ডিজিটাল যুগে মোবাইল ফোন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যোগাযোগ তো বটেই, এখন ওই ছোট্ট যন্ত্রই ইন্টারনেটের দুনিয়ার দরজাও খুলে দেয়। যদিও প্রাপ্তবয়স্করা কিছুটা হলেও ডিজিটাল জগতটা নিয়ন্ত্রণের সাথে ব্যবহার করেন, সেই আলোর ঝলকানিতে মুগ্ধ হয়ে শিশুরা প্রায়ই মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুর বিকাশ, ঘুমের ব্যাঘাত, এমনকি সামাজিক দক্ষতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। আপনার সন্তানও যদি সবসময় মোবাইলে আটকে থাকে, তবে একা নন আপনি। আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে সন্তানকে মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে দূরে রাখা যায় ও প্রযুক্তির সঙ্গে সুষম সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়।
আগে নিজেকে বদলাতে হবে
কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করার আগে, বুঝুন নিষিদ্ধ ফল সবসময়ই বেশি আকর্ষণীয় হয়। বরং ডিজিটাল পথপ্রদর্শকের ভূমিকা নিন। শিশুরা জন্মগত ভাবেই শিখতে চায়, আপনার প্রযুক্তি ব্যবহারই তাদের কাছে নজির হতে পারে। তাদের সাথে স্ক্রিন ভাগ করে নিন, যা দেখবেন একসাথে দেখুন । এতে শুধু তারা কী দেখছে সেটাই নজরে রাখতে পারবেন না, স্ক্রিন টাইমই হয়ে উঠবে মজার সময়।
বিকল্প খুঁজে বের করুন
মোবাইল ব্যবহারে সীমা আনার অন্যতম কার্যকরী উপায় বাচ্ছাকে বিকল্প খুঁজে দেওয়া। মোবাইলের বাইরের জগৎ কত বিশাল! বাইরে খেলতে উৎসাহ দিন, শরীরচর্চা ও সামাজিক দক্ষতা বাড়বে। আঁকা, বই পড়া, বাদ্যযন্ত্র বাজানোর মতো শখে উৎসাহিত করুন, ওগুলোও যে কত মজার, তা বুঝতে পারবে।
টেক-ফ্রি জোন তৈরি করুন
বাড়িতে কিছু জায়গা, যেমন খাবারের টেবিল বা শোবার ঘর, সম্পূর্ণ মোবাইল ব্যবহার বন্ধ রাখুন। তা মেলামেশা বাড়াবে, ভালো ঘুম হবে। আর খাবার সময়, বা ঘুমোতে যাওয়ার একঘন্টা আগে, মোবাইল বন্ধ রাখতেই হবে।
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করুন
হাস্যকর শোনালেও, প্রযুক্তিকেই কাজে লাগান স্ক্রিন টাইম ঠিক রাখতে। এমন অ্যাপ আছে যা দিয়ে বাবা-মা তাদের সন্তানের মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এতে কোন কনটেন্টে ঢুকতে পারবে, কতক্ষণ মোবাইল ব্যবহার করবে, সবই স্থির করতে পারবেন। এতে নিয়ম নিয়ে আপনি সন্তানের সাথে আলোচনা করতে পারবেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় তাকেও অংশীদার করতে পারবেন।
নিজেই উদাহরণ হয়ে উঠুন
শিশুরা বড়োদের কাজ অনুকরণ করে। তাই নিজের মোবাইল ব্যবহার নিয়ে ভাবুন, আপনার আচরণ থেকেই সে বার্তা পায়। মুখে মুখে যোগাযোগকে গুরুত্ব দিন, মোবাইল যে আপনার জীবনের কেন্দ্র নয়, তা দেখান। সন্তানও তখন দায়িত্ব নিয়ে মোবাইল ব্যবহার করবে।
খোলামেলা আলোচনা করুন
সবার শেষে, খোলামেলা আলোচনা খুব জরুরি। সন্তানের সাথে কথা বলুন, অতিরিক্ত মোবাইল দেখা টাইমের কত অপচয় তা বোঝান , পরিমিত ব্যবহারের গুরুত্ব সম্পর্কে তাকে সচেতন করুন। সময়ের সঠিক ব্যবহার, প্রযুক্তির প্রভাবে সম্পর্কে সমালোচনামূলক চিন্তা করতে শেখান।
সন্তানদের মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার আটকানোর জন্য লড়াই করতে হবে না। একটু সৃজনশীলতা, বোঝাপড়া, ধৈর্য্য হলেই তাদের ডিজিটাল ও বাস্তব জগতের মধ্যে সুন্দর ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে শেখাতে পারবেন। এতে শিশুরা প্রযুক্তির সুফল পাবে কিন্তু আসক্ত হবে না, এবং প্রযুক্তিকে জ্ঞানের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে জীবনকে সমৃদ্ধ করে তুলবে।