গ্রীষ্মের প্রখর রোদে প্রাণ জুড়াতে যেমন তালের শাঁসের জুড়ি নেই, তেমনি এর রয়েছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা। বাংলাদেশ, ভারত সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বহু প্রাচীনকাল থেকেই তালের শাঁসের ব্যাপক জনপ্রিয়তা । এই জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র যে এর স্বাদের জন্য তা নয় , স্বাদের পাশাপাশি এতে রয়েছে এমন সব গুনাগুণ যা জানলে অবাক হতে হয় ।
প্রাকৃতিক উপাদানে সমৃদ্ধ তালের শাঁস:
- জল: তালের শাঁসের ৮০ শতাংশেরও বেশি হলো জল । এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। বিশেষত গরমের সময় ঘামের সাথে যে জল ও ইলেক্ট্রোলাইট বেরিয়ে যায়, তা পূরণে তালের শাঁস বেশ কার্যকরী।
- ফাইবার : দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় উভয় প্রকারের ফাইবার রয়েছে তালের শাঁসে। দ্রবণীয় ফাইবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, অন্যদিকে অদ্রবণীয় ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হজমের উন্নতি ঘটায়।
- ভিটামিন:
- ভিটামিন এ: চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে, ত্বকের সুরক্ষা দেয়, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- বি ভিটামিন: বি ভিটামিন কমপ্লেক্স শরীরের বিপাক ক্রিয়া, শক্তি উৎপাদন, স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা, এবং রক্তকণিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- ভিটামিন সি: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ক্ষত নিরাময়ে, ত্বকের কোলাজেন তৈরিতে, এবং আয়রন শোষণে ভিটামিন সি’র গুরুত্ব অপরিসীম।
- খনিজ লবণ:
- পটাশিয়াম: পেশির সঠিক কার্যকারিতা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- ক্যালসিয়াম: হাড় ও দাঁত মজবুত করে, এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
- ফসফরাস: শক্তির উৎপাদনে, কোষের কার্যকারিতায়, এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় অবদান রাখে।
- ম্যাগনেসিয়াম: পেশি ও স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যকারিতা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: ফ্রি র্যাডিকালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করে তালের শাঁসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি বার্ধক্যজনিত নানা রোগ প্রতিরোধ করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে তাল শাঁস
মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই) হলো মূত্রনালীর বিভিন্ন অংশে, যেমন মূত্রথলি, মূত্রনালী, এমনকি কিডনিতেও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। এই সংক্রমণের ফলে প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ, তলপেটে ব্যথা, জ্বর ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। মূত্রনালীর সংক্রমণ যেকোনো বয়সী নারী-পুরুষের হতে পারলেও নারীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। তালের শাঁসে থাকা বিভিন্ন উপাদান প্রাকৃতিকভাবেই ইউটিআই প্রতিরোধে সাহায্য করে:
- প্রচুর পরিমাণে জল : তালের শাঁসে প্রায় ৮০% জল থাকে। এই জল মূত্রের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, ফলে মূত্রনালীতে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধুয়ে বেরিয়ে যায়।
- ক্ষারধর্মী প্রভাব: তালের শাঁসে থাকা খনিজ লবণ শরীরের অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে। এটি মূত্রের pH মাত্রাকে সামান্য ক্ষারধর্মী করে তোলে, যা ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর পরিবেশকে প্রতিকূল করে তোলে।
- প্রদাহ-বিরোধী উপাদান: তালের শাঁসে থাকা কিছু উপাদান প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ফলে ইউটিআই এর কারণে মূত্রনালীতে যে প্রদাহ হয়, তা কমে যায় এবং আরাম পাওয়া যায়।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: তালের শাঁসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মূত্রনালীর কোষগুলোকে সুস্থ রাখে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ায়।
তালের শাঁসের অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা:
- ত্বকের সুরক্ষা ও উজ্জ্বলতা: তালের শাঁসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, ত্বককে সুন্দর ও উজ্জ্বল রাখে। তালের শাঁসের পেস্ট ত্বকে লাগালে ত্বকের প্রদাহ কমে এবং সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: কম ক্যালরি এবং প্রচুর ফাইবার থাকায় তালের শাঁস পেট ভরা রাখে, ফলে ক্ষুধা কমে এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখে।
- হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য: তালের শাঁসে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা হৃদযন্ত্রের সুস্থতার জন্য জরুরী। এছাড়াও এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: তালের শাঁসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষের ক্ষতি রোধ করে, বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধ করে।
সতর্কতা: যাদের কিডনির সমস্যা আছে বা ডায়াবেটিস আছে, তারা অতিরিক্ত তালের শাঁস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।