মাইক্রোওয়েভ ওভেন রান্নাঘরের এক অতি পরিচিত যন্ত্র। খুব তাড়াতাড়ি খাবার গরম করার জন্য এর জুড়ি নেই। বরফে জমা খাবার মিনিট কয়েকের মধ্যেই খাওয়ার উপযুক্ত করে ফেলা যায়। তবে এই দ্রুততা নিয়েই অনেকের মনে নানান প্রশ্ন ওঠে, এর স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব নিয়ে সন্দেহ জাগে – সুবিধার বিনিময়ে কি আমরা খাবারের পুষ্টিকে বিসর্জন দিচ্ছি?
কীভাবে কাজ করে মাইক্রোওয়েভ
মাইক্রোওয়েভ যেভাবে কাজ করে তা হলো, এটি খাবারের ভেতরে থাকা অণুগুলিকে উত্তেজিত করে দেয় বিশেষ ধরণের তরঙ্গের সাহায্যে। তাতে এই অণুগুলি কাঁপতে শুরু করে, তাপের সৃষ্টি করে আর খাবারটি ভেতর থেকে বাইরের দিকে রান্না হয়ে যায়। তবে এটা ঠিক যে যেকোনো রান্নার পদ্ধতিতেই খাবারের পুষ্টিগুণে কিছুটা হলেও বদল আসে- সেটা সেদ্ধ করা হোক, ভাজা হোক বা রোস্ট করা হোক। কিন্তু অনেকে যেমন ভাবেন, তার থেকে কম ক্ষতিকর মাইক্রোওয়েভে রান্না।
রান্নার পর পুষ্টিগুণ কেমন থাকে
গবেষণায় দেখা গেছে যে মাইক্রোওয়েভ অন্য রান্নার পদ্ধতির তুলনায় অনেক সময় কম সময় নেয় আর তাপমাত্রাও কম থাকে। এর ফলে কিছু খাবারের পুষ্টিগুণ বেশ ভালোভাবেই ধরে রাখা যায়। যেমন, যেসব পদ্ধতিতে জলের ব্যবহার দরকার, যেমন সেদ্ধ করার সময়, সেখানে ভিটামিন সি বা বি-জাতীয় কিছু ভিটামিন জলে গলে বেরিয়ে যায়। সে তুলনায় মাইক্রোওয়েভে রান্নার সময় কম আর জলের ব্যবহারও কম, ফলে এইসব ভিটামিন ভালোভাবেই ধরে রাখা যায়।
তাছাড়া, গাজর বা টমেটোতে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, রান্না হলে সেগুলি অনেক বেশি কার্যকর হয়ে ওঠে শরীরের জন্য। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মিষ্টি আলু মাইক্রোওয়েভ করলে তাতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন (যা থেকে শরীরে ভিটামিন এ তৈরি হয়) আরও বেড়ে যায়। তেমনই টমেটোতে থাকা লাইকোপিন, যা অনেক রোগ প্রতিরোধের জন্য উপকারী, সেটাও মাইক্রোওয়েভের পর আরও সহজে শরীরে শোষিত হয়।
কোথায় সাবধান থাকা দরকার
মাইক্রোওয়েভ ওভেন যদিও আধুনিক প্রযুক্তির এক চমৎকার, তবু অনেকেই এর নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় পোষণ করেন। যেমন, কেউ কেউ বলেন এটি চালু থাকা অবস্থায় এর খুব কাছে দাঁড়ানো উচিত নয়। মাইক্রোওয়েভ ওভেন বানানো হয় কঠোর নিরাপত্তার মানদণ্ড মেনে, যাতে বাইরে থেকে রেডিয়েশন ফাঁস হতে না পারে। যদিও ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা খুব কম, তবে তারপরও ইউ.এস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) সুপারিশ করে মেশিনটি চালু থাকাকালীন বেশ খানিকটা দূরে থাকাই ভালো, যদি কোনওভাবে অপ্রত্যাশিত ক্ষতি হয়েও যায়।
মোদ্দা কথা, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করা ভালোই, আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ রান্নার থেকে একটু বেশিই পুষ্টিকর। শুধু বুদ্ধি করে ব্যবহার করতে হবে, যেমনটা রান্নার অন্য যেকোনো সরঞ্জামের ক্ষেত্রে করি! মাইক্রোওয়েভের সুবিধে তো আছেই, তবে খাবার গরম হওয়ার জন্য অধীর হয়ে এর খুব কাছে বসে থাকাও ঠিক হবে না!