ডায়াবেটিস থাকলে রুটি খাওয়া নিয়ে অনেকেরই সংশয় থাকে। অনেকে ভাবেন চালের আটার রুটি কি ডায়াবেটিসের জন্য ভালো? আবার অনেকে ভাবেন গমের আটা ভালো? আসলে কোনটা ভালো সেটা বুঝতে গেলে আগে দুটো আটার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে।
চালের আটা:
- ফাইবার : চালের আটায় ফাইবার খুবই কম। ফাইবার কম থাকলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়। ফলে ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তে শর্করার পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে যায়।
- গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই): চালের আটার জিআই অনেক বেশি। জিআই বেশি মানে রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেক তাড়াতাড়ি বেড়ে যাওয়া। ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য এটা মোটেও ভালো না।
গমের আটা:
- ফাইবার : বিশেষ করে আস্ত গমের আটায়,ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি। ফাইবার বেশি থাকলে খাবার হজম হতে সময় লাগে। ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ে।
- গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই): গমের আটার জিআই কম। জিআই কম হওয়া মানে খাবার খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়বে।
- অন্যান্য পুষ্টিগুণ: গমের আটায় শুধু ফাইবার নয়, আরও অনেক পুষ্টিগুণ আছে। যেমন- ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক। এসব পুষ্টি উপাদান শরীরের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস থাকলে শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য এগুলো অনেক জরুরি।
এই পার্থক্য থেকে সহজেই বোঝা যায় ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য গমের আটার রুটি, বিশেষ করে আস্ত গমের আটার রুটি বেশি উপকারী। চালের আটার রুটি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে যায়। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের চালের আটার রুটি না খেয়ে গমের আটার রুটি খাওয়াই উচিত। তবে খেয়াল রাখতে হবে, গমের আটার রুটি খেলেও পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়া চলবে না।
গমের আটা খাওয়ার আরও কিছু উপকারিতা:
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: গমের আটায় আঁশ বেশি থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
- পেট ভরা থাকে: গমের আটার রুটি খেলে পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকে, ফলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য খুবই জরুরি।
উপাদান | চালের আটার রুটি | গমের আটার রুটি |
---|---|---|
কার্বোহাইড্রেট | উচ্চ (জলদি শোষিত হয়, রক্তে শর্করা বৃদ্ধি করে) | মাঝারি (ধীরে শোষিত হয়, শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে) |
ফাইবার | কম (২-৩ গ্রাম/১০০ গ্রাম) | উচ্চ (১২-১৫ গ্রাম/১০০ গ্রাম) |
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) | উচ্চ (৭০-৭৭) | নিম্ন (৫৪) |
প্রোটিন | কম (প্রায় ৫-৬ গ্রাম/১০০ গ্রাম) | উচ্চ (প্রায় ১২-১৫ গ্রাম/১০০ গ্রাম) |
ভিটামিন ও খনিজ | কম (বেশিরভাগ ভিটামিন ও খনিজ কম পরিমাণে থাকে) | বেশি (ভিটামিন বি, ই, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক) |
পাচনশীলতা | দ্রুত পাচনশীল (খাবার দ্রুত হজম হয়) | ধীর পাচনশীল (খাবার ধীরে হজম হয়, ক্ষুধা কমায়) |
গমের আটার রুটি সাধারণত চালের আটার রুটির তুলনায় বেশি উপকারী, বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য। গমের আটার রুটি ধীরে হজম হয় এবং শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে। চালের আটার রুটি দ্রুত হজম হয় এবং রক্তে শর্করার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটায়, যা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।