বাজারে কত রঙের কত নামি দামী ফলের সমাহার! কিন্তু কাঁচা আম ? তাঁর জায়গা আলাদা । কাঁচা আমের সাথে আমাদের শৈশব জড়িয়ে আছে । সেই ভোরে উঠে আম কুড়াবার ধুম , তারপর সেই আম লেবু গোল মরিচ বিটলবণ এসব দিয়ে মেখে খাওয়ার সাথে এক অন্য রকম স্মৃতি মিশে আসে আমাদের সবার জীবনের সাথে । শুধুই কি সেই মধুর স্মৃতি রোমন্থনের জন্যই কাঁচা আম খাওয়া ? তা নয় । কাঁচা টক আমে আছে আমন সব গুণ যা জানলে অবাক হতে হয় ।
আমাদের মা ঠাকুমারা ছোটো থেকেই বাচ্চা মেয়েদের কাঁচা আম খেতে কেন উৎসাহ দিতেন তা হয়তো আমরা জানিনা , কিন্তু তাঁরা জানতেন এই কাঁচা আমে আছে এমন সব গুণ যা বয়ঃসন্ধি থে যৌবন সব ক্ষেত্রেই মেয়েদের জন্য ভীষণ জরুরী । কেন মেয়েদের কাঁচা আম খাওয়াটা এত জরুরী সেটাই একটু জেনে নেওয়া যাক।
ভিটামিন আর খনিজের ভাণ্ডার
কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভরা থাকে! বিশেষ করে ভিটামিন সি, যেটা রোগ ঠেকাতে, ত্বক সুন্দর করতে. আর ঘা শুকোতে বেশ কাজে দেয়। ‘জার্নাল অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্সেস‘ নামের এক জায়গায় ছাপা হয়েছে যে পাকা আমের থেকেও কাঁচা আমে প্রায় দ্বিগুণ ভিটামিন সি থাকে। তাই তো মেয়েদের নানারকম অসুখ-বিসুখ, ত্বকের সমস্যা দূর করতে কাঁচা আম দারুণ কাজ করে।
আয়রন শোষণে সাহায্য করে
মেয়েরা, বিশেষ করে যারা একটু বড় হচ্ছে তাদের শরীরে আয়রনের অভাব দেখা দেওয়ার একটা চান্স থাকে । মাসিকের সময় প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয় , সে জন্য আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয় । কাঁচা আম এই ঘাটতি পূরণে দ্রুত সহায়তা করে ।
কাঁচা আমে থে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি , কাঁচা আমের এই ভিটামিন সি খাবারের মধ্যে যে আয়রন থাকে, সেটা শরীরে শোষিত হতে কাঁচা আম খুব সাহায্য করে। ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ভিটামিন অ্যান্ড নিউট্রিশন রিসার্চ’ -এ একটা লেখা বেরিয়েছিল, যেখানে দেখা গেছে ভিটামিন সি আয়রন শোষণ প্রায় ৬৭% বাড়িয়ে দিতে পারে! খাবারের সাথে কাঁচা আম খেলে, মেয়েরা তাদের শরীরে আয়রনের মাত্রা ঠিক রাখতে পারে, আর রক্তাল্পতা হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।
পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি
অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে কাঁচা আমের ওই টক স্বাদ আমাদের পিত্ত থেকে পিত্তরস বের হতে সাহায্য করে, যার ফলে হজম ক্ষমতা বাড়ে। হজম যদি ঠিক থাকে, তাহলে খাবার থেকে পুষ্টি ঠিক মতো পাওয়া সম্ভব হয় ফলে ওজন ঠিক থাকে আর পেট ফোলা ভাবও কমে যায় । এই সমস্যাগুলো মেয়েদের বেশি হয় বলে, কাঁচা আম সত্যিই তাদের জন্য আশীর্বাদ!
হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায়
কাঁচা আমে এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলো আমাদের হরমোনের ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। অনেক গবেষকের ধারণা আমের মধ্যে থাকা ফাইটোকেমিক্যালগুলো ইস্ট্রোজেন রিসেপ্টরের সাথে যোগাযোগ করে ফলে হরমোনের তারতম্য ঠিক থাকে। মাসিকের সময়ের যন্ত্রণা থেকে শুরু করে PCOS (পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম) – মেয়েদের যে সমস্ত সমস্যার সাথে হরমোনের যোগ আছে, সেগুলো প্রতিরোধ করতে কাঁচা আম দারুণ ভূমিকা নেয়।
ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায়
কাঁচা আমে থাকা ম্যাঞ্জিফেরিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। ‘জার্নাল অফ ডার্মাটোলজিক্যাল সায়েন্স’ -এর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বুড়িয়ে যাওয়ার ছাপ কমায় এবং ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি সহ নানান পরিবেশের খারাপ প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেয়। মেয়েরা ত্বক নিয়ে কত ঝামেলায় পড়ে! সেখানে কাঁচা আম তো তাদের কতটা সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে তা এর থেকে সহজেই বোঝা যায় ।
মেয়েরা কাঁচা আম শুধু মজা করে খাবে না, এটা তাদের শরীরের জন্যও অনেক উপকারী। এই আম তাদের শরীরের ভেতরকার যত্ন নেয়, হরমোন ঠিক রাখে, হজম ঠিক রাখে, ত্বক সুন্দর করে। তাই সবাইকেই কাঁচা আম খাওয়ার অভ্যেসটা গড়ে তোলা জরুরী ।