কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) হল আধুনিক যুগের এক বিস্ময় । মানুষের সৃজনশীলতা ও কল্পনা যে কতদূর যেতে পারে তার চুড়ান্ত নিদর্শন হল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা AI । এটি কোনো যন্ত্র নয় বরং যন্ত্রকে মানুষের মত করে তোলাই হল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা AI এর লক্ষ্য । যন্ত্রগুলিকে চিন্তা করা নতুন বিষয় শেখা এবং মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এই রূপান্তরকারী প্রযুক্তি শুধু শিল্পকেই নতুন রূপ দেয়নি, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গঠনকেও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। জেনারেল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AGI) আবির্ভাবের সাথে সাথে আমরা যখন একটি নতুন যুগের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি, তখন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের চাকরির ভবিষ্যৎ এবং চারপাশের সামাজিক পরিবর্তনের উপরে এ কেমন ভাবে প্রভাব ফেলবে তাঁর একটা আঁচ ইতিমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে ।
আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্সঃ সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত
আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স বা AGI-এর মূলে আছে সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI , যা হল অ্যালগরিদম এবং গণিতীয় তত্ত্বের এক সম্মিলন, যা মানব মনের কগ্নিটিভ ক্রিয়াকলাপগুলিকে অনুকরণ করার লক্ষ্যে তৈরি। স্বাস্থ্যসেবা থেকে পরিবেশ বিজ্ঞান, আর্থিক খাতে AI-এর ব্যবহার প্রতিফলিত হয়েছে, যা কার্যকারিতা এবং নির্ভুলতায় মানুষের সক্ষমতাকেও অতিক্রম করেছে। ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এর জটিলতা এবং মেশিন লার্নিং মডেলের নির্ভুলতা থেকে শুরু করে ডিপ লার্নিং নেটওয়ার্কের ভবিষ্যদ্বাণীপূর্ণ দক্ষতা – AI এমন কাজগুলিকে দক্ষতা এবং নির্ভুলতার সাথে সম্পাদন করার যে অদ্ভুত ক্ষমতা ইতিমধ্যেই দেখিয়েছে তা বলতেগেলে মানুষের ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যায়।
স্বাস্থ্যসেবার মতো ক্ষেত্রে, AI-চালিত ডায়াগনস্টিকস দ্রুত গতিতে এবং নির্ভুলতার সাথে চিকিৎসার তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারে, যা রোগের প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক নতুন পথ খুলে দেয় । পরিবেশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, AI সিস্টেম আবহাওয়ার প্রায় নির্ভুল পূর্বাভাস দিচ্ছে । AI-এর ফ্রড সনাক্তকরণ, বিনিয়োগ পরিচালনা এবং দৈনন্দিন জীবনের ছোটো বড় নানান সমস্যায় করছে প্রফেশনাল গাইড ।
আগামীতে কী হতে পারে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মানুষের চিন্তা-চেতনা, শেখা এবং অভিযোজনের ক্ষমতা মেশিনে স্থাপনের অভিপ্রায় থেকে জন্ম নিয়ে নানা শিল্পক্ষেত্রকে পুনর্নির্মাণ করেছে। এখনো পর্যন্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) –এর এই অগ্রগতিগুলি যতই উল্লেখযোগ্য হোক না কেন সেগুলি হিমশৈলের শুধুমাত্র চূড়া, আগামী কয়েক বছর পরে তা কোথায় গিয়ে থামবে তা এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না । AI গবেষণার মূল লক্ষ্য হল জেনারেল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AGI) এর বিকাশ । এজিআই এর লক্ষ্য হল এমন এক ভবিষ্যত যেখানে মেশিনগুলি জটিল সমস্যা সমাধানে মানুষের মতো কাজ করতে পারে । AGI এমন একটি ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয় যেখানে মেশিনগুলি বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলির সমাধান তৈরি করা পর্যন্ত জটিল সমস্যাগুলি সূক্ষ্ম বোঝাপড়া এবং সৃজনশীলতার সাথে মোকাবিলা করতে পারে।
তাহলে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ
AI এবং AGI-এর কারণে বিপুল পরিমান মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে এটা যেমন নিশ্চিত তেমনই নতুন কাজের সম্ভাবনাও তৈরি হবে এটাও জোর দিয়ে বলা যায় । আমাদের উচিৎ ভবিষ্যতের জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করার জন্য শিক্ষা এবং নানান সৃজনশীল পরিকল্পনা পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে অনুশীলন করা , বিশেষ করে জোর দিতে হবে সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধান এবং মানসিক বুদ্ধিমত্তার উপর – এমন দক্ষতা তৈরি করতে হবে যা অদূর ভবিষ্যতে মেশিনগুলির দ্বারা করার সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ হয় হতে হবে ক্রিয়েটিভ বা উৎপাদক অথবা সুপার ইন্টেলিজেন্ট নইলে আগামীর পৃথিবীতে আপনার পক্ষে টিকে থাকা কষ্টকর ।
আমরা AI বাদ দিয়ে বাঁচতে পাব না বরং AI সত্যি এটা মেনে নিয়ে এর সম্পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে যাতে করে অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করে একই সঙ্গে আমাদের উৎপাদনকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এই প্রযুক্তিগত বিবর্তনের যাত্রায় আপনিও সহযাত্রী হতে পারেন, যেখানে মানুষ ও মেশিন একসাথে নতুন সমৃদ্ধির এক নতুন প্যারাডাইম গড়ে তুলবে।
এটা সবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মানব বুদ্ধিমত্তার একটা সৃষ্টির মাহেন্দ্রক্ষণ । সবচেয়ে মেধাবী সৃষ্টিগুলি এখনও আসতে বাকি, যা এমন ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে যেখানে প্রযুক্তি ও মানুষ অকল্পনীয় উপায়ে একীভূত হবে।