কনকনে শীতের দিনে এক গ্লাস ঠান্ডা জল খেলে কীভাবে শরীরের ভেতরটা হিম হয়ে যায়? কেন তা কি কখনও ভেবে দেখেছেন? তাপমাত্রার তারতম্য কীভাবে আমরা বুঝতে পারি, সেই বিষয়ে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে আসছেন।তবে আগে থেকেই বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রোটিনের ভূমিকাকে চিহ্নিত করেছিলেন এসবের জন্য। কিন্তু তীব্র শীত, অর্থাৎ ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রা আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে বুঝতে পারে, তা এতদিন সত্যিই একটা রহস্যই ছিল।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সম্প্রতি এই রহস্যের সমাধানে সফল হয়েছেন। নিউরোসায়েন্টিস্ট শন জু-এর নেতৃত্বাধীন এই গবেষণায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন চিহ্নিত হয়েছে, যাকে ‘GluK2’ বলা হয়। গবেষকরদের মতে এই প্রোটিনটিই স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে শীতলতার অনুভূতির জন্য সবথেকে বেশি ক্ষমতাশালী।
২০১৯ সালে জু-এর গবেষণাগারেই প্রথম এই চমকপ্রদ আবিষ্কারটি হয়। ‘Caenorhabditis elegans’ নামে পরিচিত ক্ষুদ্র ক্রিমির ওপর গবেষণার মাধ্যমে তারা প্রথম একটি শীত-সংবেদনকারী রিসেপ্টর প্রোটিন চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বিজ্ঞানীরা জানত যে বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী, যেমন ইঁদুর এবং মানুষের জিনগত বিন্যাসের সাথে এই ক্রিমির যথেষ্ট মিল রয়েছে। তাই তারা অনুমান করেন, সম্ভবত এই GluK2 স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রেও একইরকম ভূমিকা পালন করে।
GluK2 নিয়ে জিনবিহীন ইঁদুরের ওপর পরীক্ষাও চালানো হয়। দেখা যায় এই ইঁদুরগুলি গরম, উষ্ণ এবং মৃদু শীতল তাপমাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখালেও তীব্র শীতে কোনও প্রতিক্রিয়া দেখায় না। GluK2 জিনের অনুপস্থিতিই এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, ঠাণ্ডা বোঝার ক্ষেত্রে GluK2 গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আকর্ষণীয় ব্যাপার হল, GluK2 আমাদের মস্তিষ্কের নিউরনে পাওয়া যায় – নিউরনগুলি রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে মস্তিষ্কের ভেতর তথ্য আদানপ্রদান ঘটায়। এছাড়াও স্নায়ুতন্ত্রের সেন্সরি নিউরনেও GluK2 পাওয়া যায়। তাই ধারণা করা হয় তাপমাত্রা সংক্রান্ত সংকেত ব্যাখ্যায় এর দ্বৈত ভূমিকা থাকতে পারে।
শীত বোঝার ক্ষেত্রে কিংবা শীত সংবেদনশীলতার সাথে সম্পর্কিত চিকিৎসায় এই আবিষ্কার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন, কেমোথেরাপি দেওয়ার সময় রোগীদের মধ্যে অনেকেরই ঠান্ডায় খুব কষ্ট হয়। GluK2-কে ঘিরে নতুন গবেষণার মাধ্যমে হয়তো শীতের তীব্রতার সাথে সম্পর্কিত অস্বস্তি কমানোর নতুন কোনো পদ্ধতি খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে আগামীতে। সামগ্রিকভাবে, এটি মানুষের ইন্দ্রিয় বোধের জগতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে, যা ভবিষ্যতে আমাদের জীবনকে আরও সহজ করে তুলতে পারে।