উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশের সাথে সাথে রাজ্য জুড়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আনন্দ উচ্ছ্বাস মিলিত একটি অবস্থা চলছে । অনেকেই দীর্ঘ অধ্যাবসায়ের পর পেয়েছেন কাক্ষিত সাফল্য , আবার অনেকের রেজাল্ট মনঃপুত হয়নি । এসবের বাইরে এই সময়ে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী কোন দিকে এগোবে , এখনই নিতে হবে সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যার উপরে নির্ভর করছে গোটা জীবন । তাই এই সময়ে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ ।
সায়েন্স আর্টস বা কমার্স যে যে স্ট্রিমেই পড়াশোনা করে থাকুক না কেন আগামী দিনে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে প্রত্যকেরই মুখোমুখি হতে হবে এক চূড়ান্ত প্রতিযোগিতামূলক কাজের বাজারে । তাই শিক্ষার্থীর মেইন স্ট্রীম যাই হোক অর্থাৎ যে বিষয়েই গ্রাজুয়েশান করুক না কেন তার প্যারালাল ভাবে বেশ কিছু দিকে দক্ষতা বাড়ানো জরুরী যাতে আগামী দিনের ভয়ংকর প্রতিযোগিতামূলক কাজের বাজারে সে অনেকটাই এগিয়ে থাকে ।
তেমনই তিনটি কোর্সের সন্ধান দেওয়া হল যেগুলি আগামীর চাকরির বাজারে অনেকটাই নিশ্চয়তা দেবে , সায়েন্স আর্টস বা কমার্সের ছাত্রছাত্রীরা তাদের মেইন পড়াশোনার পাশাপাশি এগুলি স্বচ্ছন্দে করতে পারবে ।
ক্যারিয়ার নিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ওয়েব ডিজাইন, পাইথন প্রোগ্রামিং ও ডেটা সায়েন্স, এবং সাইবার সিকিউরিটি – এইসব বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা যেতে পারে। কারণ, কাজের বাজার খুব দ্রুত এসবের দিকে এগোচ্ছে। ভবিষ্যতে কাজের ক্ষেত্রেও এই দক্ষতাগুলির প্রচুর চাহিদা থাকবে।
ওয়েব ডিজাইন:
যেভাবে ডিজিটাল জগৎ দিন দিন বেড়ে চলেছে, তাতে দক্ষ ওয়েব ডিজাইনারের চাহিদা থাকবেই। সব ধরনের সংস্থা নিজেদের ডিজিটাল উপস্থিতি শক্তিশালী করতে চায়। আর ওয়েব ডিজাইনাররা সুন্দর ইন্টারফেস তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ওয়েব ডিজাইনে পারদর্শিতা ডিজিটাল মার্কেটিং, UI/UX ডিজাইন, এমনকি ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো নানান ক্যারিয়ারের দুয়ার খুলে দেয়।
পাইথন প্রোগ্রামিং এবং মেশিন লার্নিং ও ডেটা সায়েন্স:
পাইথন সহজ ও বহুমুখী একটি প্রোগ্রামিং ভাষা। বিশেষ করে যেভাবে ডেটা সায়েন্সের জগৎ এগিয়ে চলেছে, তাতে পাইথন জানা প্রোগ্রামারদের কদর থাকবেই। কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে এখন ডেটা বিশ্লেষণের ভূমিকা অনেক। পাইথন ও ডেটা সায়েন্সে দক্ষতা থাকলে বড় বড় টেক কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কিংবা স্টার্ট-আপ – সব জায়গাতেই কাজের সুযোগ আছে। ডেটা সায়েন্সের কাজে প্রতিযোগিতামূলক বেতন তো পাওয়া যায়ই, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, বিগ ডেটা নিয়ে নিত্যনতুন যে উন্নতি হচ্ছে তাতেও অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
সাইবার সিকিউরিটি:
সাইবার-হুমকি যত বাড়ছে, ততই সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে এথিক্যাল হ্যাকার থেকে শুরু করে সিকিউরিটি অ্যানালিস্ট – নানান ধরণের কাজ আছে এবং সবগুলোরই গুরুত্ব অপরিসীম। কোনো সংস্থার ডেটা এবং অবকাঠামোর সুরক্ষা দেওয়ার কাজ সাইবার সিকিউরিটি পেশাদাররা করেন। এই পেশাতে বেতন ভালো হওয়ার পাশাপাশি চাকরি নিয়েও চিন্তা নেই বললেই চলে, কারণ সব ইন্ডাস্ট্রিতে সাইবার সিকিউরিটির প্রয়োজন আছে।
এইসব কোর্স আর্টস, কমার্স, সায়েন্স – যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের পড়ুয়ারাই করতে পারে। কোর্সের পড়াশোনাটাও প্র্যাকটিক্যাল এবং প্রজেক্ট-ভিত্তিক হয়, যাতে শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি হয়।
নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি এইসব কোর্স করা চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা যখন বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতার সঙ্গে মিলিত হয়, তখন চাকরিদাতারা তাদের আলাদা করেই লক্ষ্য করেন।
কোথায় শিখবেন ?
এই কোর্স গুলি শেখার জন্য অফলাইনে যেমন বহু প্রতিষ্ঠান আছে , তেমনই অনলাইনের প্রতিষ্ঠান গুলিও বিখ্যাত Skillshare বা Udemy থেকে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষকদের থেকে শিখতে পারবেন এছাড়া ইউটিউবেও অনেক ভালো চ্যানেল আছে যারা এ বিষয়ে শিক্ষা দেয় । বাংলাতে শিখতে চাইলে Vidyastu সহ আরও নানান প্রতিষ্ঠান আছে ।
ওয়েব ডিজাইন, পাইথন প্রোগ্রামিং, ডেটা সায়েন্স, এবং সাইবার সিকিউরিটি এই বিষয়গুলো বেছে নিলে শুধু বর্তমানের কাজের জন্যই নিজেকে প্রস্তুত করবে এমন নয় , ভবিষ্যতে যেসব নতুন নতুন পেশার জন্ম হবে তার জন্যেও তৈরি হয়ে যাবে । বিশ্ব অর্থনীতি এবং প্রযুক্তির দিকে তাকালে এই দূরদর্শিতা খুবই জরুরী ।