মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন অথচ ডায়াবেটিসের জন্য মিষ্টি খেতে পারেননা । আর চিন্তা নেই আপনার জন্য এসে গিয়েছে চিনির চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি অথচ তা খেলে সুগার লেভেল একফোঁটা বাড়বে না । ‘স্টেভিয়া’ হল সেই প্রাকৃতিক মিরাকল যা দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ের ‘স্টেভিয়া রেবডিয়ানা’ উদ্ভিদ থেকে তৈরি হয়। চিনির চেয়ে প্রায় ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি হওয়ার পাশাপাশি স্টেভিয়াতে কোনো ক্যালোরি নেই। তাই বিশেষভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্টেভিয়া খুবই উপকারী কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না।
কেন স্টেভিয়া এত মিষ্টি হওয়ার সত্বেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
স্টেভিয়ায় মিষ্টির জন্য দায়ী উপাদানগুলোকে ‘স্টিভিওল গ্লাইকোসাইড’ বলা হয়, যার মধ্যে স্টিভিওসাইড এবং রেবাউডিওসাইড ই প্রধান। এই উপাদানগুলি শুধু যে অনেক মিষ্টি তাই নয় এছাড়া তাপে পরিবর্তন হয়না এবং পিএইচ ও স্থিতিশীল একই সাথে গাঁজনরোধী। এজন্য স্টেভিয়া বিভিন্ন খাবার ও পানীয়তে মিষ্টি হিসেবে ব্যবহারের জন্য আদর্শ। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই গ্লাইকোসাইডগুলি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বা ইনসুলিনের মাত্রার ওপর কোনও প্রভাব ফেলে না। অর্থাৎ, মিষ্টি স্বাদ পেলেও চিনি খাওয়ার মতো বিপাকীয় কোনো সমস্যা তৈরি করে না।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্টেভিয়ার উপকারিতা
ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের লড়াইটা প্রতিদিনের এবং তাতে খাদ্যাভ্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্টেভিয়া এখানে বিশেষ উপকারী কারণ এতে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাছাড়াও কৃত্রিম মিষ্টির বিপরীতে উদ্ভিদ থেকে তৈরি বলে স্টেভিয়া একটি প্রাকৃতিক বিকল্প যা অনেকের কাছেই বেশি গ্রহণযোগ্য ।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে স্টেভিয়া ইনসুলিন সংবেদনশীলতাকে উন্নত করতে পারে এবং খাওয়ার পরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে পারে। সুতরাং স্টেভিয়া যে শুধু নিরাপদভাবে খাওয়াই যায় না বরং এই রোগের চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকাও রাখতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীরা কীভাবে স্টেভিয়া ব্যবহার করতে পারেন
পাউডার, দানা বা তরল – বিভিন্ন আকারে পাওয়া যায় স্টেভিয়াকে, ফলে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই । যার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই খেতে পারে । ডায়াবেটিস রোগীরা চা-কফির মতো পানীয়ে মিষ্টি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন বা রান্নায় দিতে পারেন। যেমন, কেক বা পায়েস ইত্যাদি বেক করার সময় স্টেভিয়া চিনির বদলে ব্যবহার করা যায়। মনে রাখতে হবে চিনির চেয়ে বহুগুণ মিষ্টি হওয়ায় খুব অল্প পরিমাণই লাগবে। বাকি উপকরণের মাত্রা সেই অনুযায়ী দিতে হবে যাতে রান্নার স্বাদ ঠিক থাকে।
স্টেভিয়ার উপাদান ও তাদের উপকারিতা
উপাদান | উপকারিতা |
---|---|
স্টিভিওসাইড: | স্টেভিয়ার সবচেয়ে প্রচুর উপাদান, চিনির চেয়ে 200-300 গুণ বেশি মিষ্টি। |
রেবাউডিওসাইড এ: | স্টেভিয়ার দ্বিতীয় সবচেয়ে প্রচুর উপাদান, স্টিভিওসাইডের চেয়ে 250 গুণ বেশি মিষ্টি। |
অন্যান্য স্টিভিওল গ্লাইকোসাইড: | স্টেভিয়ায় আরও অনেক স্টিভিওল গ্লাইকোসাইড রয়েছে, যাদের প্রত্যেকেরই তাদের নিজস্ব মিষ্টি স্বাদ রয়েছে। |
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: | স্টেভিয়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। |
প্রোবায়োটিকস: | স্টেভিয়ায় প্রোবায়োটিকস রয়েছে যা হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। |
খনিজ: | স্টেভিয়ায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম সহ খনিজ রয়েছে। |
স্টেভিয়ার সামগ্রিক উপকারিতা:
- কোনো ক্যালোরি বা কার্বোহাইড্রেট নেই: স্টেভিয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি চমৎকার বিকল্প কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না।
- মিষ্টির স্বাদ: স্টেভিয়া চিনির চেয়ে 200-300 গুণ বেশি মিষ্টি, তাই আপনার খাবার এবং পানীয়তে মিষ্টি স্বাদ যোগ করার জন্য এটি একটি কার্যকর উপায়।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: স্টেভিয়ায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: স্টেভিয়ায় প্রোবায়োটিকস রয়েছে যা হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে।
- রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে স্টেভিয়া রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে স্টেভিয়া ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে ধীর করতে সাহায্য করতে পারে।
সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
স্টেভিয়া সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ এবং উপকারী হলেও কিছু ব্যবহারকারী পেট ফাঁপা, বমি ভাব বা পেটে অল্প অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন, বিশেষ করে পাউডার আকারের স্টেভিয়াতে যখন অন্য উপাদান যেমন ডেক্সট্রোজ বা মল্টোডেক্সট্রিন থাকে সেক্ষেত্রে একটু সমস্যা হতে পারে । স্টেভিয়ার স্বাদটাও পছন্দ হতে না পারে, এতে একধরনের তিতকুটে ভাব অনেকেই অনুভব করেন, বিশেষ করে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে।
বাজারে সহজলভ্য স্টেভিয়ার পণ্যগুলি সাধারণত অনেক প্রক্রিয়াজাত। উদ্ভিজ্জ মিষ্টি ও ক্যালোরিবিহীন বৈশিষ্ট্য থাকলেও অন্য যোগ করা উপাদানগুলির কারণে যারা একেবারে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক স্টেভিয়া চান তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য মেপে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখার ক্ষেত্রে স্টেভিয়া একটি মূল্যবান হাতিয়ার হতে পারে। চিনির থেকে অনেক বেশি মিষ্টি হবার কারণে পরিমাণে খুব কম লাগে, আবার কোনো ক্যালোরি বা কার্বোহাইড্রেট না থাকায় চিনির চমৎকার বিকল্প হিসেবে কাজ করে। তবে ব্যক্তিবিশেষে এর প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে, তাই নিজের সহ্য ক্ষমতা এবং পছন্দমতো শুরুতে অল্প পরিমাণে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
স্টেভিয়াকে নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করতে আগ্রহী ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত তাদের চিকিৎসক বা ডায়েটিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করা যাতে এটি তাদের সামগ্রিক খাদ্য পরিকল্পনা এবং স্বাস্থ্য লক্ষ্যগুলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।