আমাদের সকলেরই রান্না ঘরের ভাঁড়ারে সবসময়ই তেঁতুল থাকে । ননান অনুষঙ্গে তেঁতুলের ব্যবহার আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ । এই তেঁতুল শুধুমাত্র তার তীব্র টক স্বাদের জন্য জনপ্রিয় এমন নয় এতে আছে অসাধারণ সব গুণ তা যে কেবলমাত্র অনেক জটিল পেটের রোগ সারায় এমন নয় পাশাপাশি ক্যান্সারের মত মারণ রোগ প্রতিরোধের উপাদানও আছে এতে ।
ক্যান্সার প্রতিরোধে তেঁতুল
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:
তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের মুক্ত র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। মুক্ত র্যাডিকেলগুলি কোষের ক্ষতি করে এবং ক্যান্সার কে দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে দেয় । তেঁতুলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি এই ক্ষতিকর কোষগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি:
তেঁতুলে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ক্যান্সারের বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে। তেঁতুলে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যগুলি প্রদাহ কমিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ফাইবার:
তেঁতুলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজমশক্তি উন্নত করতে এবং কোলনের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।কোলন ক্যান্সার হল সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সারগুলির মধ্যে একটি। তেঁতুলে থাকা ফাইবার কোলনের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ভিটামিন সি:
তেঁতুলে ভিটামিন সিও প্রচুর পরিমাণে থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরকে ক্যান্সারের কোষগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
তেঁতুলে থাকা বিভিন্ন উপাদান এবং তাদের ভূমিকা
উপাদান | পরিমাণ (১০০ গ্রামে) | উপকারিতা | যে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে |
---|---|---|---|
ক্যালোরি | ২৩৯ কিলোক্যালোরি | শক্তি সরবরাহ করে | – |
প্রোটিন | ২.৮ গ্রাম | পেশী নির্মাণ ও মেরামত করে | – |
ফ্যাট | ০.৬ গ্রাম | হরমোন উৎপাদন এবং ভিটামিন শোষণ করে | – |
কার্বোহাইড্রেট | ৬২.৫ গ্রাম | দীর্ঘস্থায়ী শক্তি সরবরাহ করে | – |
ফাইবার | ৫.১ গ্রাম | হজমশক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে | কোষ্ঠকাঠিন্য |
ক্যালসিয়াম | ৭৪ মিলিগ্রাম | হাড় শক্তিশালী করে | হাড় দুর্বলতা |
আয়রন | ২.৮ মিলিগ্রাম | রক্ত উৎপাদন বাড়ায় এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে | অ্যানিমিয়া |
ম্যাগনেশিয়াম | ৯২ মিলিগ্রাম | মাংসপেশী ও নার্ভ ফাংশন উন্নত করে | মাংসপেশী ক্র্যাম্প, স্ট্রেস |
পটাশিয়াম | ৬২৬ মিলিগ্রাম | হাইপারটেনশন প্রতিরোধ করে এবং হার্ট ফাংশন উন্নত করে | উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট ডিজিজ |
ভিটামিন C | ৩.৫ মিলিগ্রাম | ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে এবং স্কার্ভি প্রতিরোধ করে | স্কার্ভি, সাধারণ সর্দি-কাশি |
থায়ামিন (ভিটামিন B1) | ০.৪২৮ মিলিগ্রাম | কার্বোহাইড্রেট মেটাবোলিজম এবং নার্ভ ফাংশন সহায়তা করে | মেটাবোলিক ডিসঅর্ডার, নার্ভ সমস্যা |
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট | ক্ষতিকর মুক্ত র্যাডিক্যাল থেকে কোষগুলির ডিএনএ রক্ষা করে | ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে |
তেঁতুলের নানা রেসিপি:
তেঁতুলের চাটনি:
