাদন, ব্যাকটেরিয়া এবং মৃত কোষ। যখন ঘরোয়া পদ্ধতি বা ওভার-দ্য-কাউন্টার চিকিৎসা ব্যর্থ হয়, তখন আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি বিচ্যুত। ব্রণের চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু আধুনিক পদ্ধতি রয়েছে, যেমন মেডিক্যাল চিকিৎসা, ডার্মাটোলজিস্টের সহায়তা এবং সক্রিয় প্রোডাক্টের ব্যবহার।
মেডিক্যাল চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে টপিক্যাল রেটিনয়েড, যা ত্বকের কোষ পুনর্জন্ম করতে সাহায্য করে এবং নতুন ব্রণ গঠনের সম্ভাবনা কমায়। এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম বা ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়, যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে। ইজোট্রেটিনয়িন নামক ওষুধটি গুরুতর ব্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা ত্বকের তৈল গ্রন্থির কার্যক্ষমতা হ্রাস করতে সাহায্য করে।
ডার্মাটোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যদি ব্রণ গুরুতর হয় বা স্কার্ফ তৈরি হতে থাকে। একজন অভিজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্ট আপনার ত্বকের অবস্থা বিশ্লেষণ করে এবং ব্যক্তিগতভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা নির্ধারণ করতে পারেন। এমনকি লেজার থেরাপি বা কেমিক্যাল পিলিংয়ের মত অত্যাধুনিক পদ্ধতিও ব্রণ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে থাকে, যা ত্বকের গভীর স্তরের সমস্যাগুলি সমাধান করতে কার্যকর।
অনেক সময় ঘরোয়া পদ্ধতি বা সাধারণ ওষুধ ব্রণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল হয় না, তখন পেশাদার সাহায্যের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ডার্মাটোলজিস্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা ও সঠিক প্রোডাক্ট ব্যবহারের মাধ্যমে ব্রণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং স্থায়ী স্কার্ফ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতি ও চিকিৎসার ফলে ব্রণ একটি নিরাময়যোগ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ ত্বক লাভ করা সম্ভব।