আমেরিকার বহুজাতিক কোম্পানিগুলি এবার মদ্যপানের বিকল্প হিসেবে গাঁজা দিয়ে তৈরি নতুন ধরনের পানীয় তৈরির দিকে নজর দিচ্ছে। বিশেষ করে আমেরিকার বিয়ার শিল্প মহামারীর পর যখন বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল, তখন এই ধরনের উদ্ভাবনী পানীয় ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন করে চাঙ্গা করার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এমনই এক উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হলো বিশ্বখ্যাত বিয়ার ব্র্যান্ড হাইনেকেনের। তাদের ক্যালিফোর্নিয়ার বিয়ার ল্যাবেল ‘ল্যাগুনিটাস’ নিয়ে এসেছে একেবারে অন্যরকম একটি পানীয় – যেখানে গাঁজার ব্যবহার হচ্ছে !
‘হাই-ফাই হপস’ নামের এই পানীয়টিকে “হপি স্পার্কলিং ওয়াটার” হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে। একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির এই শিল্পে পা বাড়ানো আমেরিকার বিয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করতে পারে। হাই-ফাই হপসে কোনো সাধারণ বিয়ারের মতো না, এতে কোনো অ্যালকোহল নেই। বরং, এতে ব্যবহার হয়েছে গাঁজার একটি মূল উপাদান টিএইচসি (টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল)। ফলে, বিয়ারের মতো অভিজ্ঞতা মিললেও অ্যালকোহল শরীরে প্রবেশ করছে না।
ল্যাগুনিটাস তাদের হাই-ফাই হপসকে একটি আইপিএ-স্টাইল পানীয় হিসেবে প্রচার করছে। হপস এবং গাঁজা বোঝার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা একটি অনন্য পানীয় তৈরি করে ফেলেছে। এই পানীয় দুটি ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে। একটিতে শুধুমাত্র ১০mg টিএইচসি রয়েছে, যেখানে অন্যটিতে ৫mg টিএইচসি এবং ৫mg সিবিডি (ক্যানাবিডিওল) রয়েছে। সিবিডি যোগ করার ফলে তুলনামূলক শান্ত এবং রিল্যাক্সিং অনুভূতি পাওয়া যায়। সিবিডির অ-সাইকোঅ্যাকটিভ বৈশিষ্ট্য এবং সম্ভাব্য চিকিৎসা-সম্পর্কিত উপকারিতার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ার ফলে এই পানীয় আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
প্রতি ক্যান ৮ ডলার দরে, হাই-ফাই হপস ক্যালিফোর্নিয়ার নির্দিষ্ট কিছু ডিসপেন্সারিতে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে মারিজুয়ানার ব্যবহার আইনত বৈধ। এই সীমিত বিক্রির পেছনে মূল কারণ মারিজুয়ানা-ভিত্তিক পণ্যের উপর বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণ, যা আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে এবং আন্তর্জাতিকভাবে এখনো জটিল অবস্থায় রয়েছে।
হাই-ফাই হপসের মতো পণ্যের আবির্ভাব ভোক্তাদের পছন্দের ট্রেন্ডে বড়োসড়ো পরিবর্তনকেই তুলে ধরে। বিভিন্ন রাজ্যে মারিজুয়ানা বৈধ হওয়া এবং গাঁজা নিয়ে গভীর বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে এই পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে সিবিডি নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে এর ব্যথা উপশমের সম্ভাবনার কারণে। এর সাথে খাদ্যপণ্যে ‘হেম্প’ বা গাঁজার ব্যবহারও বাড়ছে। হেম্প গাঁজারই একটি প্রজাতি, যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে রয়েছে ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড, ডায়েটারি ফাইবার, এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ। পুরোপুরি স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই গাঁজার ব্যবহার খাদ্যশিল্পে বাড়ছে।
হাইনেকেনের মতো ব্র্যান্ড যখন হাই-ফাই হপস নিয়ে সামনে আসছে, বিয়ার শিল্প এবং গাঁজা নিয়ে উদ্ভাবন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। ভোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং বাজারে নতুন জায়গা তৈরির সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে দিয়েই মারিজুয়ানা এবং এর উপাদান নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনও ফুটে উঠছে। তবে মনে রাখতে হবে, ক্যালিফোর্নিয়ার বাইরে অন্যান্য রাজ্য এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব পণ্য এখনো অবৈধ। ফলে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জটিলতা থেকেই যাচ্ছে।