যাদের উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা যাদের আছে, তাদের খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দেওয়া খুব জরুরি। অনেক ফল ও সবজি স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী হলেও উচ্চ ইউরিক যাদের তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সমস্যা তৈরি করতে পারে । তাই ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ সেটা সবার আগে জানা দরকার ।
ইউরিক অ্যাসিড কি?
ইউরিক অ্যাসিডের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ – পিউরিন আর ফ্রুক্টোজ। অনেক খাবারেই পিউরিন নামের একটা উপাদান থাকে, যা শরীরে হজম হয়ে ইউরিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। পিউরিন যত বেশি খাওয়া পড়বে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডও তত বেশি তৈরি হবে। আরেকটা জিনিস হলো ফ্রুক্টোজ, এটা এক ধরনের চিনি, যা অনেক ফলেই থাকে। ফ্রুক্টোজও শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
শরীর যখন পিউরিন জাতীয় খাবার হজম করে, তখন তা থেকে ইউরিক অ্যাসিড নামে এক প্রকার বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয়। সাধারণত কিডনি রক্ত থেকে এই ইউরিক অ্যাসিড ছেঁকে প্রস্রাবের সাথে বের করে দেয়। কিন্তু যদি শরীর বেশি ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করে অথবা কিডনি ঠিকমত কাজ না করে, তাহলে এই ইউরিক অ্যাসিড জমে যেতে পারে, যার ফলে গাউটের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে বা আরও নানান সমস্যা হতে পারে ।
কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?
উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড থাকলে যেসব ফল ও সবজি এড়িয়ে চলা উচিত, তার মধ্যে আছে:
- মাংস: সমস্ত প্রকারের রেডমিট বাদ দিতে হবে ।
- মাছ: চিংড়ি এবং সাডিন জাতীয় নোনা মাছ বাদ ।
- পালং শাক: পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও পালং শাকে প্রচুর পিউরিন থাকে। যদি ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থাকে, তাহলে শরীর এই পিউরিন থেকে আরও বেশি ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করবে, ফলে গাউট বা কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
- ফুলকপি: ফুলকপিতেও পিউরিন বেশি থাকে। ক্যালরিতে কম ও ফাইবার বেশি হওয়ায় অনেকের জন্য এটি স্বাস্থ্যকর হলেও, এর পিউরিন ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে দিতে পারে।
- মাশরুম: মাশরুমেও পিউরিন বেশি থাকে, তাই এটিও খাওয়া ঠিক নয়।
- মটরশুঁটি: মটরশুঁটিতেও পিউরিন আছে, তাই যাদের ইউরিক অ্যাসিড বেশি, তাদের এটি এড়িয়ে চলা উচিত।
- শতমূলী: শতমূলীতে প্রচুর পরিমাণে পিউরিন থাকে, তাই এটি ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা আছে এমন মানুষদের জন্য ঠিক নয়।
- আপেল ও নাশপাতি: এই ফল দুটিতে পিউরিন না থাকলেও ফ্রুক্টোজ নামে এক ধরনের চিনি থাকে। এই ফ্রুক্টোজ হজম হওয়ার সময় এমন কিছু উপাদান তৈরি হয় যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই, পরিমিত পরিমাণে খেলেই ভালো।
এছাড়া শিম, কচুশাক, বেগুন, টমেটো, ওলকপি , ফলের মধ্যে কলা, আম, লিচু, আনারস, তরমুজ এগুলোতে ফ্রুক্টোজের পরিমাণ বেশি থাকে। এছাড়াও ডাবের পানি, ফলের জুস, মধু—এগুলোতেও ফ্রুক্টোজ থাকে, যা ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে দিতে পারে।
কেন এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন?
এই খাবারগুলিতে থাকা পিউরিন এবং ফ্রুক্টোজ-এর কারণে এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। পিউরিন হল এক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান, যা অনেক খাবারেই পাওয়া যায়। যখন শরীর পিউরিন ভাঙে, তখন ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। শরীরের স্বাভাবিক নিয়মে কিছু ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয় এবং কিডনি সেগুলিকে প্রস্রাবের সাথে বাইরে বেরো করে দেয় কিন্তু বেশি পিউরিন খেলে শরীর এই ইউরিক অ্যাসিড ঠিকমত হজম করতে পারে না, ফলে ইউরিক অ্যাসিড জমতে শুরু করে।
আবার, অনেক ফলে পাওয়া যায় ফ্রুক্টোজ নামে এক ধরনের চিনি, যা ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে দেয়। ফ্রুক্টোজ যখন শরীরে হজম হয়, তখন এমন কিছু উপাদান তৈরি হয় যা ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির কারণ হয়।
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং কিছু সতর্কতা আপনার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ঠিক রাখতে অনেকটাই সাহায্য করবে। তবে শরীর সবার এক রকম না, তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিজের জন্য সঠিক খাবার বেছে নেওয়া সবচেয়ে ভালো।