সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ ও তার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আচার্য বালকৃষ্ণের দ্বিতীয় বারের ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন অস্বীকার করেছে। বিভ্রান্তিকর মেডিকেল বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য চলমান অবমাননা মামলায় এই আবেদন করা হয়েছিল।
বিচারপতি হিমা কোহলি এবং আহসানুদ্দিন আমানুল্লাহের বেঞ্চ পতঞ্জলি এবং তার পরিচালকের পক্ষ থেকে জমা দেওয়া সর্বশেষ ক্ষমাপ্রার্থনার আবেদন মেনে নিতে অস্বীকার করেছেন।
আদালতে দেওয়া পূর্ববর্তী অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য এই আবেদন করা হয়েছিল।
পতঞ্জলির মিথ্যা বিজ্ঞাপনের জের: আদালতের কড়া মন্তব্য
আদালতের সামনে পতঞ্জলির প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত সিনিয়র অ্যাডভোকেট মুকুল রোহাতগি যখন বলেন, “মানুষ ভুল করে”, তখন বিচারপতি কোহলি প্রত্যুত্তর দেন,
“তাহলে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই মামলায় আমরা এতটা উদার হতে চাই না।”
আদালত কেন তাদের ক্ষমাপ্রার্থনাকে একই ভাবে দেখবে যেমনটি তারা আদালতের অঙ্গীকারের প্রতি দেখিয়েছে । পরে রোহাতগি জানান যে পতঞ্জলির পক্ষ থেকে তারা জনসাধারণের কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত। কিন্তু আদালত এই প্রস্তাবেও সাড়া দেয়নি।
পতঞ্জলি ও তার সহ-প্রতিষ্ঠাতা বাবা রামদেব বিদেশ ভ্রমণের মিথ্যা দাবি করে ব্যক্তিগত উপস্থিতি এড়াতে চেষ্টা করেছেন বলে আদালত মন্তব্য করেছে।
আদালত পর্যবেক্ষণ করেছে যে 30 মার্চে আবেদনগুলি দায়ের করা হলেও, যে ফ্লাইট টিকিট গুলি দাখিল করা হয় সেগুলি 31 মার্চ বুক করা হয়েছিল।
আগের শুনানির সময় সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে এই বিষয়ে আদালত ধমক দিলে , পরবর্তী হলফনামায়, বালকৃষ্ণ এবং রামদেব স্বীকার করেন যে হলফনামা শপথ নেওয়ার একদিন পরে টিকিটগুলি কাটা হয়েছিল ।
আদালত এখানে পর্যবেক্ষণ করেন যে , হলফনামা শপথ করা হয়েছিল (30 মার্চ), সেখানে এমন কোনও টিকিট ছিল না। এই ঘটনা ভীষণই অনৈতিক প্রতিবাদীরা তাদের ব্যক্তিগত উপস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মিথ্যা দাবি করেছে।
এই ঘটনাচক্রে, আদালত উত্তরাখণ্ডের লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার জন্য রাজ্যটিকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছে। বেঞ্চটি জিজ্ঞাসা করেছে কেন এটি মনে করা উচিত নয় যে কর্তৃপক্ষগুলি পতঞ্জলি/দিব্য ফার্মেসির সাথে “হাতে হাত মেলাচ্ছে”, নইলে এরা লাইসেন্স পায় কীভাবে ?
পতঞ্জলির বিরুদ্ধে এই মামলাটি ভারতীয় মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা দায়ের করা একটি পিটিশনের প্রেক্ষিতে হয়েছে, যেখানে পতঞ্জলির বিজ্ঞাপনগুলি এলোপ্যাথিকে আক্রমণ করে এবং নির্দিষ্ট রোগ নিরাময়ের দাবি করে। শীর্ষ আদালতের তিরস্কারের পর, পতঞ্জলি গত নভেম্বরে এই ধরনের বিজ্ঞাপন থেকে বিরত থাকার আশ্বাস দিয়েছিল।
তবে, তার পরও এই বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন চলতে থাকায়, আদালত ফেব্রুয়ারিতে পতঞ্জলি এবং এর এমডির বিরুদ্ধে অবমাননা নোটিশ জারি করেছিল। মার্চ মাসে, অবমাননা নোটিশের জবাব না দেওয়ার কারণে, পতঞ্জলি এমডি এবং বাবা রামদেবের ব্যক্তিগত উপস্থিতির আদেশ দেওয়া হয়েছিল ।
পরবর্তীতে, পতঞ্জলি এমডি একটি হলফনামা দাখিল করেন বলেছেন যে নিন্দনীয় বিজ্ঞাপনগুলি কেবল সাধারণকে অবগত করবার জন্য করা হয়েছিল , কিন্তু ভুলবশত এলোপ্যাথিকে অসম্মান করা হয়েছে । এটি আরও বলা হয় ,পতঞ্জলির মিডিয়া কর্মীরা শীর্ষ আদালতে দেওয়া নভেম্বরের আদেশ (যেখানে অঙ্গীকার দেওয়া হয়েছিল) সম্পর্কে “সচেতন” ছিলেন না।
শেষ শুনানির তারিখে, বাবা রামদেব এবং এমডি বালকৃষ্ণ শারীরিকভাবে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। যদিও বাবা রামদেবের হলফনামা রেকর্ডে ছিল না, আদালত এমডি বালকৃষ্ণের হলফনামা সম্পর্কে তার সংশয় প্রকাশ করে, এটিকে অপ্রত্যাশিত এবং যুক্তিহীন বলে অভিহিত করে।