গরুর দুধ যা পুষ্টিকর, শিশুদের বেড়ে ওঠার অপরিহার্য সঙ্গী । কিন্তু যদি এই দুধের সাথেই লুকিয়ে থাকে অদৃশ্য বিপদ? শহুরে জীবনের ব্যস্ততায় আমরা বাজার থেকে সহজেই পাস্তুরাইজড দুধের প্যাকেট তুলে নিই। কেউ কেউ আবার স্বাস্থ্য সচেতনতার খাতিরে খোঁজ করেন “খাঁটি” গরুর দুধ, মানে, যে দুধ সরাসরি গাভী থেকে দোহন করেই খাওয়া যায়। কিন্তু এই “কাঁচা দুধে” কি আসলেই শুধু উপকার, নাকি অনেক বিপদ লুকিয়ে আছে এখানে ?
সরাসরি গরু থেকে যে দুধ দোহন করা হয়, তাতে প্রচুর উপকারী উপাদান আছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। কিন্তু চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীরা সকলেই এই কাঁচা দুধকে অত্যন্ত স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ বলে সতর্ক করছেন, বিশেষ করে শিশুদের জন্য।
কাঁচা দুধ পানের ঝুঁকি
- জীবাণু সংক্রমণ: কাঁচা দুধে উপস্থিত থাকতে পারে ই-কোলাই, সালমোনেলা, লিস্টেরিয়া-র মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি থেকে গুরুতর অসুস্থতা যেমন ডায়রিয়া, বমি, এমনকি কিডনির সমস্যা, পক্ষাঘাত, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। শিশু, গর্ভবতী মহিলা, বয়স্ক ব্যক্তি বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা বিশেষভাবে এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের শিকার হতে পারেন।
- পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা: কাঁচা দুধে পুষ্টির ভারসাম্য সঠিক নাও থাকতে পারে, বিশেষ করে যেসব শিশু বড় হওয়ার জন্য দুধের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। পাস্তুরাইজেশন প্রক্রিয়া দুধের পুষ্টিগুণ তেমন কমিয়ে দেয় না।
- ভিটামিন ডি-র অভাব: বাজারে যে পাস্তুরাইজড দুধগুলি কেনা যায় সেগুলোতে অনেক সময় ভিটামিন ডি যোগ করা হয়। এই ভিটামিন আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা দুধে এই ভিটামিন যোগ করা হয় না। যেসব শিশুরা পর্যাপ্ত রোদ পায় না বা অন্য খাবার থেকে ভিটামিন ডি গ্রহণ করে না, তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-র অভাব দেখা দিতে পারে।
কাঁচা দুধের সাথে জড়িত এই স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে, অনেক দেশেই কাঁচা দুধ বিক্রি নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত করা হয়। জনস্বাস্থ্য, বিশেষ করে শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যই এই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আপনি যদি নিজের বা আপনার শিশুর শরীরে দুধের উপকার চান, তবে পাস্তুরিত দুধই সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প। এতে ক্ষতিকর জীবাণু মরে যায়, দুধের পুষ্টিগুণও অক্ষত থাকে। কাঁচা দুধ পানের অনুভূতি পেতে চাইলে, বরং টকদই খেতে পারেন – এগুলোও উপকারী জীবাণুতে ভরপুর ।
তাই কাঁচা গরুর দুধ, বিশেষ করে শিশুদের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে । এতে উপস্থিত থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা নানা রোগের কারণ হতে পারে। যদিও কাঁচা ও পাস্তুরিত দুধ নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকে, বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা বরাবরই দুধের নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে পাস্তুরাইজেশনের ওপর জোর দেয়। পাস্তুরাইজড দুধ পান করেই আপনি নিজে এবং আপনার পরিবারকে সুস্থ রাখতে পারবেন।