আজকের দিনে একটুখানি অসুবিধা মানেই আমরা ঝটপট সমাধান খুঁজি। তার জেরে শরীরের অসুস্থতাগুলোর জন্য নিজেরাই ঔষধ কিনে খাওয়াটা বেশ অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে গ্যাসের সমস্যা বা সাধারণ জ্বর সর্দি। কিন্তু এই আপাত-নিরিহ অভ্যাসের কারণ আপনার বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে তাই ঔষধপত্র খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অবশ্যই জরুরী, নিজে ডাক্তার হতে যাবেননা । অন্ততঃ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তো নয়ই ।
গ্যাস–অম্বলের ওষুধ: ক্ষণিক আরাম, বড় বিপদ!
গ্যাস বা অম্বল আমাদের সবারই হয়। খাবার, মানসিক চাপ ছাড়াও নানা কারণেই এই সমস্যায় আমরা ভুগি । বাজারে খোলা ওষুধের দোকান ছাড়াও নানা জায়গায় পাওয়া যায় নানান ওষুধ যাতে হয়তো দ্রুত আরাম মিলতে পারে। নিতান্তই বিপদে না পড়লে এই ধরণের ওষুধ গুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন । অনেক গ্যাস কমানোর ঔষধ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ঔষধের কাজে বাধা দেয়। দীর্ঘদিন নিয়মিত খেলে তাৎক্ষনিক আরাম হয়তো মেলে , কিন্তু মনে রাখবেন আমাদের শরীরের যে কোনো সমস্যাই হল একধরণের সিগনাল যার দ্বারা শরীর আসল সমস্যাটাকে বুঝতে সাহায্য করে । তাই নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ খেয়ে আসলে আপনি হয়তো সেই সিগনালটাকেই ঢাকা দিয়ে দিচ্ছেন যা থেকে আরও অনেক বড় বিপদ হতে পারে । এ থেকেই দেখা দিতে পারে মারাত্মক সব রোগের উপসর্গ, যেমন ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS) বা ক্রনিক আমাশা এমনকি অন্ত্রের ক্যান্সারও ।
অ্যান্টিবায়োটিক
অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ঝুঁকি আরও ভয়াবহ। ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক অত্যন্ত শক্তিশালী ঔষধ, আমাদের আধুনিক চিকিত্সাব্যবস্থা যার উপর অনেকটা নির্ভরশীল । কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন সারা বিশ্বে একটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংকটকে তৈরি করেছে। সমস্যাটা হলো অতিরিক্ত বা ভুলভাবে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে আমাদের শরীরে ব্যাকটেরিয়া “রেজিস্ট্যান্ট” হয়ে যেতে পারে। এইসব “সুপারবাগ”কে পরবর্তীতে কোন অ্যান্টিবায়োটিকও মারতে পারে না ফলে চিকিৎসা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
তার ওপর, অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের উপকারী এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া উভয়কেই মেরে ফেলে। এই ভারসাম্যহীনতার প্রভাবে হজমশক্তির সমস্যা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, নতুন করে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়া -এই সমস্যাগুলো মাথাচাড়া দিতে পারে।
ইতিমধ্যেই আমাদের রাজ্যে একটা বিরাট অংশের রোগী পাওয়া যাচ্ছে যাদের শরীরে এই এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে , ফলে আর কোনো এন্টিবায়োটিক কাজ করছে না । বুঝতেই পারছেন এর ফল কী মারাত্মক । রাজ্যসরকার তাই খুল্লামখুল্লা এন্টিবায়োটিক বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপানোর ব্যাপারে ইতি মধ্যেই ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে ।
তবে এ জন্যওষুধ খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করা সমাধান নয়। কিন্তু ওষুধের সঠিক ব্যবহারের মানসিকতা গড়ে তোলার প্রয়োজন আছে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনোরকম ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। ওষুধের ব্যাপারে আপনি যা জানেন না, তা আপনার ক্ষতি করতে পারে – এইটা বোঝাটাও জরুরি।
এছাড়া ঔষধের ভুল ব্যবহার বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক, জনস্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রাখে।
ওষুধের উপরে বেশি নির্ভরশীল না হয়ে বরং একটি সামগ্রিক সুস্থতার দিকে মনোযোগ দিন । তাতে গ্যাস-অম্বলের মত সমস্যা বা ছোটোখাটো সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন । সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা, মানসিক চাপ কমানো – এই দিকগুলিতে গুরুত্ব দিলে ঔষধের প্রতি নির্ভরতা কমে আসবে।
মনে রাখবেন , ওষুধ তখনই বন্ধু যখন তার সঠিক ব্যবহার হবে ।