মোটরসাইকেলে চেপে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ার মজাটাই আলাদা। আর সেই রাস্তা যদি পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশকে জুড়ে দেয়, অ্যাডভেঞ্চার আর স্বাধীনতার অনুভূতিটা কয়েকগুণ বেড়ে যায়! শুধু একটু পরিকল্পনা আর সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়ে পড়লে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মোটরসাইকেলে বাংলাদেশ যাওয়া এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা হতে পারে। তবে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণের কিছু আইনি দিক আছে যেগুলোর খেয়াল রাখা জরুরি। চলুন জেনে নিই এই রোমাঞ্চকর সফরের আগে কী কী মাথায় রাখতে হবে –
জরুরি কাগজপত্রে
- পাসপোর্ট: এটা ছাড়া তো আন্তর্জাতিক ভ্রমণ হবেই না! বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ প্রবেশের তারিখ থেকে আরও ছয়মাস থাকতে হবে। যদি দেখা যায় মেয়াদ আর বেশি দিন নেই , তাহলে আগেভাগেই পাসপোর্টটা রিনিউ করে নিন।
- ভিসা: ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে ভিসার প্রয়োজন হয়। কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন থেকে অথবা অনলাইনে ই-ভিসার আবেদন করা যায়। সাধারণত ভিসার ফি ৬০০ টাকার মতো হয়। তবে, ভিসা পেতে কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে, তাই সময় হাতে নিয়ে আবেদন করবেন।
- মোটরসাইকেলের কাগজপত্র: মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, আপডেট করা দূষণ নিয়ন্ত্রণের সার্টিফিকেট – এইসব যে আছে সেটা নিশ্চিত করুন। ভুলেও রাস্তায় বার হবেন না যদি আপনার মোটরসাইকেলের বীমা করা না থাকে! এছাড়া, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে ডকুমেন্ট লাগবে সেটা হলো ‘কার্নেট ডি পাসেজ’। এটা মূলত আপনার মোটরসাইকেলকে বিদেশে সাময়িকভাবে নিয়ে যাওয়ার পারমিট, একেবারে মোটরসাইকেলের পাসপোর্ট!
- আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট (IDP): অন্য দেশে গাড়ি চালানোর জন্য আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং পারমিট নেওয়া বাধ্যতামূলক। এটা মূলত আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সেরই একটা অনুবাদ, যেটা বিভিন্ন দেশে চলে । স্থানীয় RTO থেকে এজন্য আবেদন করতে পারেন।
আর কোন কোন বিষয় মাথায় রাখবেন
- ভিসা নেওয়ার পদ্ধতি: অনলাইনে আবেদন করা বেশ সুবিধাজনক। বাংলাদেশের ই-ভিসার ওয়েবসাইট থেকে ফর্ম পূরণ করে, পাসপোর্ট, ছবি, আর ব্যাংক স্টেটমেন্টের মতো কিছু সাপোর্টিং ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে। খরচ সাধারণত ৬০০ টাকার আশেপাশে হয়।
- কার্নেট ডি পাসেজ নেওয়ার পদ্ধতি: FIA (Fédération Internationale de l’Automobile)-এর সঙ্গে যুক্ত কোনো অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনে যোগাযোগ করুন। ‘কার্নেট’ ইস্যু করার খরচ সাধারণত আপনার মোটরসাইকেলের দামের উপর নির্ভর করে। একটি নির্দিষ্ট ডিপোজিট দিতে হয় এবং ফি দিতে হয় যা মোট ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ বা ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি হতে পারে।
- সীমান্ত পার হওয়া: পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত পথ দিয়ে মোটরসাইকেলে বাংলাদেশে প্রবেশ করা যায়। ভুলে যাবেন না, সীমান্তে আপনার পাসপোর্ট, ভিসা, আইডিপি, এবং বাইকের সমস্ত কাগজপত্র দেখাতে হবে।
প্রস্তুতির টিপস
- মোটরসাইকেলের সার্বিক অবস্থা: লং ট্যুরে বেরোনোর আগে মোটরসাইকেলের ব্যাপারে নিশ্চিত হন। ভালো মেকানিকের কাছে নিয়ে যান, ইঞ্জিনের তেল বদলে নিন, ব্রেক, টায়ার, সবকিছু ভালোভাবে পরীক্ষা করিয়ে নিন।
- কাগজপত্রের ফটোকপি: পাসপোর্ট, ভিসা, মোটরসাইকেলের ডকুমেন্টস, কার্নেট ডি পাসেজ – এই সবের একাধিক ফটোকপি করে নিয়ে যান। যদি হারিয়ে যায় তাহলে যাতে হাতে অন্য কপি থাকে।
- বাংলাদেশের ট্রাফিক রুলস: বাংলাদেশের ট্রাফিক নিয়মগুলো সম্পর্কে একটু আগে থেকে জেনে নিন। খুব বড়ো কোনো তারতম্য নেই, তবে কিছু ছোটখাটো নিয়মের ব্যতিক্রম থাকতে পারে।
- আন্তর্জাতিক সিম কার্ড: যোগাযোগের জন্য আন্তর্জাতিক সিম কার্ড কিনে নেওয়া ভালো। বাংলাদেশি কোনো সিম কার্ড কিনে সেটাও সক্রিয় করে রাখতে পারেন।
- প্রাথমিক চিকিৎসা কিট ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র: টর্চ, রেইনকোট, প্রাথমিক চিকিৎসার কিট, কিছু সহজ খাবার, পানির বোতল – এই জাতীয় জিনিস সঙ্গে রাখুন।
খরচের সম্ভাব্য হিসাব
সবচেয়ে বড়ো খরচ হল ভিসা ফি, মোটরসাইকেলের কার্নেট ডি পাসেজ এবং থাকা-খাওয়া। তবে মোটের উপর খরচের হিসাব নির্ভর করে আপনি কোথায় থাকতে চান, কী ধরনের খাবার খাচ্ছেন, তার ওপর।
- ভিসা: প্রায় ৬০০ টাকা
- কার্নেট ডি পাসেজ: ২০,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা বা তারও বেশি (মোটরসাইকেলের দামের ওপর নির্ভর করে)
- পেট্রল: ভারত-বাংলাদেশের পেট্রলের দামে খুব একটা তারতম্য হয় না, তাই হিসাবটা সহজ।
- থাকার ব্যবস্থা: বাজেট হোটেল প্রতি রাতে ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
- খাওয়া–দাবার: রাস্তার ধারের ছোটো দোকান থেকে খেলে দৈনিক খরচ ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।
- অন্যান্য: সীমান্তে টোল, মোটরসাইকেলের ছোটখাটো মেরামতির খরচ, ইত্যাদির জন্য আলাদা করে কিছু টাকা রাখুন।
মোটামুটি হিসাবে: আপনার বাইকের ‘কার্নেট ডি পাসেজ’ বাদে, এক সপ্তাহের ট্যুরের জন্য ২৫,০০০ থেকে ৩৫,০০০ টাকার মধ্যে খরচ হিসেব করে রাখা নিরাপদ।
খরচ কমানোর উপায়: হোস্টেল বা গেস্টহাউসে থাকতে পারেন হোটেলের বদলে। স্ট্রিট ফুড বেশি খান, তাতে খরচ অনেকটাই কমে যাবে। গ্রুপে ভ্রমণ করলে প্রতি জনের খরচও কমে। সবথেকে ভালো, আগেভাগে কোথায় থাকবেন বুকিং দিয়ে রাখলে ডিসকাউন্ট পেতে পারেন।