বাংলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পার করেছে ইতিমধ্যেই । বিগত কয়েক বছর ধরে এই বাংলায় এত গরম পড়ছে যে তা সহ্যের সীমা পার করেছে । গরমের শুরুতেই এই ভয়ংকর অবস্থা তাহলে অদূর ভবিষ্যতে কী হবে ? সেই প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে সকলের মনে ।
এদিকে আরব দুনিয়াতে চলছে ঠিক এর বিপরীত চিত্র । গত কয়েকদিনে প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত আরবের বহু জায়গা । দুবাই মেট্রো জলের তলায় ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে । জলে জলে একাকার অবস্থা । বিগত কয়েক দশক জুড়ে এত বৃষ্টি এই অঞ্চলে দেখা যায়নি ।
এই দ্বৈত অস্বাভাবিকতা স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন তুলেছে তবে কি বড়সড় জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে আমরা । তবে কি অচিরেই এই বাংলা মরুভূমীতে পরিণত হবে ? আর আরব হয়ে উঠবে শষ্যশ্যামলা ?
তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াতেই বীভৎস গরমের সাথে সাথে বাংলার বিভিন্ন জায়গা জুড়ে দেখা দিয়েছে প্রবল জল সংকট, বাঁকুড়া পুরুলিয়া সহ দক্ষিণ বঙ্গের নানান জায়গাতে জলের সংকট এখন তীব্র, ফলে জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে ওথার পাশাপাশি জলের অভেবে বন্ধ হতে চলেছে চাষাবাদ।
বাংলার জলবায়ুতে যে এরকম একটা বিপর্যয় আসতে চলেছে তার ইঙ্গিত অনেক আগেই পাওয়া গিয়েছিল । IPCC বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই সতর্ক করেছেন যে গ্লোবাল ওয়ারমিং বৃষ্টির ধরণ বদলে দিতে পারে এবং দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাদের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, তাপমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় মাটির আর্দ্রতা কমে যেতে পারে মৌসুমি বায়ুর গতিপথ ও প্রকৃতিরতেও গোলযোগ বাঁধতে পারে এবং এর ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে । ফলে, বাংলা মরুভূমির মতো পরিস্থিতির কাছাকাছি চলে যেতে পারে।
‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’ জার্নালে ২০২০ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অসময়ে বৃষ্টিপাত বাংলার শস্য উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে ধান এবং গমের ফলন কমিয়ে কমেছে , যেগুলো এই অঞ্চলের প্রধান খাদ্য। একই সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বেড়ে আরও কৃষিজমি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, যেটা একটা সম্ভাব্য ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয় যেখানে বাংলার সবুজ ভূমি আধা-শুষ্ক মরুভূমির আকার নিতে শুরু করবে।
বিপরীতে রুক্ষ মরুভূমির আরব উপদ্বীপেও আবহাওয়ার ধরনে অস্বাভাবিক রকমের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে । সম্প্রতি দুবাইতে ভয়ংকর বন্যা তারই নিদর্শন। জলবায়ুর এই অস্বাভাবিক আচারণ স্বাভাবিক ভাবেই ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের ।
পাশাপাশি ‘সৌদি গ্রিন’ এবং ‘মিডল ইস্ট গ্রিন’ প্রকল্পগুলির মাধ্যমে যেখানে লক্ষ লক্ষ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের জলবায়ু বিজ্ঞানী ডঃ আহমেদ আল জাসিমের মতো বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দেন যে ‘গ্লোবাল ওয়ারমিং’এর ফলে গোটা পৃথিবীর জলবায়ুর উপরে একটা বড়সড় পরিবর্তন আসতে চলেছে এই অবস্থায় যদি আগে থেকে প্রস্তুতি না নেওয়া হয় তবে আগামীতে বেঁচে থাকাটাই প্রশ্নের মুখে দাঁড়াবে । তবে এই সবুজায়ন প্রচেষ্টা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে এগুলো নিকটবর্তী অঞ্চলের জলবায়ুকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করতে পারে এবং সম্ভবত আগামী দশকে আরব মরুভূমির কিছু অংশকে চাষযোগ্য করে তুলতে পারে।