কাঁচকলার খোসা, যাকে রান্না করার সময় অনেকেই অবহেলা করে ফেলে দেয় , অথচ কাঁচকলার এই সবুজ খোসাতেই এমন সব উপাদান রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থের পক্ষে দারুণ উপকারী । এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যারা তাদের ওজন নিয়ে চিন্তিত তাদের জন্য এই প্রাকৃতিক উপাদানটি তো আশীর্বাদ স্বরুপ ।
ওজন কমানোর জন্য কাঁচকলার খোসার উপকারিতা:
- প্রচুর পরিমাণে ফাইবার: কাঁচকলার খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবার। এই ফাইবার আমাদের পাকস্থলীতে জেলির মতো একটি আস্তরণ তৈরি করে, যা খাবার হজম হতে সময় নেয়। ফলে আমরা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা অনুভব করি এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকি। এছাড়াও, ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং সামগ্রিকভাবে পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে, যা ওজন কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- ক্যালোরিতে কম: কাঁচকলার খোসায় খুবই কম পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। ফলে, এই খোসা খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা হয় না। ক্যালোরি হ্রাস করা ওজন কমানোর একটি মূলনীতি, এবং কাঁচকলার খোসা এই ক্যালোরি হ্রাস করার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: কাঁচকলার খোসার ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। খাবার হজম হওয়ার প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়ার মাধ্যমে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া রোধ করে। স্থিতিশীল রক্তে শর্করার মাত্রা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়।
- পরিপাক ক্ষমতা বৃদ্ধি: কাঁচকলার খোসার ফাইবার অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। এটি উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দমন করে, যা সামগ্রিকভাবে পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতা নিশ্চিত করে। ভালো পরিপাকতন্ত্র ওজন কমাতে সাহায্য করে কারণ এটি খাবার থেকে পুষ্টি উপাদানের শোষণ এবং বর্জ্য নিষ্কাশন সঠিকভাবে নিশ্চিত করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:কাঁচ কলার ছালে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম রয়েছে, যা শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। পটাসিয়াম শরীরের সোডিয়ামের প্রভাবকে কমিয়ে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে।
- মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি:ভিটামিন বি৬ এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ কাঁচ কলার ছাল মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়।
- ত্বকের যত্ন:কাঁচ কলার ছালের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। এটি ত্বকের বয়সের ছাপ কমায় এবং ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে।
উপাদান | পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রাম) | ওজন কমানোর ক্ষেত্রে উপকারিতা |
---|---|---|
ডায়েটারি ফাইবার | ৮.৬ গ্রাম | দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, হজমে সহায়তা করে, অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ কমায় |
প্রোটিন | ১.৭ গ্রাম | শরীরের কোষ পুনর্গঠন এবং মেরামত করে, পেশী গঠন করে যা মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে |
ভিটামিন বি৬ | ০.৪ মিলিগ্রাম | মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে, শরীরের ক্যালোরি বার্ন করতে সহায়ক |
পটাসিয়াম | ৪৯২ মিলিগ্রাম | জলশূন্যতা প্রতিরোধ করে, যা ওজন কমানোর প্রচেষ্টায় সহায়ক |
ভিটামিন সি | ১৮.৭ মিলিগ্রাম | ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, যা শরীরকে সুস্থ রাখে এবং ওজন কমাতে সহায়ক |
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট | উল্লেখযোগ্য | অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়, যা ওজন কমানোর প্রচেষ্টায় সহায়ক |
ম্যাগনেসিয়াম | ৪২ মিলিগ্রাম | পেশী এবং নার্ভের কার্যক্ষমতা উন্নত করে, যা ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমাতে সহায়ক |
কিছু অতিরিক্ত টিপস:
- ধীরে ধীরে শুরু করুন: হঠাৎ করে বেশি পরিমাণে কাঁচকলার খোসা খাওয়া শুরু করলে পেটে সমস্যা হতে পারে। তাই, শুরুতে অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিৎ পরে ধীরে ধীরে বাড়ানো ভালো ।
- স্বাস্থ্যকর খাবারের সাথে খান: ওজন কমানোর জন্য শুধুমাত্র কাঁচকলার খোসা খেলেই হবে না। সুষম এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের সাথে এটি খেতে হবে।
- প্রচুর পানি পান করুন: বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে শরীরে জলের চাহিদা বাড়ে। তাই, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করতে হবে।
কাঁচকলার খোসা ওজন কমাতে সাহায্য করার একটি প্রাকৃতিক উপায়। তবে, এটি কোনো জাদুর ওষুধ নয়। সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সাথে এটি যোগ করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে।