এমন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি যেসময় খাবার নিয়ে আমাদের বিশেষ ভাবে ভাবতে হচ্ছে , এমন খাবার আমাদেরকে বাছতে হচ্ছে যা শুধু পুষ্টিগুণই মেটাবে না একইসাথে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যও ভালো রাখবে ।
শরীরে প্রোটিনের চাহিদা মেটাবার জন্য প্রয়োজন মাংস । এই মাংসের দুটি সহজলভ্য অপশন হল রেড মিট এবং ব্রয়লার । রেড মিটে কোলেস্টেরলের আশঙ্কা থাকে আরে ব্রয়লারে মাত্রাতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক খাওয়ানোর ফলে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের সম্ভাবনা তৈরি হয় ।
তাহলে বিকল্প কি
বিকল্প হল কোয়েল পাখির মাংস , এই মাংস শুধু যে সুস্বাদু তাই নয় এটি একপ্রকার সুপারফুড এবং স্বাস্থ্যের পক্ষে বিরাট উপকারী।
কোয়েল পাখির মাংসের পুষ্টিগুণ
কোয়েল পাখির মাংসে থাকা লিন প্রোটিন পেশী গঠন ও মেরামতির জন্য অত্যন্ত জরুরি। রেড মিটে প্রচুর ক্যালোরি থাকে তুলনায় কোয়েলের মাংসের ক্যালোরি অনেক কম । Journal of Food Science and Technology পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে মুরগির মাংসের তুলনায় কুইল পাখির মাংসে ফ্যাট অনেক কম থাকে এবং ক্যালোরির পরিমাণও কম। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণের ডায়েট মেনে চলছেন তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী।
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল
কোয়েল পাখির মাংসে আয়রন বেশি পরিমাণে থাকে যা অ্যানিমিয়া রোধ করে এবং শক্তি বৃদ্ধি করে। এতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, এবং তার মধ্যে বি12 প্রচুর মাত্রায় পাওয়া যায়। স্নায়ু সুস্থ রাখতে এবং শরীরে যত রকমের মেটাবলিক কার্যকারিতা আছে সেগুলি ঠিক রাখতে বি12 খুবই জরুরি। International Journal of Poultry Science -এ প্রকাশিত এক গবেষণায় এই কথা বলা হয়েছে যে কোয়েল পাখির মাংসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে যা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক সুস্থ রাখে।
উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড
অন্য অনেক মাংসের তুলনায় কুইল পাখির মাংসে ওমেগা-3 ও ওমেগা-6 ফ্যাটি অ্যাসিডের যে অনুপাত থাকে তা স্বাস্থ্যের অত্যন্ত ভালো । ইনফ্ল্যামেশন কমাতে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় সাহায্য করতে, এবং হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলির ভূমিকা অপরিসীম। ফলে হার্টকে সুস্থ রাখতে এবং জ্ঞানসংক্রান্ত বিকাশে সাহায্য করতে কোয়েল পাখির মাংস অসাধারণ কার্যকরী।
কম কোলেস্টেরল
অন্য মাংসের তুলনায় কোয়েল পাখির মাংসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকে, তাই এই মাংস খেলে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য ভালো থাকে। যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, বা হার্টের রোগের আশঙ্কা আছে, তাদের জন্য এই দিকটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকায় কোয়েল পাখির মাংস রাখলে খারাপ কোলেস্টেরল কমে যায়।
হাইপোঅ্যালার্জেনিক উপাদান
ডায়েট সংক্রান্ত বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কোয়েল পাখির মাংস হাইপোঅ্যালার্জেনিক। অন্য মাংসে যাদের অ্যালার্জি হয় তারা এই মাংস নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। এই মাংস সহজে হজম হয় এবং ফুড সেনসিটিভিটি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে, তাই ছোটো-বড়ো সকলেই এটি খেতে পারে।
কোয়েল পাখির মাংসে থাকা বিভিন্ন উপাদান এবং সেগুলির স্বাস্থ্যগত গুরুত্ব
উপাদান | পরিমাণ (প্রতি 100 গ্রামে) | গুরুত্ব |
---|---|---|
ক্যালোরি | 134 ক্যালোরি | এনার্জি সরবরাহ করে |
প্রোটিন | 21.1 গ্রাম | পেশী গঠন, কোষের মেরামত ও বৃদ্ধির জন্য জরুরি |
ফ্যাট | 4.5 গ্রাম | এনার্জি সরবরাহ করে এবং হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে |
ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড | উল্লেখযোগ্য | মস্তিষ্কের বিকাশ, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা ও প্রদাহ হ্রাস করে |
আয়রন | 3.2 মিলিগ্রাম | রক্তসঞ্চালনে সাহায্য করে, হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে |
সেলেনিয়াম | 8.4 মাইক্রোগ্রাম | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে, ইমিউন সিস্টেমের বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে |
ভিটামিন B12 | 0.9 মাইক্রোগ্রাম | নার্ভ সিস্টেমের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে, রক্ত কোষের স্বাস্থ্য বজায় রাখে |
ভিটামিন E | 1.08 মিলিগ্রাম | ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, কোষের রক্ষা করে |
ফসফরাস | 226 মিলিগ্রাম | হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নতি করে | |
কোলেস্টেরল | 76 মিলিগ্রাম | মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকলেও মস্তিষ্ক ও কোষ গঠনে উপকারী হতে পারে | |
পরিবেশের কথা মাথায় রাখলে, অন্যান্য পোল্ট্রি চাষের তুলনায় কোয়েল পাখি চাষকে বেশি স্থায়ী বলা চলে। কোয়েল পাখিকে কম জায়গার দরকার হয়, এবং এরা যেকোনো পরিবেশের সাথে সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। জমির ওপর এর প্রভাবও কম পড়ে। সুতরাং কোয়েল পাখির মাংস শুধু যে স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো তাই নয়, এটি পরিবেশ-বান্ধবও বটে।