আপনার মোবাইলের ব্যাটারির চার্জ কি খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে? এই সমস্যা খুবই সাধারণ এবং এটা আপনার দিনটাকে বিরক্তিকর করে তুলতে পারে। এই মুহূর্তে ব্যাটারি ফুল চার্জড আর পরের মুহূর্তেই আপনি চার্জার খুঁজতে শুরু করেছেন। তবে ব্যাটারি তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাচ্ছে বলেই যে ব্যাটারিটা বদল করতে হবে তা কিন্তু নয়। কিছু স্ট্র্যাটেজি মাথায় রাখলে আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি লাইফ অনেকটাই বাড়ানো সম্ভব। ব্যাটারি কেন এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় তার কারণগুলি কী, এবং তা ঠেকাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সেটা জানা যাক
মোবাইলের চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার কারণ
কিছু নির্দিষ্ট কারণে চার্জ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। একবার চার্জ করার পর কতক্ষণ ফোন চলবে তার ওপর এই কারণগুলির প্রভাব পড়ে:
- স্ক্রিন ব্রাইটনেস এবং ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ: অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্রাইটনেসের জন্য ব্যাটারি সবচেয়ে তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়। ব্রাইটনেস কম করলে অনেকটা পাওয়ার সাশ্রয় হয়।
- ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ: ব্যাকগ্রাউন্ডে যে অ্যাপগুলি চলতে থাকে, আপনি তাদের অ্যাক্টিভলি ব্যবহার না করলেও তারাও কিন্তু পাওয়ার খরচ করে। এর ফলে ব্যাটারি ক্রমাগত কমতে থাকে।
- সর্বক্ষণ জিপিএস চালু থাকা: যেসব অ্যাপ ন্যাভিগেশন, আবহাওয়া আপডেট, বা ফিটনেস ট্র্যাকিংয়ের জন্য জিপিএস ব্যবহার করে, এই অ্যাপগুলির জন্য ব্যাটারি খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। এই সার্ভিসগুলির জন্য স্যাটেলাইটের সাথে অবিরাম যোগাযোগ বজায় রাখতে হয়, এবং এর ফলে অনেক এনার্জি খরচ হয়।
- ইমেল সিঙ্ক এবং কানেক্টিভিটির বেশি ব্যবহার: যেভাবে গাড়ি স্টার্ট করে রাখলে ফুয়েল খরচ হয়, তেমনি স্মার্টফোন ক্রমাগত নতুন ইমেল আছে কিনা তা চেক করতে, অথবা ব্লুটুথ, ওয়াইফাই বা সেলুলার নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড থাকতে সিগন্যাল খুঁজতে এবং ডেটা সিঙ্ক করতে গিয়ে পাওয়ার খরচ করে।
- সফটওয়্যার আপডেট না করা : পুরনো ভার্সনের সফটওয়্যার ব্যাটারি এফিশিয়েন্সির দিক থেকে ভালো নাও হতে পারে, ফলে চার্জ তাড়াতাড়ি নেমে যায়।
- নোটিফিকেশন: প্রত্যেক নোটিফিকেশনের জন্য স্ক্রিন জ্বলে ওঠে, এরকম যদি দিনে অনেকবার হয় তাহলে তো আরও বেশি করে পাওয়ার যায়।
এই দ্রুত চার্জ ফুরানো থেকে কীভাবে মুক্তি পাবেন
আপনার ফোনের সেটিংস একটু বদলে নিলেই ব্যাটারির পারফরমেন্সে বড় রকমের পার্থক্য আসবে:
- প্রয়োজনহীন ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস বন্ধ করা: দেখুন কোন কোন অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চলছে এবং পাওয়ার খরচ করছে। অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস – এই দুটি অপারেটিং সিস্টেমেই ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা ইউসেজ কমানো যায়। এটা করলে অ্যাপ আর ‘পর্দার আড়ালে’ থেকে ব্যাটারির শক্তি খেতে পারবে না।
- অ্যাপ পারমিশন দেখে নিন: প্রত্যেক অ্যাপের কী কী পারমিশন আছে তা রিভিউ করুন। একটা সিম্পল গেম বা মিউজিক অ্যাপের কি আসলেই আপনার লোকেশন জানার দরকার, বা ব্যাকগ্রাউন্ডে রান করার দরকার? এই পারমিশনগুলিকে রেস্ট্রিক্ট করে দিলে ব্যাটারি সেভ হবে, এবং আপনার প্রাইভেসিও সুরক্ষিত থাকবে।
- কোন অ্যাপগুলিকে বেশি পাওয়ার লাগে তা চিহ্নিত করুন: আপনার ফোনের ব্যাটারি সেটিংসে গিয়ে দেখুন কোন কোন অ্যাপ সবচেয়ে বেশি এনার্জি ব্যবহার করছে। এই অ্যাপগুলির ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি কম করে দিন, বা একেবারে আনইনস্টল করে দিন যদি সেগুলি খুব জরুরি না হয়।
- নোটিফিকেশন সেটিংস ঠিক করুন: শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় কমিউনিকেশনের জন্য নোটিফিকেশন রাখুন। অনেক অ্যাপ – বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া এবং শপিং অ্যাপ – ফ্রিকোয়েন্ট অ্যালার্ট পাঠায় যেগুলি শুধু বিরক্তিকরই নয়, পাওয়ার-ইনটেনসিভও বটে।
- ডার্ক মোডে যান: ডার্ক মোডে সুইচ করলে কম পাওয়ার খরচ হয়। বিশেষ করে ওএলইডি বা অ্যামোলেড স্ক্রিনের ক্ষেত্রে এটা খুব কাজে দেয়। এইসব ডিসপ্লেতে শুধু কালারড পিক্সেলের জন্য আলো জ্বলে। ডার্ক মোডে যেহেতু পিক্সেলের সংখ্যা কম জ্বলতে হয়, তাই ব্যাটারি কম খরচ হয়।
- ডিসপ্লে এবং কানেক্টিভিটি সেটিংস ঠিক করুন: স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমান এবং স্ক্রিন টাইম আউট সেটিং রিডিউস করুন – এতে ফোনটি ব্যবহার না করার সময়ও স্ক্রিন অ্যাক্টিভ থাকবে না। এছাড়াও ইমেল এবং অ্যাপের আপডেটের সেটিংসও বদলান, যাতে ডেটা কমবার সিঙ্ক হয়। অথবা ওয়াইফাই থাকলে তখনই সিঙ্ক করার সেটিং করে দিন, সেলুলার ডেটার চেয়ে ওয়াইফাই ব্যাটারির ওপর কম চাপ দেয়।
- পাওয়ার সেভিং মোড চালু করুন: বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই একটি পাওয়ার সেভিং মোড থাকে । পাওয়ার সেভিং মোড চালু করলে ব্যাটারি ক্ষয় অনেক কম হয় ।