মহাবিশ্বের বয়স যত বাড়ছে, ততই তার চেহারা বদলে যাচ্ছে, অদৃশ্য হাতে কেউ যেন প্রসারিত করতে করতে দিগন্ত পেরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জ্যোতির্বিদদের তীক্ষ্ণ চোখ সেই বিস্ময়কর রূপান্তরের রেশ ধরতে চেয়েছে বারংবার। ব্রহ্মাণ্ডের প্রসারনের বেগ নিয়ে ও রহস্য তেমনই।সেই রহস্যের পর্দা সরাতেই নামলেন মহাকাশের দুই দিকপাল – বয়োজ্যেষ্ঠ হাবল আর আধুনিকতার অগ্রদূত জেমস ওয়েব।
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে হাবল যেন প্রহরীর মতো দূর আকাশের গভীর দিকে চোখ রেখে চলেছে। সদ্য নামা জেমস ওয়েব আরও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে এক অদৃশ্য ছায়ার পিছু নিয়েছে।
ভাবুন তো, সুদূর অতীতে ছুটে যাওয়া মহাবিস্ফোরণের আলোর কণাগুলো ধরে তাদের এই যাত্রা!
বলা হয়ে থাকে, মহাবিশ্ব যত প্রসারিত হয়, আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যও বাড়ে, লালেরদিকে ঝুঁকে পড়ে, যেটাকে ‘রেড শিফট’ বলা হয়। তাঁদের দেখা দূর আকাশের ছায়াপথ আর তারার সেই আলোর বিশ্লেষণ করে হাবল ও জেমস ওয়েব মহাকাশের প্রসারণের বেগ মাপার চেষ্টা করেছেন বারংবার । আর তাতেই দেখা দিয়েছে এই মহাজগতিক চমক।
কয়েক দশক ধরে হাবল মহাবিশ্বের প্রসারণের যে হার মেপেছিল, তা কেন যেন অন্য পর্যবেক্ষণের হিসেবের সাথে মিলছিল না। এ যেন অধরা এক ‘ডার্ক এনার্জি’, যে সম্পর্কে আমরা সামান্যই জানি, হয়তো সে এই প্রসারণে রহস্যময় ভূমিকা রাখছে – এই অনুমান ও বেশ জোরালো হচ্ছিল ক্রমশ। নোবেলজয়ী পদার্থবিদ অ্যাডাম রিস তো স্পষ্টই মনে করেন, এই অমিল হয়তো মহাবিশ্ব নিয়ে আমাদের ধারণায় কোনও ফাঁক আছে বলেই ইঙ্গিত করছে।
হাবলের তোলা ছবির সত্যতা যাচাই করতেই নেমেছিল জেমস ওয়েব। আর উন্নত ইনফ্রারেড ক্ষমতা ব্যবহার করে হাবলের সীমাবদ্ধতাগুলোকে ছাপিয়েও গেলেন তিনি। সেই যৌথ পর্যবেক্ষণ যেন হাবল টেনশনকে সত্যি প্রমাণ করে দিলো – না, এটা শুধুই ভুল পরিমাপের গল্প নয়।সত্যিই মহাবিশ্বের প্রসারণ হচ্ছে ধীর গতিতে।