উচ্ছে ডাল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ উপকারী উপকরন বটে কারণ এতে বেশ কিছু বিশেষ রাসায়নিক যৌগ রয়েছে যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সহায়ক।
কিভাবে উচ্ছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হল:
চারান্টিন:
উচ্ছেতে চারান্টিন নামক একটি বিটার যৌগ থাকে, যা প্রাকৃতিক রূপে রক্তের সুগার মাত্রা কমাতে সহায়ক।
পলিপেপটাইড-পি:
উচ্ছেতে এক ধরনের ইনসুলিনের মতো পলিপেপটাইড থাকে যা পলিপেপটাইড-পি নামে পরিচিত। এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে কাজ করে, যা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য উপকারী।
মোমরডিসিন:
এটি আরেকটি বিটার যৌগ যা করলা বা উচ্ছেতে পাওয়া যায় এবং এটি প্যানক্রিয়াসের বিটা কোষগুলিকে ইনসুলিন উৎপাদনে উদ্দীপ্ত করে থাকে।
হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব:
উচ্ছে একটি স্বাভাবিক হাইপোগ্লাইসেমিক খাদ্য, যা ধীরে ধীরে রক্তে গ্লুকোজ নির্গমন ঘটায় এবং সুগারের আকস্মিক বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।
এন্টি-অক্সিডেন্ট গুণাগুণ:
উচ্ছে এন্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা শরীরের ক্ষতিকারক রার্ডিক্যালগুলি দূর করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস সম্পর্কিত ক্ষতি হ্রাস করতে পারে।
ফাইবার সমৃদ্ধ:
ফাইবার ধীরে ধীরে হজম হওয়ার ফলে খাবার থেকে গ্লুকোজের শোষণ ধীর হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা আস্তে আস্তে বাড়ে, যা আকস্মিক রক্ত সুগার বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।
কী পদ্ধতিতে আপনি উচ্ছে ডাল খাবেন?
উচ্ছে ডাল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার যা গরমের দিনে খেতে পারেন। এটি বানানো সহজ এবং তার উপকারিতাও অনেক। উচ্ছে ডালের কিছু রেসিপি নিচে দেওয়া হলো:
উপকরণ:
মসুর ডাল বা মুগ ডাল: ১ কাপ, (সেদ্ধ করা)উচ্ছে (করলা): ২-৩টি, (ছোট ছোট টুকরো করে কাটা)পেঁয়াজ: ১টি, (কুচি করা)রসুন: ২-৩ কোয়া, (মিহি করে কুচি)আদা: ১ ইঞ্চি টুকরো, (মিহি করে কুচি)হলুদ গুঁড়ো: ১ চা চামচ,লবণ: স্বাদমতো,তেল: ২ টেবিল চামচ,কাঁচা মরিচ: ২-৩টি (অপশনাল),ধনে পাতা: সাজানোর জন্য,
প্রণালী:
প্রথমে একটি পাত্রে তেল গরম করে পেঁয়াজ, আদা, ও রসুন দিয়ে ভাজুন যতক্ষণ না পেঁয়াজ সোনালী হয়।এবার উচ্ছে যোগ করুন এবং মাঝারি আঁচে ৫-৭ মিনিট ভাজুন।হলুদ গুঁড়ো ও লবণ দিয়ে আরো কিছু মিনিট নেড়ে চেড়ে নিন।সেদ্ধ ডাল এবং পর্যাপ্ত পানি দিয়ে ডাল দিয়ে দিন এবং ভালো করে মিশিয়ে নিন।ডাল ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে দিন এবং ডাল ঘন হয়ে আসা পর্যন্ত রান্না করুন।
কীভাবে তাজা উচ্ছে বাছাই করবেন?
রঙ পরীক্ষা করুন:
তাজা উচ্ছে সাধারণত উজ্জ্বল সবুজ রঙের হয়। যে উচ্ছেগুলি হালকা বা ফ্যাকাশে সবুজ, তাদের এড়িয়ে চলুন কারণ এগুলি পুরনো বা অপরিপক্ক হতে পারে।
দৃঢ়তা যাচাই করুন:
উচ্ছে দৃঢ় ও শক্ত হওয়া উচিত। নরম বা লতানো উচ্ছে সাধারণত পুরনো হয়ে যায়। দৃঢ় উচ্ছে চাপ দিলে সহজে বাঁকা বা ভাঙবে না।
সাইজ ও আকৃতি:
মাঝারি আকারের উচ্ছে সাধারণত সেরা হয়। অতিরিক্ত বড় উচ্ছে শক্ত এবং রুক্ষ হতে পারে যা রান্নার সময় কঠিন এবং বেশি তেতো হয়।
পৃষ্ঠের অবস্থা:
পৃষ্ঠে দাগ বা ক্ষতের লক্ষণ না থাকা উচিত। দাগ বা ক্ষত থাকলে তা পচন বা কীটের আক্রমণের ইঙ্গিত দেয়।
স্বাদ এবং গন্ধ:
যদিও কেনার আগে স্বাদ নেওয়া সম্ভব নয়, তবুও যদি উচ্ছে খুব বেশি তেতো গন্ধ ছড়ায়, তাহলে তা খুব পুরনো বা অতিরিক্ত পরিপক্ক হতে পারে।এমন উচ্ছে না নেওয়া ভালো।
উচ্ছে ডালের আরও কিছু উপকারিতা :
পাচনশক্তি বৃদ্ধি:
উচ্ছে ডাল ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা পাচনতন্ত্রকে ভালো রাখে। ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং নিয়মিত মলত্যাগ সহায়তা করে।
ত্বকের স্বাস্থ্য:
উচ্ছে এন্টি-ব্যাক্টেরিয়াল ও এন্টি-ইনফ্লামেটরি গুণাবলী সম্পন্ন, যা ত্বকের সমস্যা যেমন একজিমা ও একনে দূরীকরণে সহায়ক।
হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য:
উচ্ছে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কারণ এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা হৃদযন্ত্রের সমস্যা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ:
উচ্ছে ডাল ভিটামিন C, কে, এবং বি ভিটামিনের পাশাপাশি আয়রন, ম্যাগনেসিয়ামে পূর্ণ যা আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।