সুপ্রিম কোর্টে আজ দ্বিতীয়বার শুনল SSC মামলার। সুরাহা পেলেন না যোগ্য চাকরি প্রার্থীরা। সুপ্রিম কোর্ট জানায়,”নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ হলে সম্পূর্ণ প্যানেলই তো বাতিল হবে।” যদিও এই আশ্বাস ও দেওয়া হয়, ” যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই মূল লক্ষ্য। “
সোমবার এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও অন্য মামলার শুনানির কারণে এই মামলার শুনানি একদিন পিছিয়ে গেছিল। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই শুরু হয়ে গেছিল এসএসসি মামলার শুনানি। প্রথম থেকেই চাকরিহারা দের আইনজীবি এই যোগ্য-অযোগ্য পার্থক্যের বিষয়টিকে তার যুক্তিতে স্পষ্ট করতে থাকে। যোগ্য প্রার্থী অযোগ্য প্রার্থী দের এক তুলিতে একে পুরো প্যানেল বাতিল করা যায় না। এই ছিল তার যুক্তি। কিন্তু মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন,” বিরাট দুর্নীতি হয়েছে। নাইসা সংস্থাই উঠে গিয়েছে। ২৩ হাজার ১২৩ জনের চাকরির সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। প্যানেল বাতিল করে দেওয়া হোক।” সিবিয়াই উদ্ধারকৃত OMR শিট নিয়েও প্রশ্ন তোলেন চাকরিহারা দের আইনজীবি। জানান, OMR শিট এর সত্যতা তদন্তসাপেক্ষ। সবটা খোলসা হওয়ার আগে চাকরি বাতিল করা উচিৎ নয়।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী বলেন, ‘‘হাই কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার মানুষ চাকরিহারা। যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই হোক। মাথা ব্যথা হচ্ছে বলে পুরো মাথা কেটে দেওয়া কাজের কথা নয়। সকলের চাকরি গেলে শিক্ষক পাব কোথায়?’’ কিন্তু SSC এর দায়সারা কাজ কে যথেষ্ট ভৎসনা করে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিমকোর্টের প্রশ্ন ডিজিটাল তথ্য রয়েছে তাহলে কেন চেয়ারম্যান ওএমআর শিটের ‘মিরর ইমেজ’ নেই ?? এসএসসির দাবি, নাইসার কাছ থেকে ‘মিরর ইমেজ’ নেওয়া হয়েছে। এবং সেগুলি প্রকাশও করা হয়েছে।প্রধান বিচারপতিবলেন, “নাইসাকে বরাত দেওয়া হল। নাইসা আবার আরও এক সংস্থাকে টেন্ডার দিল। কেন বলেননি নিজে না পারলে বরাত নেওয়ার প্রয়োজন নেই। গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় নথি কেন অন্যের হাতে তুলে দিলেন। তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণ এসএসসির। এটা নিরাপত্তা লঙ্ঘন। এসএসসি দায়িত্ববানের মতো কাজ করেনি।” রাজ্যের আইনজীবি জানান নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে রাজ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। তা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে SSC. রাজ্যের আইনজীবির দাবি হাইকোর্ট এর ডিভিশন বেঞ্চ কোনো বক্তব্য না শুনেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। মন্ত্রীদের পাশাপাশি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলও সিবিআই তদন্তের আওতাভুক্ত। সওয়াল জবাবের পর তিন বিচারপতি বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করেন নিজেদের বিরুদ্ধে। কিন্তু চাকরি বাতিল সম্পর্কে কোনো স্থগিতাদেশ দেননি।
সার্বিক ভাবে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা এদিনের সওয়াল জবাব পর্বে সব থেকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন যোগ্য চাকরীপ্রার্থীদের বিষয়টিকে । রাজ্য সরকার এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ভৎসনার পাশাপাশি বিচারপতিদের যোগ্য চাকরীপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায় । আজ SSC অবশ্য সুপ্রিম কোর্টে যোগ্য-অযোগ্যদের একটি তালিকাও পেশ করে । ফলে স্থগিতাদেশ না হলেও একটি আশার আলো দেখা যাচ্ছে যোগ্য চাকরী প্রার্থীদের জন্য ।
ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার এক অন্যতম লক্ষ হল একটি নির্দোষ ব্যক্তিও যাতে শাস্তি না পায়। কিন্তু ২৫৭৫৩ জন চাকরিহারা দের মধ্যে সবাই একেবারেই অযোগ্য নয়। তারা নিজের চাকরি হারালে বিচারব্যস্থার মূল ভিত এর ওপর কালি লাগবে। কারণ তাতে অনেক নির্দোষ ব্যক্তি মুষ্টিমেয় কিছু অপরাধীর জন্যে শাস্তি পাবেন যা একেবারেই কাম্য নয়। বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা হারাবে সাধারণ মানুষ। এই জটিল পরিস্থিতিকে কীভাবে সামাল দেখবে সুপ্রিম কোর্ট তা দেখবার। এই রায় এর ওপর নির্ভর করছে অনেককিছুই। নির্ভর করছে সরকারি চাকরির ওপর মানুষের আস্থা, নির্ভর করছে কোর্টের ওপর মানুষের আস্থা।