নারীর প্রজনন ক্ষমতা বয়সের সঙ্গে পরিবর্তিত হয় এবং এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণত, নারীর প্রজনন ক্ষমতা সর্বোচ্চ থাকে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত। এই সময়কালে ডিম্বাণুর গুণমান এবং সংখ্যা উভয়ই সর্বোৎকৃষ্ট থাকে, যা গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। তবে, ৩০ বছর বয়স পার করার পর থেকে প্রজনন ক্ষমতা কমতে শুরু করে এবং ৩৫ বছর বয়সের পর এটি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে থাকে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাণুর সংখ্যা এবং গুণমান উভয়ই কমতে থাকে। ৪০ বছর বয়সের পর ডিম্বাণুর গুণমান এবং সংখ্যা এতটাই কমে যায় যে গর্ভধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। এই সময়কালে ডিম্বাণুর জেনেটিক অস্বাভাবিকতা এবং ক্রোমোজোমাল সমস্যা বৃদ্ধি পায়, যা গর্ভপাতের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে।
বয়সের সঙ্গে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাশয়ের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং ডিম্বাণুর উৎপাদন হ্রাস পায়। দ্বিতীয়ত, হরমোনাল পরিবর্তনগুলি প্রজনন ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে, এস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরনের মাত্রা হ্রাস পেলে ডিম্বাণুর গুণমান এবং জরায়ুর কার্যক্ষমতা কমে যায়। তৃতীয়ত, বয়সের সঙ্গে বিভিন্ন শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন যেমন, ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি প্রজনন ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
এছাড়াও, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জীবনধারার পরিবর্তন যেমন, ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন, মানসিক চাপ ইত্যাদি প্রজনন ক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে পারে। ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন ডিম্বাণুর গুণমান এবং জরায়ুর কার্যক্ষমতা হ্রাস করে, যা প্রজনন ক্ষমতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। মানসিক চাপও হরমোনাল ভারসাম্যকে ব্যাহত করে এবং প্রজনন ক্ষমতাকে হ্রাস করতে পারে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
নারীর প্রজনন ক্ষমতা ধরে রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক পুষ্টি গ্রহণ শরীরের প্রজনন প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে। প্রোটিন, ভিটামিন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলি প্রজনন ক্ষমতা বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রোটিন শরীরের কোষ গঠনে সহায়তা করে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাংস, মাছ, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার এবং বাদাম প্রোটিনের ভালো উৎস। এছাড়া, উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের জন্য মসুর ডাল, চানা এবং সয়াবিনও খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
ভিটামিন প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। ভিটামিন সি এবং ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর গুণগত মান বজায় রাখতে সহায়ক। এই ভিটামিনগুলি কমলালেবু, স্ট্রবেরি, বাদাম এবং সূর্যমুখী তেল থেকে পাওয়া যায়। ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যালোক থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় এবং এছাড়াও ডিমের কুসুম, মাশরুম এবং ফ্যাটি ফিশে ভিটামিন ডি বিদ্যমান।
ফল এবং সবজির মধ্যে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। বিশেষ করে বেরি, পালং শাক, ব্রকলি এবং গাজর প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি শরীরের ক্ষতিকর মুক্ত মৌলগুলির বিরুদ্ধে কাজ করে এবং ডিম্বাণুর গুণগত মান উন্নত করে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি পর্যাপ্ত জল পান, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার এবং নিয়মিত ব্যায়াম প্রজনন ক্ষমতা ধরে রাখতে সহায়ক হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে নারীরা তাদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন।
শারীরিক ব্যায়াম
নিয়মিত শারীরিক 🔎︎ ব্যায়াম প্রজনন ক্ষমতা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যায়াম শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে এবং হরমোন সমন্বয় বজায় রাখতে সহায়তা করে। স্বাস্থ্যকর হরমোন ব্যালান্স প্রজনন ক্ষমতার জন্য অপরিহার্য। ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় যা ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিম্বাশয়ে পুষ্টি এবং অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায়, যা ডিম্বাণু উৎপাদন উন্নত করতে পারে।
