পাঁচ লাখ কৃষকের থেকে ২ টাকা করে নিয়ে শ্যাম বেনেগাল ১৯৭৬ সালে বানিয়েছিলেন “মন্থন“। অভিনয় করেছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ, গিরিশ কারনড এর মত অভিনেতারা। ২০২৪ এর কান চলচিত্র উৎসবে সেই সিনেমার 4K Restored Version দেখানো হয় ‘কান ক্লাসিক’ সেকশনে।
মন্থন ছিল প্রথম এমন এক ধরনের সিনেমা যা ক্রাউড ফান্ডিং করে তৈরি করা হয়েছিল। চলচিত্রটি মূলত ভারতের শ্বেত বিপ্লবের জনক ভার্গিস কুরিয়েন এর দ্বারা শুরু করা রতের বিখ্যাত দুগ্ধ আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। গুজরাট কো-অপারেটিভ মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশনের সাথে যুক্ত মোট ৫ লাক কৃষকের থেকে ২ টাকা করে নিয়ে তৈরি হওয়া ১০ লাখ এর এই সিনেমা আজও প্রচুর ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টরকে বৃহৎ বৃহৎ কর্পোরেট প্রোডাকশন হাউস বিমুখ হয়ে মানুষের জন্য স্বাধীন সিনেমা বানানোর পথ দেখায়। তাই আজও ভারতে ওরালপ্পুক্কাম এর মত সিনেমা হয়ে থাকে যার পুরো টাকাটাই সংগ্রহ করা হয়েছিল অনলাইন ক্রাউড ফান্ডিং এর মাধ্যমে।
বর্তমানে ভারতবর্ষের চলচিত্রের অবস্থা খুবই উজ্জ্বল। এ বছর শাম বেনেগালের সিনেমাটি ছাড়া মোট ৬ খানা ভারতীয় সিনেমা কান চলচিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে। ‘All We Imagine as Light‘, ‘Santosh’, ‘Sunflowers were first to know’, ‘Manthan’, ‘Sister Midnight’, ‘The Shameless’, ‘In the Retreat’ এই ৭ টি ভারতীয় সিনেমা এবার গেছে কান চলচিত্র উৎসবে। পায়াল কাপাডিয়া র ” All We Imagine as Light” ইতিমধ্যেই কান চলচিত্রের সবচেয়ে সম্মানজনক পাল’মে ডি অর এর প্রতিযোগিতা এ অবতীর্ণ হয়েছে। যদিও সাতটা সিনেমার মধ্যে একটি বাংলা সিনেমা ও কিন্তু তালিকাভুক্ত নয়। আগেরবার ২০২৩ এর কান চলচিত্র উৎসবে অনুরাগ কাশ্যপ পরিচালিত কেনেডি, কানু ব্যাহেল পরিচালিত আগ্রা এবং যুধাজিত বসু পরিচালিত একটি মারাঠি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ” Nehemich” পদার্পণ করেছিল কান চলচিত্র উৎসবে। প্রসঙ্গত Nehemich ছাড়া একটি সিনেমা ও সাধারণ মানুষের দেখার জন্য কোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বা সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার অবকাশ পায়নি।
যে দেশে বড় বড় প্রোডাকশন হাউস “১০০কোটি-২০০ কোটি” এভাবে টাকার মাপ দিয়ে নিজের সিনেমার প্রচার করে সেই দেশ থেকেই সাতটা সিনেমা কান চলচিত্রে যাওয়া একেবারেই সহজ কথা নয়। তার মানে কিছু একটা হচ্ছে। নবারুণের ভাষায় ‘কিছু একটা পুড়ছে’। হ্যা তাকে খালি চোখে দেখা যাচ্ছে না ঠিকই কিন্তু ভেতরে ভেতরে মানুষের মধ্যে শিল্প নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট এখনো চলছে। কেজিএফ, পুষ্পা, অ্যানিমাল যে দেশে উন্মাদের মত সেলিব্রেট করা হয় সে দেশে কিভাবে এই পরীক্ষা-নিরিক্ষা গুলো সাধারণ মানুষের কাছে উঠে আসবে কীভাবে তা নিয়ে গভীর ভাবে ভাবা প্রয়োজন।