শিশুকালে সকলেরই অসুখ-বিসুখ হয়েই থাকে। এসব ছোট ছোট অসুবিধা একদিকে যেমন শিশুর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরী করে দেয়, তেমনি অভিভাবক হিসেবে আপনাকেও বেশ দায়িত্বশীল করে তোলে। তাই চেনা-অচেনা বিভিন্ন সমস্যা, তার লক্ষণ, এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ। তবে সবসময় মনে রাখবেন, নির্ভুল রোগ নির্ণয় ও তার চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি।
চলুন জেনে নেওয়া যাক সবচেয়ে পরিচিত ১০টি শৈশব রোগ, তাদের উপসর্গ, এবং কিছু সাধারণ প্রতিকার সম্পর্কে:
১. সর্দি: নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশি, হাঁচি, গলা ব্যথা, এই পরিচিত লক্ষণগুলো সর্দির জন্য দায়ী। এই ভাইরাস ঘটিত রোগটি সাধারণত এক সপ্তাহের থেকে দশ দিনের মধ্যেই সেরে যায়।
চিকিৎসা: বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত তরল পান রোগ সারাতে সহায়ক। গরম পানীয় গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
২. জ্বর: শরীরের তাপমাত্রা যখন ১০০.৪° ফারেনহাইট (৩৮° সেন্টিগ্রেড) এর উপরে ওঠে, তাকে আমরা জ্বর বলি। ফলে শিশু গরম অনুভব করতে পারে, কম খেতে চাইতে পারে, এবং আগের মত চঞ্চল নাও হতে পারে। জ্বর শরীরের বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার লক্ষণ।
চিকিৎসা: ভালো করে বিশ্রাম নেওয়া, প্রচুর তরল পান, এবং প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ জ্বর কমাতে সাহায্য করতে পারে। জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হলে বা ঘন ঘন হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৩. কানে ব্যথা: প্রচণ্ড কানে ব্যথা, জ্বর, কান থেকে পুঁজ বেরোনো – এগুলো কানের ব্যথার অন্যতম উপসর্গ। সর্দি, সাইনাসের সমস্যা, বা দাঁত কানে যন্ত্রণা ছড়িয়ে দিতে পারে।
চিকিৎসা: ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্য আপনার শিশু বিশেষজ্ঞ অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথার ওষুধ ও গরম সেঁকও সাহায্য করতে পারে।
৪.পেট ব্যথা:, খাবারের সমস্যা, ফুড পয়জনিং, ভাইরাল ইনফেকশন পেটের গোলযোগের অন্যতম কারণ। বমি, ডায়রিয়া, বা কোষ্ঠকাঠিন্যও পেট ব্যথার সাথে হতে পারে।
চিকিৎসা: এখানে জলশূন্যতা রোধ করাটা খুব জরুরী। বিশ্রাম ও হাল্কা খাবার এই সমস্যা কমাতে পারে। উপসর্গের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ওষুধের পরামর্শ দেবেন।
৫. কাশি: শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখতে কাশি খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে হাল্কা সংক্রমণ থেকে শুরু করে এলার্জি, এমনকি এ্যাজমা পর্যন্ত নানা কারণে শিশুদের কাশি হতে পারে।
চিকিৎসা: কাশির পেছনের কারণ বের করতে হবে। চার বছরের কম বয়সী শিশুদের কাশির ওষুধ সহজে দেওয়া উচিত নয়। প্রচুর বিশ্রাম, আদা মিশ্রিত গরম পানীয় সাময়িকভাবে কাশি কমাতে পারে।
৬. এলার্জি: এলার্জি শরীরের কিছু অ্যালার্জেনের প্রতি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া, এর ফলে হাঁচি, নাক বন্ধ, চোখে চুলকানি, ফুসকুড়ি ইত্যাদি হতে পারে।
চিকিৎসা: চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট এলার্জি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে কিছু পরীক্ষা করতে পারেন। অনেকসময় এলার্জেন এড়িয়ে চলাই সুস্থ থাকার উত্তম উপায়, আবার ক্ষেত্রবিশেষে ঔষধেরও প্রয়োজন হতে পারে।
৭. চোখ উঠা (কনজাংকটিভাইটিস): চোখের ভেতরের পাতা লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি, এবং চোখ থেকে পুঁজ বা পানি পড়া চোখ ওঠার লক্ষণ। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ইত্যাদি থেকে এই রোগটি ছড়াতে পারে।
চিকিৎসা: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাল কনজাংকটিভাইটিস নিজে থেকেই সারে যায়। ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক আইড্রপের প্রয়োজন হতে পারে।
৮. ব্রংকিওলাইটিস রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস(RSV) থেকে এই রোগের সৃষ্টি। হাঁচি-কাশি, শ্বাস নিতে কষ্ট, বুকের ভেতর ‘হুইজ’ শব্দ – এগুলো ব্রংকিওলাইটিস এর উপসর্গ।
চিকিৎসা: ভেজা বাতাস স্বস্তি দিতে পারে। জলশূন্যতা এড়ানোর জন্য স্যালাইন বা তরল খাবার প্রয়োজন। কখনও কখনও অক্সিজেন থেরাপির সাহায্যও নিতে হতে পারে।