নিয়মিত কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, এবং সাইকেল চালনা প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করতে বিশেষভাবে কার্যকরী। এই ধরনের ব্যায়াম শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যা প্রজনন ক্ষমতার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা প্রজনন হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে, ফলে ডিম্বাণু উৎপাদনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ইয়োগা এবং পাইলেটসের মতো কম প্রভাবের ব্যায়ামও প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এই ব্যায়ামগুলি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, যা হরমোনাল ব্যালান্স বজায় রাখতে সহায়ক। মানসিক চাপ প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে, তাই মানসিক চাপ কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, এই ব্যায়ামগুলি পেলভিক অঞ্চলের পেশী শক্তিশালী করতে সহায়ক, যা প্রজনন অঙ্গের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে।
ব্যায়ামের সময় নিয়মিত এবং সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি। অতিরিক্ত ব্যায়াম বা অতিরিক্ত শারীরিক চাপ প্রজনন ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, ব্যক্তিগত শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যায়ামের পরিকল্পনা করা উচিত এবং প্রয়োজনে একজন ফিটনেস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পরিবেশ এবং মানসিক স্বাস্থ্য
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ প্রজনন ক্ষমতার উপর সুস্পষ্ট প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ নারীর শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা প্রজনন ক্ষমতার হ্রাসের কারণ হতে পারে। উদ্বেগ এবং চাপ প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যাগুলির কারণ হতে পারে, যেমন অনিয়মিত মাসিক চক্র, ওভ্যুলেশন সমস্যা এবং এমনকি ইনফার্টিলিটি। তাই মনোরম পরিবেশ এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
প্রথমত, মানসিক চাপ কমাতে দৈনন্দিন জীবনে যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এই প্রাচীন পদ্ধতিগুলি মন এবং শরীরকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে এবং মানসিক চাপ কমিয়ে প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, পর্যাপ্ত এবং নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। ঘুমের অভাব শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা প্রজনন ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন।
তৃতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে এবং প্রজনন স্বাস্থ্য ভালো থাকে। অতিরিক্ত কফি এবং অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এগুলি মানসিক চাপ বাড়াতে পারে।
মনোরম পরিবেশ তৈরি করতে ঘরের সাজসজ্জায় সবুজ গাছপালা এবং ফুল রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। সবুজ গাছপালা শুধু পরিবেশকে মনোরম করে তোলে না, বরং মানসিক চাপও কমাতে সাহায্য করে।
বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, প্রিয় শখের কাজ করা এবং প্রয়োজনীয় সময়ে বিরতি নেওয়া মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা করা এবং বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করলে মানসিক চাপ কমে এবং মন ভালো থাকে।
সুতরাং, মানসিক চাপ কমিয়ে এবং মনোরম পরিবেশ তৈরি করে নারীর প্রজনন ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাকৃতিক উপাদান ও ঔষধ
প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান ও ঔষধি গুণাবলী অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। ভেষজ উপাদানগুলো বহু প্রাচীনকাল থেকেই প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো শরীরের হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় এবং প্রজনন অঙ্গগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
প্রথমেই, শতমূলী একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ পদার্থ যা নারীর প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। শতমূলী হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় এবং উর্বরতা বাড়াতে সহায়তা করে। এটি বিশেষত বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ কমাতে সহায়ক, যা প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। শতমূলী চা বা ক্যাপসুল আকারে গ্রহণ করা যেতে পারে।
মধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। মধুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে যা শরীরের হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খাওয়া প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
অশ্বগন্ধা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উপাদান যা প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি শরীরের স্ট্রেস কমাতে এবং হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। অশ্বগন্ধা পাউডার বা ক্যাপসুল আকারে গ্রহণ করা যেতে পারে।
জিঙ্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। জিঙ্ক হারমোনাল ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক এবং ডিম্বাণু উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার যেমন কুমড়ার বীজ, কাজু, এবং চিয়া বীজ প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
নারীর প্রজনন ক্ষমতা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঘুমের অভাব সরাসরি প্রজনন ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যথেষ্ট ঘুম না হলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে, যা প্রজনন ক্ষমতার জন্য ক্ষতিকারক।
