এই প্রচন্ড গরমে শিশুদের মধ্যে ফোঁড়া হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।এই হাসফাস করা গরমের মধ্যে এমনিতেই শিশুরা নাজাহাল তার উপর ফোঁড়ার কারনে আরও ভুগতে হচ্ছে তাদের।
ফোঁড়া কী?
ফোঁড়া সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, বিশেষ করে স্ট্যাফিলোকোকাস অউরিয়াস নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ত্বকের ছোট ছোট ক্ষত বা হেয়ার ফলিকলগুলোর মধ্যে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। এর ফলে ত্বকের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় প্রদাহ এবং পুঁজ জমা হয়, যা ফোঁড়া আকারে প্রকাশ পায়।
ফোঁড়া হওয়ার কারন গুলো কী কী?
স্বাস্থ্যগত অবহেলা:
অপর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা বা নিয়মিত ত্বকের যত্ন না নেওয়া হলে ফোঁড়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
ত্বকের আঘাত:
কোনো ধরনের ক্ষত, চুলকানি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশপথ তৈরি করতে পারে।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ:
ধুলোবালি এবং ময়লা পরিবেশ ত্বকের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার হ্রাস:
যে সব ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম দুর্বল, যেমন ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে, তাদের মধ্যে ফোঁড়া হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
এছাড়াও চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার ফলে শিশুদের ত্বকে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর প্রক্রিয়া দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে, যা ফোঁড়া হওয়ার একটি প্রধান কারণ।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে কীভাবে ফোঁড়া হলে চিকিৎসা করবেন?
পরিষ্কার রাখুন:
ফোঁড়ার অঞ্চলটি প্রতিদিন মৃদু অ্যান্টিসেপটিক সোপ দিয়ে পরিষ্কার করুন। এটি ইনফেকশন বাড়ার ঝুঁকি কমাবে।
উষ্ণ সেঁক:
ফোঁড়ার উপর উষ্ণ কাপড় বা প্যাড সেঁক দিন, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তুলবে এবং পুঁজ বের করতে সাহায্য করবে। দিনে কয়েকবার ১০-১৫ মিনিট করে সেঁক দিন।
বাইরে থেকে চাপ দিয়ে না ফাটানো:
ফোঁড়া নিজে থেকে ফেটে যাওয়া পর্যন্ত কোনোরকম চাপ প্রয়োগ করবেন না। ফোঁড়া ফাটলে, সেখান থেকে বের হওয়া পুঁজ পরিষ্কার করে ফেলুন এবং অ্যান্টিসেপটিক লাগান।
অ্যান্টিবায়োটিক মলম:
কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম বা মলম ব্যবহার করুন, যদি ডাক্তার সুপারিশ করেন। এটি ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
হাইড্রেশন ও পুষ্টি:
অপরিস্কার জায়গায় খেলাধুলা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।নিশ্চিত করুন যে বাচ্চা পর্যাপ্ত জল পান করছে এবং ভালমানের পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছে। ভালো পুষ্টি এবং হাইড্রেশন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যা ইনফেকশন মোকাবিলায় সাহায্য করে।
পোশাক পরিবর্তন ও পরিষ্কার রাখা:
নিশ্চিত করুন যে বাচ্চা পরিষ্কার ও আরামদায়ক পোশাক পরে আছে এবং যে জায়গায় ফোঁড়া আছে তা বার বার ঘষা লাগছে না।
চাপ এড়িয়ে চলা:
ফোঁড়ার উপর কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করা যাবে না, কারণ এটি ব্যথা বাড়াতে পারে এবং ইনফেকশন আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বাচ্চাকে সচেতন করা:
বাচ্চাকে বোঝান যে ফোঁড়ার জায়গায় হাত দেওয়া বা খোঁচানো উচিত নয়, কারণ এটি ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া:
যদি ফোঁড়া বড় হয় বা উন্নতি না দেখা যায়, বা যদি বাচ্চার জ্বর হয় বা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ফোঁড়া হলে কী কী খাওয়াবেন শিশুকে?
নিচে এমন কিছু খাবারের রেসিপি দেওয়া হলো, যা ফোঁড়ার প্রদাহ হ্রাস করতে সাহায্য করবে এবং শরীরকে পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করবে।
চিকেন স্যুপ:
উপকরণ:
চিকেন ব্রেস্ট: ২০০ গ্রাম,গাজর: ২টি, কুচি করাআলু: ১টি, কুচি করা পেঁয়াজ: ১টি, কুচি করা রসুন: ৪ কোয়া, মিহি কুচি চিকেন স্টক: ৪ কাপ ধনেপাতা: সামান্য, লবণ ও গোলমরিচ: স্বাদমতো
প্রণালী:
১. প্যানে চিকেন ব্রেস্ট সেদ্ধ করে নিন।
২. একই প্যানে পেঁয়াজ ও রসুন ভেজে নিন যতক্ষণ না পেঁয়াজ নরম হয়।
৩. গাজর, আলু ও চিকেন স্টক যোগ করুন এবং সব উপকরণ সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
৪. চিকেন কুচি করে স্যুপে মিশিয়ে দিন।
৫. লবণ ও গোলমরিচ দিয়ে স্বাদ ঠিক করুন।
৬. ধনেপাতা দিয়ে সাজিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
আদা চা:
উপকরণ:
আদা: ১ ইঞ্চি টুকরো, জল: ১ কাপ, মধু: ১ চামচ (ঐচ্ছিক)
প্রণালী:
১. জল ফোটান।
২. আদা যোগ করুন এবং ১০ মিনিট ধরে নিম্ন তাপে সিদ্ধ করুন।
৩. চা ছেঁকে নিন।
৪. মধু মিশিয়ে গরম গরম শিশুকে খেতে দিন।আদা চা প্রদাহ হ্রাস করে এবং শরীরের প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়।
হলুদ দুধ:
উপকরণ:
দুধ: ১ কাপ,হলুদ গুঁড়া: ১/২ চা চামচ,মধু: ১ চামচ (ঐচ্ছিক)
প্রণালী:
১. দুধ গরম করুন এবং তাতে হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে নিন।২. দুধ ফুটে উঠলে আঁচ থেকে নামিয়ে নিন।
৩. মধু মিশিয়ে গরম গরম আপনার শিশুকে খাওয়ান।হলুদ দুধ প্রাকৃতিক প্রদাহ হ্রাসকারী হিসেবে কাজ করে এবং শরীরকে আরাম দেয়।