আজ নাগালসার আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি. ভি. নাগরত্না নোটবন্দির নীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাতে তাঁর স্পষ্ট মতবিরোধ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, কালো টাকা নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে নোটবন্দি করা হলেও, বাস্তবে তার ফল হয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো। রিজার্ভ ব্যাংকে ৯৮% টাকা ফিরে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই উঠছে প্রশ্ন যে, অবৈধ সম্পদকে দূর করতে নোটবন্দি আদৌ কতটা সফল হয়েছে।
বিচারপতি নাগরত্না মনে করছেন, নোটবন্দি বরং কালো টাকাকে সাদা করার একটা পদ্ধতি হিসেবে কাজ করেছে ।
তিনি তাঁর বক্তৃতায় তুলে ধরলেন, “৯৮% টাকাই RBI-এ ফিরে এসেছে, তাহলে কালো টাকা নির্মূল তো হলই না, বরং এই পদ্ধতি কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ বেশ ভালোভাবেই করে দিয়েছে। পরবর্তীকালে আয়করের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা আমরা জানিনা। ফলে, সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন, সেটাই আমাকে বিচলিত করে তুলেছিল এবং সেই কারণেই আমার মতবিরোধ জানাতে হয়েছে।”
নোটবন্দি যে সরাসরি সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলেছিল সাধারণ মানুষের ওপর, বিচারপতি নাগরত্না সেই দিকটাই বিশেষভাবে উল্লেখ করলেন। দিন আনা দিন খাটা মজুর, যার হাতে থাকা টাকাগুলোই হঠাৎ অচল হয়ে যাওয়ায় কীভাবে পুরো ব্যবস্থাটাই ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল, তিনি তার একটা জ্বলন্ত ছবি তুলে ধরলেন। “আমাদের দেশের মোট চলতি নোটের ৮৬% ছিল ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট। এই বিষয়টা কেন্দ্রীয় সরকার সম্ভবত ভুলেই গিয়েছিল যখন তারা এই নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নেয়। ভাবুন তো, যে মজুর সেদিন কাজ করতে যাবে কাজে যাওয়ার আগে তাঁকে পুরোনো নোট বদলে নিয়ে তারপর বাজারে যেতে হবে দৈনন্দিন জিনিসপত্র কেনার জন্য!”
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা বিচারপতি নাগরত্না তুলে ধরেছেন, সেটা হল নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পর্যাপ্ত আলোচনা বা প্রস্তুতির সম্পূর্ণ অভাব। হঠাৎ করেই এই ঘোষণা সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকদেরও অপ্রস্তুত করে ফেলেছিল। তাঁর মতে, এইভাবে নেওয়া সিদ্ধান্ত কখনোই আমাদের ডিজিটাল লেনদেনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেনি বরং অর্থনীতিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “যেভাবে নোটবন্দি করা হয়েছিল, সেটা আদৌ ঠিক পদ্ধতি ছিল না। আইন মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি । তড়িঘড়ি করে যেভাবে কাজটা করা হল তাতে অনেকেই বলে থাকেন যে তৎকালীন অর্থমন্ত্রীও নাকি এ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। এক সন্ধ্যায় ঘোষণা হলো, আর পরের দিনই নোটবন্দি কার্যকরী! যদি ভারত কাগজের নোট থেকে প্লাস্টিক কারেন্সিতে যেতে চাইত সেক্ষেত্রেও নোটবন্দি নিশ্চয়ই যুক্তিযুক্ত কারণ ছিল না।”
তাঁর মতবিরোধ সংক্রান্ত বিবৃতিতে বিচারপতি নাগরত্না বলেছেন, ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ক্ষেত্রে RBI স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তাঁর মতে, ৮ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে জারি হওয়া নির্বাহী আদেশ (নোটবন্দির নীতি) আইনবিরুদ্ধ । কারণ কেন্দ্রীয় সরকার বৈধ আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া (সংসদীয় আইন বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে) এড়িয়ে গিয়ে সরাসরি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।