এসএসসি দুর্নীতি মামলায় গত সোমবার বড়সড় রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। একেবারে একধাক্কাতে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করলেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। ২০১৬ সালের এসএসসির সব নিয়োগকেই অবৈধ বলে ঘোষণা করে । শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী হিসাবে নিযুক্ত হওয়া সকলের চাকরি বাতিল করা হয়েছে এইদিন।
কেবল এখানেই শেষ নয়৷ সোমবার আদালতের তরফ থেকে জারি করা নির্দেশে বলা হয়েছে ১,১১৩ জনকে সুদ সমেত তার বেতনের এতকালের সব টাকা ফেরত দিতে হবে । আর তা ফেরত দিতে হবে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যেই। অর্থাৎ ঠিক যেমনটি হয়েছিল ববিতা সরকার, অঙ্কিতা অধিকারীদের ক্ষেত্রে । মামলাকারীদের তরফে আইনজীবীরা জানান, ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করা হয়েছে তবে মানবিক কারনে ক্যান্সার আক্রান্ত সোমা দাসের চাকরি বহাল থাকবে।
এই বিপুল সংখ্যক চাকরি হারানো শিক্ষক শিক্ষিকাদের জীবনে নেমে এসেছে হঠাত অন্ধকার । এটি শুধু তাদের আর্থিক অবস্থাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং তাদের সামাজিক সম্মান এবং আত্মমর্যাদাকেও গভীরভাবে আঘাত করছে । চাকরি হারানোর পর স্বাভাবিক ভাবেই অনেক যোগ্য শিক্ষকেরও সক্ষমতা ও যোগ্যতা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে , সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে ট্রোল আর মিমের বন্যা । এতে করে তাদের অনেকেই মানসিক ভাবে সাংঘাতিক বিপর্যস্ত ।
সদ্য চাকরি হারানো এই মানুষ গুলোর সকলেই কিন্তু অপরাধী নয়, বেশিরভাগটাই রীতিমত লড়াইকরে এত দুর্নীতির মাঝেও চাকরিটা পেয়েছে নিজের সক্ষমতা আর মেধার জোরে । এই চাকরী হারানোয় তাদের যে সামাজিক সম্মানহানি হল তার খেসারত কে দেবে ? সেটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন ।
ভারতীয় জুডিশিয়ারিরি বেসিক এথিক্স হল যেন একজন নিরপরাধ ব্যক্তিও সাজা না পায় । তাহলে এদের ক্ষেত্রে কোথায় সে এথিক্স? কি অপরাধ করেছে যারা সঠিক ভাবে চাকরী পেয়েছিলো । যারা দুর্নীতি করে চাকরী পেয়েছে তাঁরা অপরাধী তাদের শাস্তি দরকার । কিন্ত যারা অপরাধ করেনি তাঁরা শাস্তি পাবে কেন?
সদ্য চাকরি হারানো সুমনা সরকার এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জানান,”চারিদিকে একটা চাপা উল্লাস , সকলেই আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকাছে ? কেউ বিশ্বাস করছেনা আমি নিজের যোগ্যতায় চাকরিটা পেয়েছিলাম । এত বড় অসম্মান নিয়ে কি বাঁচা যায় ? ” সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেকে মুখ খুলেছেন এই বিষয়ে ।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন,”যাদের কথা বলা হয়েছে চাকরী বাতিল করা হল,তাঁরা চিন্তা করবেন না,হতাশ হবেন না।কেউ জীবনের ঝুঁকি নেবেন না।আমরা সবাই আপনাদের পাশে আছি।যতদুর লড়াই করার আমরা লড়াই করব।”
তিনি আরও বলেছেন,”আমি বিচারপতি কে নিয়ে কিছু বলছি না।কিন্তু এই অর্ডারটা বেআইনি অর্ডার।এটা নিয়ে উচ্চ আদালতে যাচ্ছি। আর কেউ না থাকলেও আমি আছি।”
কিন্তু তাঁর আশ্বাসে যে চিঁড়ে ভিজবে না সেটা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও জানেন । শুধু একটাই প্রশ্ন এই সামাজিক সম্মানহানির দায় কে নেবে ?