তেঁতুলের চাটনি তৈরি করা খুবই সহজ। তেঁতুল ভিজিয়ে রস বের করে নিন। এরপর পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, লবণ, জিরা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, এবং সামান্য চিনি মিশিয়ে চটজলদি বানিয়ে ফেলুন চাটনি।তবে তেঁতুলের চাটনিতে একটু আদা-রসুন বাটা দিলে স্বাদ আরও বেড়ে যাবে।এবং এই চাটনি দীর্ঘদিন ভালো রাখতে চাইলে, বোতলে ভরে ফ্রিজে রাখুন।
তেঁতুলের ভর্তা:
তেঁতুলের ভর্তা তৈরি করতে তেঁতুলের রসের সাথে আলু সেদ্ধ, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি, লবণ, জিরা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, এবং সামান্য তেল মিশিয়ে মাখুন।তেঁতুলের ভর্তায় একটু কাঁচা লঙ্কা কুচি দিলে স্বাদ আরও ভালো হবে।তেঁতুলের ভর্তা রুটি, পরোটা, বা ভাতের সাথে খেতে পারবেন।
তেঁতুলের শরবত:
গরমের দিনে তেঁতুলের শরবত খুবই রিফ্রেশিং। তেঁতুলের রস, জল, চিনি, এবং লবণ মিশিয়ে তৈরি করুন তেঁতুলের শরবত।
তেঁতুলের শরবতে একটু পুদিনা পাতা বা জাফরান দিলে স্বাদ আরও বেড়ে যাবে।তেঁতুলের শরবত ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন।
তেঁতুলের জুলপি:
তেঁতুলের জুলপি তৈরি করতে তেঁতুলের রস, চিনি, ময়দা, এবং সুজি মিশিয়ে তৈরি করে জলে ভেজে নিন।
তেঁতুলের পোলাও:
তেঁতুলের পোলাও তৈরি করতে তেঁতুলের রস, চাল, মাংস, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, লবণ, জিরা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, এবং হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে রান্না করুন।তেঁতুলের পোলাওতে একটু কেওড়া জল দিলে স্বাদ আরও বেড়ে যাবে।
তেঁতুলের মাছের ঝোল:
তেঁতুলের মাছের ঝোল তৈরি করতে তেঁতুলের রস, মাছ, পেঁয়াজ, আদা-রসুন বাটা, কাঁচা মরিচ, লবণ, হলুদ গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, এবং তেল মিশিয়ে রান্না করুন।তেঁতুলের মাছের ঝোলে একটু নারকেল কোরা দিলে স্বাদ আরও বেড়ে যাবে।
তেঁতুলের ইলিশের ঝোল:
তেঁতুলের ইলিশের ঝোল তৈরি করতে তেঁতুলের রস, ইলিশ মাছ, পেঁয়াজ, আদা-রসুন বাটা, কাঁচা মরিচ, লবণ, হলুদ গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, এবং তেল মিশিয়ে রান্না করুন।তেঁতুলের ইলিশের ঝোলে একটু কাঁচা কাঁচা লঙ্কা কুচি দিলে স্বাদ আরও বেড়ে যাবে।
তেঁতুলের লজ্জু:
তেঁতুলের লজ্জু তৈরি করতে তেঁতুলের রস, চিনি, দুধ, এবং ময়দা মিশিয়ে রান্না করুন।তেঁতুলের লজ্জুতে একটু বাদাম কুচি দিলে স্বাদ আরও বেড়ে যাবে।
তেঁতুলের পায়েস:
তেঁতুলেরি করতে তেঁতুলের রস, চিনি, দুধ, চাল, এবং কাজু বাদাম দিয়ে রান্না করুন।তেঁতুলের পায়েসে একটু এলাচ গুঁড়ো দিলে স্বাদ আরও বেড়ে যাবে।
তেঁতুলের শিরনি:
তেঁতুলের শিরনি তৈরি করতে তেঁতুলের রস, চিনি, দুধ, এবং এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে রান্না করুন।তেঁতুলের শিরনিতে একটু কেওড়া জল দিলে স্বাদ আরও বেড়ে যাবে।
ভালো তেঁতুল কীভাবে চিনবেন ?
- রঙ: তাজা তেঁতুল গাঢ় বাদামী রঙের হবে।
- তেঁতুলের চামড়া : চামড়া মসৃণ, উজ্জ্বল এবং দাগহীন হবে।
- ডাল: ডাল শুষ্ক এবং ভেঙে যাবে না।
- আকার: তাজা তেঁতুল মাঝারি আকারের হবে, খুব ছোট বা খুব বড় হবে না।
- নরম: তাজা তেঁতুল হালকা স্পর্শে নরম মনে হবে।
- ভারী: তাজা তেঁতুল তাদের আকারের তুলনায় ভারী মনে হবে।
- তেঁতুলের গন্ধ: তাজা তেঁতুলের একটি সুগন্ধি তেঁতুলের গন্ধ থাকবে।
- মৌসুমের তেঁতুল : তেঁতুলের মৌসুমে কেনার চেষ্টা করুন, যা সাধারণত মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত থাকে।তেঁতুল কেনার সময় শুকনো এবং কালচে বাদামী রঙের তেঁতুল বেছে নিন।
তবে মনে রাখবেন:
যে কোন খাবারের মতো, তেঁতুলও বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।যদি আপনার কোন জটিল শারীরিক সমস্যা থাকে তবে তেঁতুল খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।