সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণুর সংখ্যা ( স্পার্ম কাউন্ট ) এবং শুক্রাণুর গুণগত মান উদ্বেগজনক হারে কমেছে , এই সমস্যা কেবল শুধু ভারতীয়দের মধ্যেই ঘটছে এমন নয় সারা পৃথিবী জুড়েই এক সংকট দ্রুতগতিতে বাড়ছে ।
শুক্রাণুর সংখ্যা বলতে বীর্যের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে উপস্থিত শুক্রাণুর সংখ্যাকে বোঝায়। এটি পুরুষ সন্তান জন্মদান ক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুসারে, প্রতি মিলিলিটার বীর্যে ১৫ মিলিয়নেরও বেশি শুক্রাণু স্বাভাবিক বলে বিবেচিত হয়। যাইহোক, গবেষণায় শুধুমাত্র ভারতে নয়, বিশ্বব্যাপী শুক্রাণুর সংখ্যা কমার প্রবণতা দেখা গেছে।
শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাসের কারণ
ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস বিভিন্ন কারণের জন্য দায়ী করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
- পরিবেশগত কারণ: ভারী ধাতু, কীটনাশক এবং শিল্প রাসায়নিকের মতো পরিবেশে দূষক এবং রাসায়নিকের সংস্পর্শে শুক্রাণুর গুণমান এবং পরিমাণে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
- জীবনধারার পছন্দ: ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, মাদকদ্রব্যের ব্যবহার এবং স্থূলতা শুক্রাণুর সংখ্যা কমাতে পারে। এছাড়াও, বসে থাকা কাজ বা ডেস্কজব এই ধরণের সমস্যার একটা বড় কারণ ।
- চাপ: আজকের সমাজে দ্রুতগতির এবং উচ্চ মানসিক চাপের জীবনযাত্রা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং শুক্রাণু উৎপাদন হ্রাস করতে পারে।
- খাদ্যতালিকাগত কারণ: জিঙ্ক, সেলেনিয়াম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো শুক্রাণুর স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবযুক্ত খাদ্য শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস করতে পারে।
- চিকিৎসাগত অবস্থা: ভেরিকোসিল, ইনফেকশন এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতার মতো কিছু চিকিৎসাগত সমস্যা, সেইসাথে কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপির মতো চিকিৎসা শুক্রাণু উৎপাদনকে প্রভাবিত করতে পারে,গুনগত মানও কমাতে পারে ।
শুক্রাণুর সংখ্যা কম হলে করণীয়
শুক্রাণুর সংখ্যা, গুণগত মান বাড়ানো এবং সামগ্রিক প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করার বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে:
- জীবনধারায় পরিবর্তন: জীবনযাত্রা পরিবর্তন এই সমস্যতে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ধূমপান ত্যাগ করা এবং মদ্যপান কমানো, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপে জড়িত থাকা।
- খাদ্যতালিকাগত সমন্বয়: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া শুক্রাণুর স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে। শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজগুলির চমৎকার উৎস হল ফল, শাকসবজি, বাদাম ও বীজ।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: যোগব্যায়াম, ধ্যান এবং কাউন্সেলিংয়ের মতো কৌশলগুলি চাপের মাত্রা পরিচালনা করতে সাহায্য করতে পারে, যার ফলে শুক্রাণুর সংখ্যা উন্নত হতে পারে।
- বিষাক্ত পদার্থ এড়িয়ে চলা: পরিবেশগত টক্সিন ও রাসায়নিকের সংস্পর্শ কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- চিকিৎসা: যারা চিকিৎসাগত সমস্যার দ্বারা প্রভাবিত বা আরও সহায়তার প্রয়োজন, তাদের জন্য একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস একটি বহুমুখী সমস্যা যা মোকাবিলায় ব্যাপক সচেতনতার প্রয়োজন।