আজ সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে ২০২৪ সালের জন্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) এবং সেই সংক্রান্ত নিয়মাবলীর বিরুদ্ধে দায়ের করা একাধিক মামলার জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিলেন । প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্রর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চটি শুনানি ৯ এপ্রিল পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়, সরকারকে অনেকগুলি মামলা এবং স্থগিতাদেশের আবেদনের জবাব দেওয়ার জন্য সময় দেয়।
কেন্দ্রের প্রতিনিধি সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন ২৩৭টি মামলার জবাব দেওয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জের এবং বিশেষ করে CAA বাস্তবায়নের উপর ২০টি স্থগিতাদেশের আবেদনের জবাব দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময়ের দাবি করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে এই আইনটি কারো নাগরিকত্ব কেড়ে নেয় না এবং এর সম্পূর্ণ জবাব দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময়ের দাবি করেন।
সরকারকে নোটিশ জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি জোরালো বিতর্ক শুরু হয়, যেখানে কাপিল সিবাল এবং ইন্দিরা জয়সিং মতো বরিষ্ঠ আইনজীবীরা সলিসিটর জেনারেলের জবাব দেওয়ার জন্য চাওয়া সময়সীমার বিরুদ্ধে জোরালো আপত্তি জানান। সিবাল, স্থগিতাদেশের আবেদনগুলি দ্রুত মোকাবেলা করার কতটা জরুরি ও প্রয়োজন তাঁর উপরে বিশেষ জোর দেন। তিনি বলেন যে প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হলে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত কাজ অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারে যেটা পরে আর ফেরানো সম্ভব হবেনা । একইভাবে, জয়সিং আদালতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে অন্তর্বর্তী সময়ে নাগরিকত্ব প্রদানের উপর উদ্বেগ প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি ভোটাধিকারের উপর এর সম্ভাব্য প্রভাবের উপর জোর দেন।
আলোচনায় সিএএ-র সার্বিক প্রভাব এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (NRC) থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিদের জন্য এর প্রভাব সম্পর্কেও আলোচনা হয়। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায় যেখানে ধর্মীয় ভিত্তিতে বৈষম্যের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে । মামলাকারীদের আইনজীবীরা যুক্তি দেন যে সিএএ বাস্তবায়ন হলে এনআরসি অনুযায়ী তাদের নাগরিকত্বের আওতার বাইরে রেখে দেওয়া হবে । মামলাকারীদের আইনজীবীরা যুক্তি দেন যে সিএএ বাস্তবায়ন হলে এনআরসি অনুযায়ী নাগরিকত্বের আওতার বাইরে পড়া মুসলিম ব্যক্তিদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ হতে পারে।
সিএএ পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে অ-মুসলিম অভিবাসীদের জন্য নাগরিকত্বের পথ দ্রুত করার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে, মুসলিমদের সুপরিকল্পিত ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে , যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের মূল ভাবনাকে অসম্মান করে ।
সিএএ এবং এর নিয়মাবলীর উপর চলমান আইনি লড়াই ভারতের নাগরিকত্ব, অভিবাসন এবং ধর্মীয় পরিচয়ের জটিল সমীকরণের উপরে দাঁড়িয়ে । তাই আগামীতে সুপ্রিম কোর্টের এই বিষয়ে চূড়ান্ত রায় নিঃসন্দেহে দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।