ঘুমের সময় শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটে, যা প্রজনন ক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়ক। বিশেষ করে, গভীর নিদ্রার সময় শরীরে ফোলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH) এবং ল্যুটিনাইজিং হরমোন (LH) উৎপন্ন হয়, যা ডিম্বাণু উৎপাদন ও ঋতুস্রাব নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এই হরমোনগুলির উৎপাদন কমে যেতে পারে এবং প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।
প্রজনন ক্ষমতা বজায় রাখতে ঘুমের গুণগত মান উন্নত করার কয়েকটি প্রয়োজনীয় টিপস হল:
- নিয়মিত ঘুমের রুটিন: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে উঠার অভ্যাস গড়ে তোলা। এটি শরীরের জৈবিক ঘড়িকে সুসংহত রাখতে সাহায্য করে।
- আরামদায়ক পরিবেশ: ঘুমের ঘরটি শীতল, অন্ধকার এবং শান্ত থাকা উচিত। প্রয়োজন হলে হালকা মিউজিক বা অরোমাথেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ইলেকট্রনিক ডিভাইস এড়ানো: ঘুমের কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি ইত্যাদি ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত।
- শরীরচর্চা: নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। তবে, ঘুমের ঠিক আগে ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলা উচিত।
- সঠিক খাদ্যাভ্যাস: ঘুমের আগে ভারী খাবার বা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত।
সুতরাং, প্রজনন ক্ষমতা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের গুণগত মান উন্নত করার জন্য উপরের টিপসগুলি অনুসরণ করা উচিত।
ওজন নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত ওজন নারীর প্রজনন ক্ষমতার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, যা ওভুলেশনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। এর ফলে প্রজনন ক্ষমতা কমে যেতে পারে। ওজন বৃদ্ধি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (পিসিওএস) এর মতো অবস্থা তৈরি করে, যা প্রজনন ক্ষমতার আরও ক্ষতি করতে পারে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে প্রথমেই আসে পুষ্টিকর এবং ব্যালান্সড ডায়েট। প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার যেমন ফল, শাকসবজি, বাদাম এবং লীন প্রোটিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ট্রান্স ফ্যাট এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এগুলো শরীরে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
নিয়মিত ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি কার্যকরী মাধ্যম। এর মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা এবং সাইক্লিং অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এছাড়াও, যোগব্যায়াম এবং পাইলেটসের মতো লো-ইম্প্যাক্ট ব্যায়ামও অত্যন্ত উপকারী। ব্যায়াম শুধুমাত্র ওজন কমাতে সহায়ক নয়, এটি শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সহায়ক।
ওজন কমানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, পর্যাপ্ত ঘুম ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
এভাবে, সুস্থ খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম প্রজনন ক্ষমতা ধরে রাখতে সহায়ক হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন
নারীর প্রজনন ক্ষমতা বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবেই কমে আসে। তবে ধূমপান, মদ্যপান, এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ গ্রহণের ফলে এই প্রক্রিয়া দ্রুততর হতে পারে। ধূমপানের ফলে শরীরে নিকোটিন এবং অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ প্রবেশ করে যা ডিম্বাণুর গুণমান ও পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া, ধূমপানের ফলে জরায়ুর গর্ভধারণের ক্ষমতাও হ্রাস পায়।
মদ্যপান প্রজনন হ্রাসের একটি বড় কারণ। অতিরিক্ত মদ্যপান হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা ডিম্বাণু উৎপাদনে প্রভাব ফেলে। মদ্যপানের ফলে অস্বাভাবিক মাসিক চক্র, ডিম্বাণুর গুণমানের অবনতি, এবং গর্ভধারণের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
এর পাশাপাশি, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ এবং বিষাক্ত উপাদান যেমন কীটনাশক, প্লাস্টিকের রাসায়নিক, এবং ভারী ধাতু প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। এই ধরনের পদার্থের সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকা নারীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
প্রজনন ক্ষমতা ধরে রাখতে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে। প্রথমত, ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকা উচিত। যারা ইতোমধ্যে এই অভ্যাসে অভ্যস্ত, তাদের জন্য ধীরে ধীরে এই অভ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পেশাদার পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। অর্গানিক খাবার, তাজা শাকসবজি, এবং প্রাকৃতিক উপাদানসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত। কীটনাশক মুক্ত খাবার বেছে নেওয়া এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনা উচিত।
তৃতীয়ত, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ কমানোর জন্য যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন প্রজনন ক্ষমতা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।