গন্ধ একটু ঝাঁঝালো, স্বাদ তেতো – কিন্তু রসুনের গুণের কাছে ওসব কিছুই না! বহু যুগ ধরে রান্নাঘরেই নয়, হাজার রকম রোগের ওষুধ হিসেবেও রসুনের ব্যাপক ব্যবহার হয়েছে। সারা পৃথিবীর নানা রকম খাবারে রসুনের উপস্থিতি শুধুই স্বাদ বাড়ানোর জন্য নয়, কাঁচা রসুন খেলে শরীরের জন্য অবিশ্বাস্য রকম উপকার পাওয়া যায়।
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল:
রসুনের ভেতরে থাকে অ্যালিসিন নামের একটা জিনিস। রসুনের কোয়া কুচি করলে বা চিবোলে এই অ্যালিসিন বেরিয়ে আসে। এই জিনিস নানারকম সংক্রমণের সাথে লড়াই করতে পারে, ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। কাঁচা রসুন খেলে, বিশেষ করে সর্দি-কাশির মরশুমে, তা প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে কাজ করতে পারে। ফলে রোগের তীব্রতা কমে, সেরে ওঠাও যায় তাড়াতাড়ি।
হার্টের বন্ধু:
যাদের রক্তচাপ বেশি থাকে, বা কোলেস্টেরল বেড়ে যায়, তাদের জন্য কাঁচা রসুনের উপকারিতা অনেক। নিয়মিত কাঁচা রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল দুটোই কমাতে সাহায্য করতে পারে। রসুনে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রক্তনালীর ভেতরে প্লাক জমতে দেয় না, ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।
প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার:
রসুনের গন্ধের জন্য দায়ী যে সালফার কম্পাউন্ডগুলো, তারা শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দিতেও দারুণ কার্যকরী। লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতে রসুন খুবই উপকারী। নিয়মিত খাবারের সাথে একটু কাঁচা রসুন রাখলে শরীর থেকে টক্সিন বেরিয়ে যায়, এবং লিভারের নানা রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ:
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যারা রসুন খায়, তাদের পাকস্থলী, কোলন, অন্ননালী, অগ্ন্যাশয়, এবং স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। রসুনে থাকা বায়োঅ্যাক্টিভ উপাদানগুলো ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি আটকাতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ:
যাদের ডায়াবেটিস আছে বা ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তাদের জন্য রসুন খাওয়া উপকারী। ইনসুলিনের প্রতি শরীরের সংবেদনশীলতা বাড়াতে রসুন সাহায্য করে, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কীভাবে খাবেন কাঁচা রসুন?
সবাই যে সরাসরি একটা রসুনের কোয়া কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারবে তা নাও হতে পারে। কিন্তু খাবারে কিছুটা রসুন না দিলে যেন রান্না অসম্পূর্ণ থেকে যায়! এখানে কিছু সহজ উপায় দেওয়া হলো কীভাবে খাবারে রসুনের ব্যবহার করে স্বাদ বাড়ানো যায় ও উপকারিতা পাওয়া যায়:
মধুতে ভিজিয়ে রসুন:
রসুন কুচি করে মধুর সাথে মিশিয়ে কয়েকদিন রেখে দিন। এক চামচ মধু-রসুনের মিশ্রণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দারুণ, আবার চায়ের মধ্যে বা সালাদে ড্রেসিং হিসেবেও দিতে পারেন।
সালাদে :
রসুন কুচি করে হোমমেড সালাদের ড্রেসিংয়ে দিতে পারেন, বা অ্যাভোকাডো দিয়ে বানানো গুয়াকামোল বা হামুসের মধ্যে মেশাতে পারেন।
গার্লিক ব্রেড স্প্রেড:
নরম মাখন বা অলিভ অয়েলের সাথে কুচনো রসুন মিশিয়ে পাউরুটির ওপর মাখিয়ে একটু ব্রয়ল করুন। কাঁচা খাওয়ার চেয়ে স্বাদ একটু নরম হবে, উপকারিতা কিন্তু পাবেন অনেকটাই।
স্যুপের সাথে :
স্যুপ, স্টু, বা পিৎজার ওপরে একটু কুচনো রসুন ছড়িয়ে দিন পরিবেশণের ঠিক আগে। এতে সতেজ রসুনের ফ্লেভার পাবেন এবং শরীর ভালো থাকার নিশ্চয়তাও পাবেন।
কাঁচা রসুনের অনেক উপকারিতা থাকলেও খাওয়ার পরিমাণ সীমিত রাখা ভালো। বেশি রসুন খেলে বুক জ্বালা করা, পেটের সমস্যা হতে পারে, বা যাদের রক্ত পাতলা হওয়ার সমস্যা আছে তাদের রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়তে পারে। রক্ত পাতলা করার ওষুধ বা অন্য ওষুধ খেলে, একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেওয়া উচিত কাঁচা রসুন খাওয়ার আগে।
কাঁচা রসুনের উপকারিতার কথা মাথায় রেখে খাবারে নিয়মিত জায়গা করে দেওয়া উচিত এই প্রাকৃতিক উপাদানটিকে। এর ঝাঁঝালো গুণাবলী শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতেও বেশ কার্যকরী।