পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে বিজেপি রেখা পাত্রকে প্রার্থী হিসাবে মাঠে নামিয়েছে, যিনি তৃণমূল কংগ্রেসের বহিস্কৃত নেতা শেখ শাহজাহান এবং তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই প্রতিবাদের শুরু হয়েছিল স্থানীয় মহিলাদের উপর যৌন হয়রানির অভিযোগ থেকে, কিন্তু ধীরে ধীরে এটি রাজ্যের দুর্নীতি এবং নিরাপত্তার বিরুদ্ধে এক জোরালো কণ্ঠস্বর হয়ে দাঁড়ায় ।
সন্দেশখালির আন্দোলন বিজেপির হাত ধরে সর্বভারতীয় রাজনীতির আঙিনায় পৌঁছেছে । এলাকাজুড়ে এখন উড়ছে গেরুয়া পতাকা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বঙ্গের রাজনৈতিক সভায় বারবার সন্দেশখালির ইস্যুটি তুলে ধরেছেন এবং বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী সেখানে বাড়ি ভাড়া নেওয়ার কথাও বলেন । বিজেপি যে সন্দেশখালি ইস্যুটিকে সহজে ছাড়বেনা তার আভাস আগেই পাওয়া গিয়েছিলো । রেখা পাত্রকে প্রার্থী করার মধ্য দিয়ে তা আবারো প্রমাণিত হল ।
তবে বিজেপি এই আন্দোলন থেকে ফায়দা তুলতে প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিল । বিজেপির সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে সাধারণ মানুষ । স্থানীয় মহিলারা বলছেন , এখানে দুর্নীতি এবং জোর করে জমি দখল করেছে এটা সকলেই জানে । কিন্তু এই কাজগুলি করেছে কে? তৃণমূলের নেতারা। শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দার — এরা সবাই হিন্দু। শাহজাহান এদের নেতা । এরা সকলে মিলে সংগঠিত ভাবে অপরাধ করেছে , ধর্ম দেখে কাউকে রেয়াত করেনি ।
এখানে অপরাধটাই বড় ধর্মটা নয় ।
বিজেপির প্ররোচনায় নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে চাপা উত্তেজনা, বাড়ছে হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মধ্যাকার দূরত্ব । সন্দেশখালিতে বহুবছর ধরে হিন্দু এবং মুসলিমের একসাথে সহবস্থান । এখানে আদিবাসী সম্প্রদায় মোট ভোটারদের প্রায় ৩৫% , ধর্মীয় ভিত্তিতে হিন্দুই সংখ্যগরিষ্ঠ ৭০% , বাকিরা মুসলমান ।
স্থানীয় বসিন্দা মহম্মদ মাসিয়ার বলেছেন, দুর্বৃত্তরা ধর্মের দিকে তাকায়নি, তারা আমার জমি কেড়ে নিয়েছে এবং আমাকে বেকার করে দিয়েছে, আজকে আমার হাতে কোনো কাজ নেই । তারা কাউকে ছাড়েনি, না হিন্দু না মুসলমান ।
বিজেপির প্রার্থী হিসেবে রেখা পাত্রকে ঘোষণা করার আগে থেকেই স্থানীয় মহিলারা রাজনৈতিক লাভের স্বার্থে ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। তারা বলেছেন, আমরা শিবু এবং উত্তমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি, শাহজাহান তাদের গুরু । ওরা অনেক মুসলমানের জমিও কেড়ে নিয়েছে । অত্যাচারের সময় হিন্দু মুসলমান বাদবিচার করেনি ।
সিপিআইএম নেতা নিরপদ সর্দার বলেছেন, তৃণমূল একটা মেশিনারী যেটা সমস্ত অপরাধীরা মিলে নিয়ন্ত্রণ করে , তবে এর পাশাপাশি তিনি বিজেপির এই বিভাজনের রাজনীতিরও তীব্র নিন্দা করেন ।