ইঞ্জিনিয়ার্ড আর্টস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবটিক্সের সমন্বয়ে তৈরি করেছে ‘Ameca’ নামে একটি অত্যাধুনিক রোবট । এটিকে পৃথিবীর এখনও পর্যন্ত তৈরি হওয়া সবচেয়ে অ্যাডভান্সড হিউম্যানয়েড রোবট মনে করা হচ্ছে । হেরিওট-ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয় এবং এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় নির্মিত এডিনবার্গের ন্যাশনাল রোবোটারিয়ামে রাখা আছে এই রোবটটিকে , এটি যুক্তরাজ্যের রোবোটিক্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রিসার্চের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ।
Ameca-কে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে সে মানুষের সাথে অসাধারণ সাবলীল ও স্বাভাবিক ভাবে কথাবার্তা বলতে পারে। মানুষের মতো করে কথা বলার, এমনকি মুখের ভাব-ভঙ্গি প্রকাশ করার ক্ষমতা রাখে Ameca। রোবটটি বিভিন্ন ধরনের আবেগ প্রকাশ করতে পারে – কখনো আনন্দিত, আবার কখনো গভীরভাবে চিন্তিত , সব আবেগই ইতিমধ্যেই রপ্ত করে ফেলেছে সে । এই বিষয়গুলোই তাকে মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে বিশেষভাবে সক্ষম করে তুলেছে । রোবটটির অনেকগুলো অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশের মধ্যে আছে এমবেডেড মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, মুখ চেনার সফটওয়্যার, আর মোটরে চালিত খুঁটিনাটি অংশ, যেগুলোর কারণেই এই সূক্ষ্ম কথাবার্তা সম্ভব হয়।
Ameca-কে আনার মূল উদ্দেশ্য হল রোবোটিক্স এবং AI এর মতো জটিল প্রযুক্তি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ভ্রান্ত ধারণা আছে, সেগুলো দূর করে প্রযুক্তিগুলোর সম্ভাব্য উপকারিতা সম্পর্কে একটা গভীর সচেতনতা তৈরি করা। Ameca-র ক্ষমতাগুলোকে সামনে এনে ন্যাশনাল রোবোটারিয়াম আশা করছে সাধারণ মানুষ রোবোটিক্স প্রযুক্তিকে আরও সহজে মেনে নেবে, এবং এ নিয়ে উৎসাহী হবে।
ন্যাশনাল রোবোটারিয়াম শুধু গবেষণা কেন্দ্র নয়, সমাজের সক্রিয় অংশীদারও বটে। যুক্তরাজ্য সরকারের থেকে £21 মিলিয়ন এবং স্কটিশ সরকারের থেকে অতিরিক্ত £1.4 মিলিয়ন অনুদান নিয়ে, রোবোটারিয়াম এডিনবার্গকে ইউরোপের ডেটা ক্যাপিটাল বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে, বিশেষ করে তরুণ ছাত্রছাত্রীদের সামনে Ameca-কে সরাসরি আনা হবে স্কুলে যাওয়া বা ইন্টার্যাক্টিভ ওয়ার্কশপের মাধ্যমে। এই সব অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলো রোবটের সাথে সরাসরি অভিজ্ঞতা তৈরি করা, যার ফলে শেখার প্রক্রিয়াটা উন্নত হবে, এবং রোবোটিক্স আর AI নিয়ে আগ্রহ বাড়বে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে উদ্বোধনের পর থেকে ন্যাশনাল রোবোটারিয়াম ১০০-র ও বেশি ইভেন্ট হোস্ট করেছে, হাজার হাজার ছেলেমেয়েকে এই অভিজ্ঞতা দিতে পেরেছে। মানুষ আর মেশিনের মাঝে যে দেওয়াল, তাকে ভাঙার ক্ষেত্রে, মানুষের বিশ্বাস তৈরি করতে এবং রোবোটিক্স নিয়ে সাধারণ ভ্রান্তি দূর করতে এই ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষামূলক কাজের পাশাপাশি, রোবোটারিয়ামের গবেষকরা Ameca-কে ব্যবহার করছেন হিউম্যানয়েড রোবট সম্পর্কে সাধারণ মানুষের উপলব্ধি এবং মনোভাব নিয়ে গবেষণার জন্য। এই বোধগুলো ভবিষ্যতের প্রযুক্তি তৈরিতে ভীষণ জরুরি। এতে করে সেই সমস্ত প্রযুক্তি মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী, স্বচ্ছ, এবং নৈতিকভাবে দায়বদ্ধ হয়ে তৈরি করা যাবে । আর সেটাই নিশ্চিত করবে রোবোটিক্সের অগ্রগতি হবে মানব কল্যানে ।
ন্যাশনাল রোবোটারিয়ামের চিফ অপারেটিং অফিসার স্টিভ ম্যাকলারেন Ameca-র আগমন নিয়ে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন: “আমাদের মিশন হল অ্যাডভান্সড রোবোটিক্সকে আরও বেশি করে সবার কাছাকাছি নিয়ে আসা, সহজবোধ্য করে তোলা। Ameca-র আগমন সেই কাজে একটা বড়সড় ধাপ। এর ফলে আমরা আমাদের জনসাধারণের সাথে যোগাযোগের প্রক্রিয়াটাকে আরও বাড়াতে পারবো, এবং প্রযুক্তির কীভাাবে দৈনন্দিন জীবনকে উন্নত করতে পারে, সমাজকে উপকৃত করতে পারে, সেটা দেখাতে পারবো।”
ইঞ্জিনিয়ার্ড আর্টসের ফাউন্ডার এবং CEO উইল জ্যাকসনও এই মাইলস্টোন সম্পর্কে নিজের কথা জানিয়েছেন। হিউম্যানয়েড রোবটের সাথে কথোপকথন একটা গভীর অভিজ্ঞতা তৈরি করে বলে তিনি মনে করেন: “Ameca-র মতো AI-এনেবল্ড রোবটের সাথে দেখা হওয়া অনেকের কাছেই অসামান্য একটা অভিজ্ঞতা, আর আমরা আনন্দিত যে এটা আরও অনেকের কাছে পৌঁছেয়ে দিতে পারছি।”